বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

জাতি নির্মাণে গল্পযোগ

 জাতি নির্মাণে গল্পযোগ

 

 মানুষ সামাজিক জীব।তারা পরিবার গঠন করে।তারপর সে-ই পরিবার একটি গোষ্ঠীতে রুপান্তরিত হয় এবং ধীরে ধীরে একাধিক গোষ্ঠী একটা জাতিতে পরিনত হয়।অবশেষে তারা তাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাকে রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করে।একাধিক পরিবার ক্রমাগত পরিবর্তনের মাধ্যমে যে একটা রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়,তার জন্য গল্পের প্রয়োজন হয়।

আমাদের মূখ্য আলোচক মনে করেন, একটা জাতির আত্মসত্ত্বা নির্মাণের পেছনে গল্প থাকে ; যে গল্প সে-ই জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে এবং যার ফলে তারা সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে একটা রাষ্ট্র কায়েম করে।গল্পের জন্য প্রয়োজন জাতির ভাষা; যা একাধিক গোষ্ঠীর একীভূত হওয়ার অন্যতম উপযোগ। সামাজক আচার,ধর্মীয় জীবন, বিশ্বাস তাদেরকে এক বিন্দুতে দাঁড় করিয়ে দেয়।

বাঙালি জাতি- একটা  জাতি হিসেবে পরিচয় পেতে বহুকাল পেরুতে হয়েছে।এ-র প্রধান কারণ ছিলো একটা বিধিবদ্ধ ভাষার অভাব।বর্তমানের বাংলা সুলতানি আমলের শুরুতেও ছিলো বহু আঞ্চলিক ভাষার সমষ্টিমাত্র; যা এলাকা বেধে ভিন্ন ভিন্ন রুপে ব্যবহৃত হতো।বৃটিশ শাসন তাদের স্বরুপে হাজির হওয়ার আগেও বাংলা জনমানুষের ভাষা হতে পারেনি।তাই,বাঙালিরা একক জাতীয় চরিত্রের রুপ পেতে ব্যর্থ হয়েছিলো। এবং এ-ই কারণে জাতি  নির্মাণে  বাঙালির গল্প সৃজনের সুযোগ হয়নি।

২।গল্প একই সাথে  হবে মিথিকাল ও ইথিকাল

 একটা জনসমাজের ঐক্যবদ্ধ চরিত্র সৃষ্টির জন্য সত্য কাহিনী থাকা অত্যাবশ্যক নয়; শুধুমাত্র কাহিনীসূত্রই আবশ্যক।সৃষ্ট ঘটনার উপর ভিত্তি করে গল্প রচিত হবে।গল্পের চরিত্রগুলো মিথিকাল বৈশিষ্ট্য নিয়ে হাজির হবে; একইসাথে সেগুলো হবে এথিকাল বৈশিষ্ট্যে পূর্ণ।সেখানে ধর্মের চেয়ে ব্যক্তির কর্মকে বিশিষ্টতা দান করা হবে।একটা জাতির গল্প শুনলে চোখের সামনে ভেসে উঠবে তাদের এক অখণ্ড পরিচয়।

বৃটিশ শাসনের বদৌলতে কোলকাতা কেন্দ্রিক এক বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় গড়ে উঠেছিলো ; যারা বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তাদের শব্দসম্ভারে ফুটিয়ে তুলিছিলেন।কিন্তু তাদের মধ্যে দু'একজন ব্যাতিক্রম ছাড়া কেউ তাদের সৃষ্টিতে ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠতে পারেন নি।ফলে একক জাতি হিসেবে বাঙালিকে কেউ দেখেছে হিন্দু, কেউ দেখেছে মুসলমান হিসেবে।জাতি হিসেবে ধর্ম ও বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠবার জন্য যে ঔদার্য ও দূরদর্শিতা প্রয়োজন ছিলো, তা তাদের লেখায় ফুটে ওঠেনি।ফলে জাতি হিসেবে বাঙালি জাতি গঠনের গল্পও রচিত হয়নি।

।জাতির ভিত্তি ধর্ম হবে, নাকি ভাষা হবে তা আগেই ঠিক করে নিতে হবে এবং  তার উপর  ভিত্তি করেই গল্পের প্লট নির্মিত হতে হবে।এখানে প্রচলিত বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাস ও বিদ্যমান সাংস্কৃতিক চর্চাকে সম্মানজনক মিথষ্ক্রিয়ার  মাধ্যমে  ঐক্যবদ্ধ চেতনায় আনতে হবে।এজন্য জাতির গল্প রচনার জন্য লক্ষ্য সম্পর্কে পূর্বেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।  

সচেতন রাজনৈতিক গোষ্ঠী গল্পের প্লটের নির্দেশকের ভূমিকায় থাকবেন।লেখক,বুদ্ধিজীবীগণ তাঁদের চিন্তাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন; এটা প্রত্যাশিত।যদি তারা দূরদর্শীতা দেখাতে ব্যর্থ হন,তাহলে বুদ্ধিজীবীদেরকেই জাতির মননের আন্তঃপ্রবাহের মাঝি হতে হবে।কিন্তু বাংলাতে অধিকাংশ লেখক- বুদ্ধিজীবী রাজনৈতিক প্রবাহে ভেসে গিয়েছেন।পরিবর্তন বা নতুন সুন্দরের প্রতিষ্ঠায় তারা ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন।

।ভারতবর্ষ ভাগের অনিবার্য কারণ হলো, অখণ্ড জাতি গঠনের জন্য রচিত গল্পের অভাব।দু'শ বছরের পরাধীনতার শৃংখল ভাংগার জন্য দল মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলো। কিন্তু এতোদিনেও তাদের মধ্যে  ঐক্যের বোধ রচিত হয়নি।কারণ, তাদের  গল্পের প্লট জাতির মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করেছে।এ-র জন্য দায়ী একই সাথে ভারতীয় রাজনীতিবিদ এবং বুদ্ধিজীবী। নেতাজী সুভাষ বসু, কাজী নজরুল ইসলাম, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ব্যতীত কেউ জোরালোভাবে অখণ্ড ভারতের পক্ষে দাঁড়াতে পারেনি।যদিও বাঙালি মুসলিম রাজনীতিবিদগণ যুক্ত বাংলার স্বপ্ন লালন করেছিলেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন।কারণ, ণ্ডিত বাংলার পক্ষে হিন্দু রাজনৈতিক একজোট হয়েছিলেন। এজন্য বলা যায়,বৃটিশ শাসনামলে বাংলায় জন্ম নেয়া গল্প ছিলো ছিলো একটি একক জাতি হিসেবে বাঙালি জাতি গঠনের অন্তরায় এবং অবশেষে তা-ই সত্য হয়েছিলো।    

।ভাষা ও নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে একটা জাতি গঠিত হতে পারে।কিন্তু এ-র উপর ভিত্তি করে জাতি গঠনের প্রধান অন্তরায় হচ্ছে ধর্মগুরুরা।তারা  একই ভাষাভাষী ,বর্ণ,সংস্কৃতিক বৈশিষ্টের জনসমষ্ঠির মধ্যেও বিভিন্নভাবে ভয়ানক পার্থক্য আবিষ্কার করে এবং ধর্মের ভয় দেখিয়ে পরষ্পর থেকে আলাদা করে রাখে।ফলে সম্ভাব্য ঐক্যবদ্ধ একটা জাতি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়।এক্ষেত্রে সূফীসাধকগণ স্পষ্টতঃ উদার।

।গল্প গালের জোরে রচিত হয়না; তা মানুষই রচনা করে এবং মানষই লালন করে।যারা মানুষকে ভাগ করা আর ভোগ করার গল্প রচনা করে তাদেরকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা উচিত।গল্পের উপাদান হিসেবে তাদেরকে উপেক্ষা করা উচিত।এদেরকে ফসলি জমিতে আগাছার মতো বিবেচনা করা সঙ্গত ।

।।জাতি নির্মাণের গল্পের ভিত্তি মজবুত হলে সে-ই জাতি একটি রাষ্ট্র নির্মাণে ব্রতী হয় এবং সে-ই রাষ্ট্রের ভিত্তি মজবুত হয়।জাতি নির্মাণের গল্পে থাকবে উদারতা,ন্যায়বিচার, সৃজনশীলতার প্রকাশ। থাকবে পেশাগত প্রতিটি ক্ষেত্রে নির্মোহ ত্যাগের প্রতিফলন।পরবর্তীরা যে ত্যাগের গল্প করবে,আবেগে  আনন্দাশ্রু ফেলবে।জাতির জন্মের পেছনে গল্প থাকলে জাতি পথ হারায়না।প্রতিটি সংকটে সম্ভাবনার পথ রচনা করে। আমরা জার্মানি,ইতালি,জাপান তুওরস্কের দিকে তাকালেই এই সত্য উপলব্দি করতে পারি।   

বাংলাদেশ বাঙালি জাতির পরিচয় নিয়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অধিবাসী। একে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে রাখবার জন্য একটা গল্পের প্রয়োজন। এ-ই গল্প হতে হবে বৈচিত্রপূর্ণ।চরিত্র হতে হবে বহুমুখী ; কিন্তু সকল চরিত্র এসে এক বিন্দুতে মিলিত হতে হবে।আমরা কী তেমন গল্প রচনায় এগুচ্ছি? না,আমার পর্যবেক্ষণে বহুর মধ্যে একের সন্ধান এখানে অনুপস্থিত।যাঁরা একীভূত একটা জাতির স্বপ্নকে গল্পের মধ্যদিয়ে,জীবনের মধ্য দিয়ে রূপায়িত করতে চেষ্টা করছে,তারা দৌঁড়ের উপরেই আছে।তারা কেউ হচ্ছেন গৃহহারা, কেউ হচ্ছেন ছন্নছাড়া। তাদের পাশে দাঁড়াবার জন্য জাতির আকাঙ্ক্ষার প্রতীক রাষ্ট্র নেই। এখানেও ভারত বিভক্তির সময়কার বুদ্ধিজীবীদের হীনমন্যতা ও অদূরদর্শীতার অগণিত প্রমান আছে।একদিকে আছে,সর্বজ্ঞানের অধিকারী আমলাগণ যাদেরকে আমি মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর সাথে তুলনা করে থাকি,অন্যদিকে আছে  ফরমায়েশি বুদ্ধিজীবী ; তাণ্ডবে জাতির স্বপ্নের গল্প বলার পথ রুদ্ধ হয়ে গ্যাছে। তাহলে কি আমরা অদেখা এক অলঙ্ঘনীয় ভাঙ্গনের পথে আছি?এজন্য সত্যি আমি হতাশ!

এবং যেহেতু গল্পের শক্তিই রাষ্ট্রের স্থায়িত্বের নির্ণায়ক, সেহেতু আশা ও ভালবাসার গল্প দিয়েই সম্ভাবনার শিল্প নির্মিত হওয়া উচিত।এ-র মধ্য দিয়ে পরষ্পর গভীর প্রেমে আবদ্ধ একটা জাতি রাষ্ট্র নামে প্রতিষ্ঠানে কল্যাণকর জীবনের স্বাদ পায়।

১২/০৯/২০২২

শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আড্ডার দিনগুলো-২ (নাগরিক প্রসঙ্গ)

আড্ডার দিনগুলো-২

 (নাগরিক প্রসঙ্গ) 


একটি দেশের নাগরিক তাদের নাগরিক অধিকার ভোগ করবে,এটা প্রত্যাশিত। যখন রাষ্ট্রযন্ত্র নাগরিকের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, তখনই আমরা নাগরিকের শ্রেণিকরণ করা শুরু করি।কেউ প্রথম শ্রেণির নাগরিকবলে চিহ্নিত হই ,কেউ  দ্বিতীয় শ্রেণির, কেউবা তৃতীয় শ্রেণির।    

বিশ্বের যে সকল দেশে মানবাধিকার সমুন্নত আছে,সেখানে বাংলাদেশের মতো নাগরিক শ্রেণিকরণের বিষয় অনুপস্থিত।কর্মযজ্ঞে ব্যক্তি ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে অবস্থান নিলেও অধিকারের ক্ষেত্রে অভিন্ন সুযোগ পেয়ে থাকে। 

প্রায় বছর পাঁচেক আগে দেশখ্যাত শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার এ-ই বিষয়ে কিছু কথা বলেছিলেন।তিনি মনে করেন,বিদেশে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে বড় কাজ করা খুবই কঠিন।দেশে তাঁর বহু অনুরাগী রয়েছেন।আমি নিজেও তাকে ভালোবাসি। কিন্তু তাঁর উল্লিখিত মতের সাথে একমত হতে পারিনি। 


বাংলাদেশ এখন এমন এক অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যে,নাগরিক শ্রেণিকরণের অদৃশ্য প্রভাবে যোগ্য অনেকেই ধরাশায়ী।আমাদের মূখ্য আলোচক মনে করেন,জ্ঞানী,গুনী ও সাধক সব যুগেই সারা পৃথিবীর সম্পদ।তারা একই সাথে জাতীয়তাবাদী ও আন্তর্জাতিকতাবাদী।সত্য ও ন্যায়, দেশ ও কাল নিরপেক্ষ। তারা নিজ জন্মভূমিতে যখন সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে লড়াইয়ে লড়তে গিয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়,তখন তাদের হিজরত করা অনিবার্য হয়ে পড়ে।   

এবং একটি বাস্তবতা প্রতিটি শতাব্দীতে দেখা যায়,পৃথিবীতে মানুষের জন্য একটি আবাসস্থল থাকে , যেখানে মানুষ মুক্ত; মুক্ত থাকে স্বাধীন চিন্তা করায়,স্বাধীন থাকে নিজের বিশ্বাসকে লালন করায়।বর্তমানে এমন একটি অঞ্চল আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র।ইউরোপকেও এ-র আওতায় রাখা যায়।  

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র যদি কাউকে নাগরিত্ব দেয় কিংবা আশ্রয় দেয়,তাহলে মাত্র দু' একটি ব্যাতিক্রম ছাড়া সকল অধিকার ভোগ করার অধিকার দেয়।আমরা আমাদের নিজের জন্মভূমিতে যে সকল ন্যায্য অধিকার ভোগ করতে পারিনা,তা আমেরিকায় ভোগ করতে সক্ষম।সুতরাং, সেখনে আশ্রয়প্রাপ্ত যে কেউ সেখানে যে কোন বিচারেই দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক নয়।অথচ এখানে অগণিত অপবিত্র আত্মার সম্মিলনে আমাদের নাগরিক জীবন চারখার।ঘুষ-দুর্নীতি ,অনিয়মে দেশের সর্বস্তরের মানুষ ভুক্তভোগী।   


যে দেশে সত্যের পক্ষে থাকার জন্য,লড়াই করার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র নৈতিক সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে,সেই দেশে নাগরিক শব্দটি অর্থহীন। যে-ই সুবিধা পায়,সে-ই নেয়; ন্যায়- অন্যায়ের বিচার উপেক্ষিত থেকে যায়।এখানে বিশ্বাসে ও কর্মে ভিন্নতা দৃশ্যমান হলে পেশিশক্তি দ্বারা সহজেই মানুষ আক্রান্ত হতে হয় এবং এজন্য আক্রান্ত ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বিচার প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। 


বাংলাদেশের বহু বিজ্ঞানী, গবেষক বিদেশে গিয়ে তাদের জ্ঞানচর্চা অব্যাহত রেখেছেন।অনেকেই ইচ্ছা থাকলেও দেশে গবেষণা কাজে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না।এমন অনেক বাংলাদেশী প্রবাসী বিজ্ঞানী আছেন,যারা একটি সুযোগ চাচ্ছেন,প্রত্যাশা করছেন যাতে দেশে একটি চাকুরীর সুযোগ পেতে পারেন।কিন্তু অযোগ্যদের দাপটে তাদের আসবার পথ রুদ্ধ।অনেকে দেশে এসে খ্যাতি কুড়িয়েছেন;কিন্তু তাদের উদ্ভাবন কী, তা বরাবরই অপ্রকাশিত।অথচ তাদের খ্যাতির সীমা নেই।


সত্যিকার সাধক ও বিজ্ঞানীরা রাজনীতি নিয়ে মাথা খাটাবার সময় পাননা।শুধু শুধু তেল দেবারও চিন্তা করেন না।ফলে বিদেশে তাদের জ্ঞানচর্চা চালিয়ে যান।জ্ঞানীদের দেশছাড়া হবার ইতিহাস নতুন নয়।আল-বেরুনী,ইবনে সীনা থেকে শুরু করে খ্যাতিমান অনেকের জীবনে এমনই ঘটেছে।কিন্তু তারা যেখানে গিয়েছেন সেখানেই সন্মানিত হয়েছে।আজ তারা সারা পৃথিবীর সম্পদ।

বাংলাদেশের  বহু চিকিৎসক দেশের সরকারি হাসপাতাল ছেড়ে বেসরকারি হাসপাতালে পেশাগত জীবন কাটাচ্ছেন।তাদের অনেকেই অন্ধ আনুগত্য দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন।যার ফলে ছিটকে পড়েছেন।এ-ই সরে যাওয়া তাদের জীবনকে বিষিয়ে দিয়েছে।কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে অন্ধ আনুগত্য প্রত্যাশা করেনা।তারা শ্রম ও কর্মের মূল্য দেয়।এজন্য নিজ জন্মভূমিতে গবেষণা করতে ব্যর্থ হয়ে(হুমকির মুখে থাকে) তারা স্বাধীন জমিন খুঁজে নেয়।এই নতুন স্থান খুঁজে নেয়া বিশ্ববাসীর জন্য প্রয়োজন।এই স্বাধীন পরিবেশের যারা সষ্ট্রা ,তারা মত ও পথে ভিন্ন হলেও জ্ঞান বিজ্ঞানের পথে তারা সকলকে এক সারিতে এনে দেয়।যতদিন তারা তাদের এই নীতি বজায় রাখবে ,ততদিন পৃথিবী তাদের হাতের মুঠোয় থাকবে।  


 অপবিত্র মানুষের জঞ্জাল থেকে যতদিন আমরা মুক্ত হতে পারবোনা,ততদিন আমরা কেউ প্রথম,কেউ দ্বিতীয়,কেউ তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে থাকতে হবে।এটিই আমাদের নিয়তী।অন্যদিকে, অর্থের প্রবাহ ক্রমাগত আমাদের চরিত্র নষ্ট করে যাবে।

শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ভয়

 ভয়
লোকটা নাছোড় বান্দা। আমার পরিচিত। গতকাল থেকে তিনি গুরুতর এক সমস্যায় কাবু হয়ে আছেন।তিনি আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছেন।আমাকে শুনতেই হবে।আমি শুনলাম।আমার ধৈর্য হারাবার কথা।কিন্তু শুনলাম।
তিনি বলে যাচ্ছেন,গতকাল দুপুরে তিনি লোকাল বাসে বসুরহাটে যাচ্ছেন।যাচ্ছিলেন ফেনী থেকে। পাশে বসা যাত্রীর সাথে তিনি কথা বলছিলেন। লোকটির মুখে ছিলো মাস্ক।চিনতে পারেননি।তবে মনে হয়েছে মধ্যবয়সী। চাপা স্বভাবের মানুষ। মাঝে মাঝে কথা বলছিলেন।মাঝে মাঝে হু হাঁ বলে উত্তর দিচ্ছিলেন।
তাহলে সমস্যাটা কী?আপনি এটা বলার জন্য আমাকে ডেকেছেন? হ্যাঁ,আপনাকে সবকিছু বলিনি।লোকটি ছিলো আমার পাশের আসনে।তিনি বলছিলেন, বাসের ভাড়া খুব বেশী বাড়িয়েছে।খুব অনিয়ম।আমি বললাম, সর্বত্র অনিয়ম। আমার এন আই ডি -তে ভুল হয়েছে।ভুল কারা করেছে?তারা।কিন্তু আমার কার্ডের সংশোধন করতে কতো ঘাটে যেতে লাগলো। আবার অফিসে অফিসে টাকা দিতে হলো। টাকা না দিলে তারা ফাইলের খোঁজই পায়না।ভূমি অফিস,ইউনিয়ন বোর্ড অফিস সবখানে মস্তবড় অফিসার বসে আছে।তারা অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রাখে।কী এক ভয়াবহ সংকটে আছি।এসব কী, বলে বুঝানো যাবে!ভদ্রলোক আমার সাথে ঐক্যমত প্রকাশ করলেন।তাহলে সমস্যাটা কী?
সমস্যা হলো, লোকটিকে আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা।লোকটা যদি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে!যদি মামলা করে;থানায় কিংবা আদালতে!আমি সরকারের অনিয়মের কথা বলেছি।বলুনতো এখন কী করি?আমি বললাম, দুত্তরি কী সব আজে বাজে বকে যাচ্ছেন।অনেকেই অফিস আদালতের ঘুষ- দুর্নীতি নিয়ে পুলিশের সামনে বসেই বলে থাকে।
ভদ্রলোকের ভয় হচ্ছে,সহযাত্রী তার বিরুদ্ধে যদি মামলা করে দেন; তবেই তো ঝামেলায় পড়বেন।আমি তাকে বুঝাতেই পারছিনা যে, তিনি একজন বয়োবৃদ্ধ মানুষ, কষ্টের কথা শেয়ার করেছেন; এটা মামলার কারণ হয়না।মানুষের খেয়ে দেয়ে আর যেনো কাজ নেই।অযথা কেনো তারা সমস্যায় জড়াবে? তবু ভদ্রলোকের ভয় কাটে না।
লোকটা আমাকে চেনেই না।আমার মুখেও মাস্ক ছিলো। লোকটা আমার নামও জানতে চায়নি।তবুও আমার ভয় হচ্ছে।না ভাই,আমি তো ভালো আছি।টাকা আছে।টাকা দিয়ে ঝামেলা চুকিয়ে ফেলতে পারি।শুধু শুধু কথা না বললেই পারতাম।
হ্যাঁ,পারতেন।কিন্তু প্রতিবেশির ঘরে আগুন লাগলে আপনি নিরাপদ ভাববার কোন কারণ নেই।
এরা সমাজ বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠী। এরা নিজেদের সুখ ও সুবিধা নিয়ে আত্মতৃপ্তি খোঁজে। কিন্তু এরাই আজকাল মুখ ফসকে অনেক কথা বলে ফেলে।

শুক্রবার, ১৯ আগস্ট, ২০২২

ইহুদী-মুসলিম সমাচার

 

ইহুদী-মুসলিম সমাচার

গতকাল জনৈক ভদ্রলোক বললেন,ফিলিস্তিন সংকট নিয়ে বিশ্বের মুসলিম জাতি উত্তাল। প্রতি নামাজে প্রার্থনায় ইজরায়েল রাস্ট্রের জন্য অভিশাপের বাণী দিচ্ছে।অথচ ইজরায়েল ক্রমাগতভাবে ফিলিস্তিনকে মারছে, তাদের ভূমি দখল করছে,ধ্বংসের দ্বারপ্রান্থে নিয়ে যাচ্ছে।আল্লাহ মালিক চেয়ে আছেন। তিনি নির্মোহ। বিগত সত্তর বছর ধরে চলে আসছে রক্তের খেলা।কিন্তু সমাধানের দেখা নেই।আসুন আমরা কারণ তালাশ করি।আমরা বিষয়টি নিয়ে সংক্ষেপে খোলাখুলি আলোচনা করি।
১।ফেসবুক ওয়াজিনের অনেকে প্রতিটি ওয়াজে কখনো স্বপ্নের মাধ্যমে,কখনো বিভিন্ন সম্ভবনা আলোকে ইমাম মেহেদীর আগমনী সংবাদের আশ্বাস দিচ্ছেন।আর বেশিদিন নেই।আল আকসা মুসলমানদের দখলে যাবে।
২।আমাদের বাড়িতে বাড়িতে, ঘরে ঘরে ইহুদী ফিলিস্তিন সংকট। প্রায় প্রতিটি বাড়িতে জায়গা জমি নিয়ে বিরোধ।একপক্ষ অবশ্যই অনিয়ম করে,জোর করে অন্যের জায়গা দখল করে।এদের না আছে পরকালের ভয়, না আছে আল্লাহর ভয়।তাহলে তারা কী করে ফিলিস্তিন সংকটে লাফ দিয়ে উঠে।আমরা নিজেরাই প্রথমে নায্যতার চর্চা করতে হবে।তবেই আল্লাহ আমাদের পক্ষে থাকবেন,আমাদেরকে বিজয়ী করবেন এবং আমাদের সত্যের সপক্ষে দাঁড়াবার শক্তি অর্জিত হবে।
৩।ইহুদিদের দুই হাজার বছরের স্বপ্ন ছিল, তারা ফিলিস্তিনে তাদের আবাস গড়ে তুলবে।তাদের স্বপ্ন সত্য হলো। তারা বলেন, ঈশ্বর তাদের প্রার্থনা কবুল করেছেন।এজন্য পবিত্র ভূমিতে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
৪।আরব বিশ্ব ইসরাইলের বিরুদ্ধে তিনবার যুদ্ধ করে পরাজিত হয়েছে; আর প্রতিবার এদিকে সেদিকে ভূমি হারিয়ে মুক্তি খুঁজেছে।প্রায় সারা বছর খুনাখুনি লেগেই আছে।নিরিহ শিশু,নারী আর বৃদ্ধ প্রাণ হারায়, শহীদ হয়। মুসলমান জাতি হাহুতাশ করে,সাহায্য পাঠায়,ফিলিস্তিন সাহায্য নিয়ে খায়,নতুন প্রাসাদ তৈরি করে।
৫।ফিলিস্তিনে নির্বাচন হয়।ভাগ বাটোয়ারা করে ক্ষমতা পায়- হামাস আর আব্বাসের দল।এখানে হিসেব নিকেশ আছে।জয় পরাজয় আছে।এজন্য প্রয়োজন সময়মত রক্তের।এবারে নির্বাচন হওয়ার সময় এগিয়ে এসেছে।আব্বাসের প্রয়োজন নির্বাচন পেছানো ; কারণ, এতে তার পরাজয়ের সম্ভাবনা আছে।এতএব, তাকে টিকিয়ে রাখতে হবে।কিভাবে? যেভাবে হবার সেভাবেই হলো।মাঝখানে আমরা হাহাকার করছি।এদিকে আব্বাস পরবর্তী ক্ষমতার আভাস পাচ্ছেন।এসকল মূল্যায়ন জেরুজালেম পোস্টের। আপনারা মিলিয়ে নিন।সাম্প্রতিক চলমান যুদ্ধে আব্বাসের ভূমিকা কী ছিল?
৬।কতো বছর এমনটা চলবে? মুসলিম বিশ্ব না আছে জ্ঞান সাধানায়, না আছে নৈতিকতা আর ন্যায্যতায়।তাদের অধিকাংশই বিলাসিতায় মগ্ন।তাহলে কি ফিলিস্তিনের মুসলিম এভাবেই শহীদ হবে?সমাধানের পথ কী?
মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ দেশই ইজরাইলকে স্বীকৃতি দেয়নি,দেবেনা এই শপথে ঐক্যমত্য আছে।আথচ কিছুদিন পরেই হয়তো ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের নাম স্বাধীন(!) রাস্ট্র তালিকা থেকেই মুছে যাবে।অর্থাৎ, পুরোটা ফিলিস্তিন ইজরেল দখলে নিয়ে যাবে।এদিকে মুসলিম বিশ্ব চিৎকার চেচামেচি করবে।কিছুই হবেনা।আমি মনে করি, মুসলিম বিশ্ব তাদের চিন্তাকে আর বিশ্বাসকে বিনির্মান করুক।তারা ইজরাইলকে একযোগে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের সাথে কূটনীতিক সম্পর্ক স্থাপন করুক।ইজরাইল নিজেদের নিরাপদ ভাবতে থাকুক।পশ্চিমারা মধ্যপ্রাচ্যের সংকট জিইয়ে রাখার সুযোগ আর পাওয়া উচিত নয়। তাহলে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা অন্তত বন্ধ হবে।মুসলিম বিশ্বের নেতারা পশ্চিমাদের দাবার ঘুটি হয়ে থাকা উচিত নয়।তারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে যতবারই যুদ্ধ করেছে,প্রতিবারই পশ্চিমাদের গোপন ইন্দনে প্রভাবিত হয়েছে।আর পরাজিত হয়েছে।
৭।মুসলিম বিশ্ব মূলতঃ কূটনীতির খেলায় একেবাই অদক্ষ।তারা অদক্ষ সম্পদের বন্টনে আর সাম্যতায়, তারা অদূরদর্শী শিক্ষা ও গবেষণা খাতে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে।
আমি মনে করি, এদিক দিয়ে বাংলাদেশ কিছুক্ষেত্রে অগ্রগামী।সাম্প্রতিককালে, বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে গৃহীত সিদ্ধান্তে হট্টগোল হচ্ছে।আপনারা চিন্তা করুন, নির্যাতিত ফিলিস্তিনকেও ইজরায়েলের সাথে এক টেবিলে বসতে হয়,মিশরও বসে।এসবে অপরাধ নেই।সমাধান চাইলে বসতে হবে।
ক'দিন আগে আমার একজন প্রিয়ভাজন সারোয়ার তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছে,দিনের শেষে আমরা ভালো সদাইটাই করি।তাই ইসরাইলের উৎপাদিত পন্য কেনা বন্ধ করার দাবী বা আবদার কেউ মানবেনা।কারণ, ইহুদীরা পন্য সকলের জন্য উৎপাদন করে,যা গুণে এবং মানে ভালো।এটিই বাস্তবতা।অতএব ব্যবসায় তারাই রাজত্ব করবে।আসুন,আমরা সেরা হওয়ার সাধনা করি, চেষ্টা করি।
এখন আমরা ফিলিস্তিনি জনগণের রক্ত চাইনা,চাইনা নির্মম মৃত্যুর মিছিল।আমরা শান্তির পৃথিবী চাই।আল্লাহ কবুল করুন।
২৯/০৫/২০২১

প্রতিবাদের ভাষা

প্রতিবাদের ভাষা

     মানুষগুলো আর মানুষ নাই;সবাই মুখোশ পরে আছে।সব যেন এক একটা জানোয়ার।যতই হিদায়াতের বাণী শুনে, তাদের কোন পরিবর্তন হয়না।তাই, দীর্ঘ প্রায় আট দশক ধরে দরবেশ সাহেব জন্মদিনের পোশাকে থাকেন।তাঁর নাম কেউ জানেনা; শুধু এটুকু জানে যে তিনি খাড়া দরবেশ।বিগত শতাব্দীর শুরুতে তিনি বসুরহাট বাজারে থাকতেন।যাদের কিতাবের জ্ঞান আছে, তারা খাড়া দরবেশকে নিয়ে নিন্দাসূচক শব্দ বলতেন; তবে পেছনে। সামনে আসতেন না।তিনি কিভাবে জানি মানুষের গোমর ফাঁস করে দিতেন।উল্লিখিত দরবেশের দিগম্বর রুপ ছিলো প্রতিবাদের ভাষা।তিনি বলতেন পশু-পাখি-জানোয়ারের সামনে শরীর ঢাকার কোন দরকার নেই।তবে বছরে একবার এর ব্যতিক্রম হতো।জৌনপুরের পীর সাহেব অত্র এলাকা সফরে আসতেন। খাড়া দরবেশ কোন এক অজ্ঞাত উপায়ে তাদের আগমনের সংবাদ পেয়ে যেতেন।তখন পথচারীদের উদ্দেশ্য বলতেন,"মানুষ আসছে,একখানা লুঙ্গি দাও।"
ইসলামের স্বর্ণযুগে জ্ঞানীগুণীদের আত্মমর্যাদাবোধ ছিলো ঈর্ষনীয়। তাঁদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে এর প্রমান পাওয়া যায়।তখন বাগদের সিংহাসনে আসীন ছিলেন খলিফা মনসুর।তিনি কাজী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিলেন।সে যুগের বিখ্যাত চারজন বিখ্যাত মনীষীকে প্রাথমিকভাবে বাছাই করলেন।চারজন হলেন,ইমাম আবু হানিফা,সুফিয়ান সাওরী,শোরায়াহ ও ইমাম শা'বী। তারা চারজনই কাজীর পদ গ্রহণে অনিচ্ছুক ছিলেন।বিশেষ করে, তারা চলমান খিলাফত নামের রাজতন্ত্র মানতে পারেননি।দ্বিতীয়ত, রাসূল(সাঃ) -এর একটা হাদিস ছিলো, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে,যাকে কাজী নির্বাচিত করা হয়েছে তাকে ছুরি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।
তাঁদের খলিফার দরবারে ডাকা হলো। তাঁরা একই সঙ্গে আসছিলেন।পথে ইমাম আযম বললেন,যেভাবেই হোক, আমি এই পদ গ্রহণ করবোনা।সুফিয়ানকে বললেন, আপনি সরে পড়ুন।শা'বী আপনি পাগলের ভান করুন। সুফিয়ান সরে পড়লেন।বাকি তিন জন দরবারে গেলেন।
খলিফা প্রথমে ইমাম আবু হানিফা(রাঃ) কে কাজীর পদ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করলেন।তিনি বললেন,আমি আরবের লোক নই।অতএব আরবের প্রধানগণ আমার হুকুম মানতে চাইবেনা।জাফর বারমাকী সেখানে উপস্থিত ছিলেন।তিনি বললেন,গোত্রের সাথে পদের কী সম্পর্ক? এবার ইমাম বললেন,আমি এই পদের যোগ্য নই।এর প্রমান হলো,এই কথা হয় সত্য হবে,না হয় মিথ্যা হবে।সত্য হলে তো আমি এই পদের উপযুক্ত নই।আর যদি মিথ্যা হয়, তাহলে একজন মিথ্যাবাদীকে এরূপ দায়িত্বপূর্ণ পদের নিযুক্ত করা ঠিক নয়।এভাবে তিনি বাদ পড়লেন।
অতঃপর শা'বী এগিয়ে এসে খলিফার হাত ধরে বললেন,জনাব,আপনি কুশলে আছেন তো! আপনার পরিবার পরিজন কেমন আছে?খলিফা তার কথা বার্তার ধরন দেখে বুঝলেন,নিশ্চয় লোকটার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছে।তিনি বাদ পড়লেন।
এবার শোরায়ার পালা।তিনি বললেন,আমি পাগল এবং আমার মস্তিষ্ক অত্যন্ত দূর্বল।আমার পক্ষে দায়িত্বপূর্ণ কাজ করা অসম্ভব। শুনে খলিফা বললেন, চিকিৎসা করলে রোগ সেরে যাবে। অবশেষে, তিনি উক্ত পদে নিযুক্ত হলেন।
২৫/০৯/২০২১

সরকারি চাকুরে এবং ব্যবসায়

 

সরকারি চাকুরে এবং ব্যবসায়

সরকারি চাকুরীজীবিদের ব্যবসায়ে জড়ানো নিষিদ্ধ ; একইভাবে সরকারি প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করাও তাদের উচিত নয়।সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মৌলিক কাজের অন্যতম হচ্ছে, ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়ের পরিবেশ সৃষ্টি করা।কিন্তু সরকারের কোন প্রতিষ্ঠান যদি আয়বর্ধক কাজে সরাসরি যুক্ত থাকে, তাহলে তাদের পেশাদারিত্ব হুমকির মুখে পড়ে।পাকিস্থানের সেনাবাহিনী এর বড় প্রমাণ।তারা তাদের আর্থিক দুর্বিত্তায়নের ইচ্ছা পূর্ণ করতে গিয়ে পাকিস্থানের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে।তারা পাকিস্থানের সবচেয়ে ধনী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান।ফলে তাদের পেশাদারিত্ব মান হারিয়েছে।যার ফল হচ্ছে, বার বার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করা।
বাংলাদেশেও সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্তাগণ সরকারি প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক উন্নতির উৎস হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ খুঁজে যাচ্ছে,কেউ কেউ ব্যবহার করছে।এক্ষেত্রে যাদের লাঠির জোর বেশি তারা এগিয়ে আছে।কিন্তু দেশের নিরাপত্তা,আইন-শৃংখলা এবং সেবাখাতের সরকারি ব্যক্তিগণ যদি লোভের ফাঁদে পা বাড়ায় তাহলে তারা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হবে;এ সত্য তাদের অনুধাবন করতে হবে।
সরকারি অফিস আদালতের বাইরে ভূমি ব্যবহার,এর উন্নয়ন এবং তদারকির জন্যও সরকারের প্রতিষ্ঠান আছে।যার যতটুকু করা যৌক্তিক তাকে শুধুমাত্র ততটুকু করবার সুযোগ দেয়া উচিত। কিন্তু এক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি এবং সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দ্বন্ধ কাম্য নয়।
টি আই বি’র রিপোর্টের সত্য মিথ্যা যাচাই না করেও আমরা ভুক্তভোগীরা বলতে পারি,সরকারি অফিসের মধ্যে বেশির ভাগ দুর্নীতিতে নিমজ্জ্বিত।অর্থাৎ এখানে বসে বসে তারা এক ধরনের ব্যবসায়িক কর্ম সম্পাদন করে যাচ্ছে।অথচ মনে রাখা উচিত, আমাদের কল্যাণের জন্য আমাদের সৎ হওয়া উচিত।০৩/১০/২০২১

আমার শিক্ষকগণ

 

আমার শিক্ষকগণ

বড়ই রাশভারী অধ্যাপক,আবু হামিদ লতিফ স্যার।প্রশ্ন করলেন,বাংলাদেশে শতকরা কতোজন শিক্ষিত।সহজ প্রশ্ন। কিন্তু কেউ কোন কথা বলছে না।আমি উত্তর দিলাম,শতভাগ। শতভাগ লোক শিক্ষিত।সবাই আমার দিকে তাকালো।স্যার বললেন,আপনি সঠিক বলেছেন।একজন মানুষ স্বাক্ষর না হয়েও শিক্ষিত হতে পারেন।স্যার,উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার উপরে একটা কোর্স করাতেন।আমার দেখা অসাধারণ শিক্ষক।
শিক্ষা অর্জন করার পেছনে সার্টিফিকেট ভিত্তিক শিক্ষাকে আমরা বিশেষ বিবেচনায় রেখে থাকি।কিন্তু আমাদের জীবনব্যাপী শিক্ষার ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সামন্যই অবদান থাকে।আমি সাঁতার শিখেছিলাম, সমবয়সী ফিরোজের থেকে;সে কৈশোরে মারা যায়।পুরুষের স্পেশাল কিছু জিনিস আছে,তা শিখিয়েছিলো দিনমুজুর ওসমান।প্রায় সমবয়সী। এখন নেই।
ব্যক্তিজীবনে সমস্যা এবং সংকটের মুখোমুখি হয়ে আমরা মৌলিক শিক্ষা অর্জন করে থাকি।শেখ সাদী বলেছেন,বোকাদেরকে শেখাবার উপায় হচ্ছেঃএদেরকে ব্যস্ত রাখা;এদেরকে ব্যস্ত রাখলে বোকামি করার সময় পায়না।বেয়াদপদের শেখাবার উপায় হচ্ছেঃমারের উপর রাখা এবং বুদ্ধিমানদের শেখাবার উপায় হচ্ছেঃসমস্যার মুখোমুখি রাখা,এতে তারা সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য উদ্ভাবনী চিন্তার প্রয়োগ ঘটিয়ে থাকে।
আনুষ্ঠানিক শিক্ষালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে যাঁকে সবচেয়ে বেশি স্মরণে আছে তাঁদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন,বাবু ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার।ছ'ফুট উচ্চতার এই শিক্ষক আমাকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াতেন।তাঁর শারীরিক উচ্চতার চেয়ে অধিকতর ছিলো মানবিক উচ্চতা।প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ চুকানোর কুড়ি বছর পরে তাঁর সাথে দ্বিতীয়বার দেখা করতে গিয়েছিলাম।ভালোলাগা যখন আত্মার সাথে একীভূত হয়ে যায়,তখন কেন ভালো লাগে তা শব্দে প্রকাশ করা যায় না।তবে পরবর্তী জীবনে এটুকু বুঝেছি যে,তিনি অন্যান্য শিক্ষার্থীর সাথে আমাকেও গুরুত্ব দিয়েছিলেন।
মাধ্যমিক স্তরে আমি ছিলাম গুরুত্বহীন অস্তিত্ব।পরিবারের কেউ জানতেও চাইতো না, কী পড়ছি, কেমন পড়ছি।শুধুমাত্র কর্মব্যস্ত মা,পাশে আসতেন।বলতেন,পড়।এটুকু মনে বাজতো। কারণ,আমরা ছিলাম মায়ের বাধ্য ছেলে।মাধ্যমিকেও আমরা স্বপ্ন দেখিনি;বড় হওয়ার স্বপ্ন।এটা কেউ না কেউ দেখাতে হয়,আমাদের কেউ দেখাবার প্রয়োজন বোধ করেনি।
উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে পেলাম। অধ্যাপক মোমিন উল্যাহ স্যার।আমার দেখা সেরা শিক্ষক।শাসনে,বচনে এবং শিক্ষণ শিখনে তাঁর সাথে তুলনা করার মতো কেউ নেই।তিনি জীববিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন।কিন্তু প্রাইভেট পড়াতেন ইংরেজি।ইংরেজি শেখাবার সহজ কৌশল তিনি জানতেন এবং জানাতে সক্ষম ছিলেন।এখনও প্রতিটি মোনাজাতে তাঁর জন্য দোয়া করে থাকি।তাঁর কাছে আমার অশেষ ঋণ।
মানুষকে স্বপ্ন দেখানো শেখানো হচ্ছে সবচেয়ে বড় শিক্ষাদান।এতে শিক্ষার্থী নিজ থেকেই এগিয়ে যায়।আমাদের আনুষ্ঠানিক শিক্ষাস্তরে এটি নেই বললেই চলে।কারণ,হতাশাগ্রস্ত শিক্ষক স্বপ্ন দেখাবার সাহস রাখেনা।এটা আমি বুঝেছি।
এম এ ভর্তির আগেও আমার কথা বলায় শুদ্ধ উচ্চারণের উপায় ছিলো না।খাস নোয়াখালীর ভাষায় অধিকাংশ শিক্ষক পাঠ দিতেন।প্রাথমিকে শতভাগ শিক্ষক নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় পাঠদান করতেন,মাধ্যমিকে এটি কমে আসে।কিন্তু পরবর্তীতে এসে দেখলাম,তাঁদের অধিকাংশই শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলতেন না।এই ঘাটতি অনেকের মৃত্যু পর্যন্ত থেকে যায়।আমাদের সন্মানিত আইন প্রণেতাদের সংসদের বিতর্ক শুনলে এটি বুঝতে পারবেন।আমারও উচ্চারণে ভুল ছিলো ভয়াবহ।আমার প্রতি সতীর্থদের করুণার দৃষ্টি দেখে ডঃনরেন বিশ্বাস স্যার বললেন,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সেরাদের অন্যতম মুনির চৌধুরী এবং মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী নোয়াখালীর মানুষ। সে শিখে নিবে।তারপরই উচ্চারণ শিখে নিই।সেটা ছিলো নীলখেত হাইস্কুলের করিডোরে।যতোদিন আমি কথা বলবো,ততদিনই নীলখেত স্কুলের করিডোর আর আলম খোরশেদকে মনে রাখতে হবে।
মানুষকে যে কতো ভালোভাবে ভালোবাসা যায় তা প্রত্যক্ষ করেছিলাম,জনাব পেয়ারা মিয়ার(মুজিবুর রহমান চৌধুরী) থেকে।যিনি দাগনভূঁইয়ার কৃতিসন্তান।তাঁকে দেখে মনে হয়েছে মানুষের কল্যাণ কামনা করা এক ধরনের নেশা।যেটি আমাদের সবচেয়ে বেশি দরকার।
বিশ্ব শিক্ষক দিবসে আমি সেই সকল শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি,যারা শিক্ষকতাকে উপভোগ করেন, যারা উপভোগ করেছিলেন, যারা স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখান; চরম সংকটেও সত্যকে ধারণ করেন।০৬/১০/২০২১

Printfriendly

Featured Post

জাতি নির্মাণে গল্পযোগ

  জাতি নির্মাণে গল্পযোগ   ১ ।   মানুষ সামাজিক জীব।তারা পরিবার গঠন করে।তারপর সে-ই পরিবার একটি গোষ্ঠীতে রুপান্তরিত হয় এবং ধীরে ধীরে একাধিক গোষ...