বুধবার, ১১ জুলাই, ২০১৮

বাংলা নববর্ষ উদযাপন-১৪২৪(Bangla New Year Celebration-1424)

পশ্চিম চরকাঁকড়া পণ্ডিতের হাট উচ্চ বিদ্যালয় ,কোম্পানিগঞ্জ,নোয়াখালি কর্তৃক আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রা-১৪২৪।বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এই শোভাযাত্রায় অংশ গ্রহণ করে।


বৃহস্পতিবার, ৫ জুলাই, ২০১৮

শৃংখলা বনাম শৃংখলিত


শৃংখলা বনাম শৃংখলিত


         শৃংখলা আর শৃংখলিত দুটো শব্দ বাংলা বানানে খুবই কাছাকাছি।‘শৃংখলা প্রতিষ্ঠার জন্য শৃংখলিত করা’-এটি হচ্ছে সাধারণ জনগনকে শৃংখলিত করার জন্য শাসক শ্রেণির অপকর্মের নৈতিক ভিত্তি।শৃংখলা দিয়ে বিদ্যমান কোন উপাদানকে সুবিন্যস্ত করা বোঝায়;যেভাবে বিদ্যমান থাকা উচিত সেভাবে বিন্যস্ত করা।অন্যদিকে বিদ্যমান উপাদানের অনিয়ন্ত্রিত,অসামঞ্জস্যপূর্ণ ও অনৈতিক আচরণ নিয়ন্ত্রণের উদ্দ্যেশ্যেই যে  সকল পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হয় সেগুলো হচ্ছে শৃংখলিত করার কর্ম। 
         যারা শৃংখলা আনয়নের জন্য ক্রমাগত শৃংখলিত করার কর্মে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন –তাদের উদ্দেশ্যে প্রায়শঃ অনৈতিক উপাদানের সমাবেশ থাকে।তারা তাদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য কতিপয় আইনি ভিত্তি তৈরি করে;যে সকল আইন জনগণকে শৃংখলিত করার কাজে ব্যবহৃত হয়।এক্ষেত্রে স্বাধীনচেতা জনগোষ্ঠীকে শাসক শ্রেণি অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিজেদের প্রতিপক্ষ হিসেবেই বিবেচনা করে।এজন্য তারা নিজেদের কর্মপরিকল্পনাকে বাস্তবায়নের জন্য শৃংখলায়িত একটি গোষ্ঠী সৃষ্টি করে অর্থাযারা জনগণকে শৃংখলায়িত করার কাজে নিরলসভাবে কর্মে প্রযুক্ত আছেন- তারাও এক অদৃশ্য শিকলে বন্দী।এভাবে অনৈতিক উদ্দেশ্যের ব্যবহার পুরো একটি জাতিকে শিকলে আবদ্ধ করে ফেলে;যার বিস্তরণ ঘটে জাতির চিন্তা এবং কর্মে।এরকম অবস্থা যে কোন জাতির নান্দনিক প্রতিষ্ঠার জন্য হুমকী স্বরূপ; এটি জাতির আধ্যাত্মিক ও নৈতিক ভিত্তিকে নষ্টকরে দেয়। ফলে শাসক শ্রেণি যেমন লাঠিয়ালে ভর করে নিজের  অস্তিত্ব রক্ষায় ব্রতী হয়-জনগণও নগদ লাভে তৎপর হয়।এমন অবস্থা ঘটেছিল প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যে।তারা সামরিক দিকে উন্নতি করেছিল ঠিকই; জ্ঞান-বিজ্ঞানে তাদের অর্জন শূণ্যই বলা যায়।অন্যদিকে প্রাচীন গ্রীসের রাষ্ট্রসমূহ জ্ঞান-বিজ্ঞানে ঈর্ষণীয় উন্নতি লাভ করেছিল;জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিদের অনেকেই গ্রীক সাম্রাজ্যে বিচরণ করতো- যারা রাষ্ট্রের আধ্যাত্মিক সত্ত্বাকে অমরত্ব দিয়েছে।গ্রীসের নগর রাষ্ট্রগুলো রাষ্ট্র পরিচালনায় যুক্তিকে প্রাধান্য দিয়েছিল;যা তাদের মধ্যে শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করেছিল।যদিও তারা তাদের নগর রাষ্ট্রের ভিত্তি প্রস্তুত করেছিল দাসদের দিয়ে।তারাও ছিল বিশাল জনগোষ্ঠী;শৃংখলিত।
         সমাজে বা রাষ্ট্রে শৃংখলা প্রতিষ্ঠার জন্য সুনিদির্ষ্ট আইনের প্রয়োজন হয়।অনেক সময় শাসকশ্রেণি তাদের সুবিধার বিষয়টি মাথায় রেখে আইন প্রনয়ণ করে থাকে এবং তাদের সৃষ্ঠ তাবেদার বা পেটুয়া বাহিনী দিয়ে তথাকথিত শৃংখলা প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ে জনমানুষকে শৃংখলিত করে। বাংলাদেশ নীরিহ জনগোষ্ঠীর উপর ক্ষমতার অপব্যবহারের এক উর্বর ভূমি;যখনি যারা ক্ষমতার আসনে বসেছে – তখনি তারা মুক্তবুদ্ধি আর আমজনতাকেই টার্গেট করেছে।বর্তমানে বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজ বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে অন্যায্য আইন প্রণয়নের অভিযোগ করেছে;তথ্যের অবাধ প্রবাহ বন্ধের যে কোন পদক্ষেপ জনতাকে শৃংখলিত করার উদ্দেশ্যেই ব্যবহৃত হয়।
         অনেক সময় রাষ্ট্রের সুরক্ষার জন্য আপত দৃষ্টিতে দৃশ্যমান অন্যায্য কর্ম  রাষ্ট্রযন্ত্রের পরিচালকগণ করে থাকেন।পরিবর্তনপ্রত্যাশী গোষ্ঠির কর্মকে রাষ্ট্রের প্রশাসকগণ বরাবরই অন্যায় কর্ম বলে অভিহিত করতেই অভ্যস্থ।কারণ তারা মনে করেন, তাদের ছেয়ে অধিকতর কৌশলী আর বিদ্যান কেঊ নেই।থাকলেতো তারা এসকল পদে বসতেই পারতো না। বাংলাদেশে ডাক্তার এবং প্রকৌশলীদের রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণে সুযোগহীনতা অথবা সীমাবদ্ধতা তাদেরকে হতাশাগ্রস্থ করেছে।অন্যদিকে শিক্ষাখাতকে বিশৃংখলায় রেখে পুরো জাতিকে অসীম সময়ের জন্য শৃংখলিত করা হচ্ছে।কোন পণ্ডিত যদি এই বিষয়ে সুপরামর্শ দিয়ে থাকেন- তিনি সন্দেহযুক্ত এবং সরকারের জন্য হুমকী স্বরূপ বিবেচিত হবার সম্ভাবনা থাকে। আজকে আমাদের মাঝে আহমদ ছফার মত সক্রেটিস নেই;যিনি দেশের মানুষের জন্য দাঁড়াবেন।
         বিগত শতাব্দীর শেষ দশকে চীনের গণতন্ত্রীপন্থী একদল শিক্ষার্থী নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন;চীন সরকারই তাদের উপর গুলি বর্ষণ করেছিল।সরকার মনে করেছিল যে, তারা বিদেশি মদদপুষ্ট এবং বিচ্ছিন্নতাকামী।ফলে পরিবর্তনপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের রক্তস্রোত সাধারণের মনে দেখার মত কোন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়।অথচ অল্প কালের মধ্যেই চীন  উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনে।আসলে শাসকশ্রেণির অহংবোধ মানুষের অন্ধ আনুগত্য প্রত্যাশা করে এবং তা অপূর্ণ হলে মেজাজ বিগড়ে যায়। সুদূর অতীতে কনফুসিয়াস নামে এক মহাজ্ঞানী চীনে বাস করতেন।বর্তমানেও চীনারা তাঁকে তাদের অহংকারের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করে।কিন্তু তাঁকেও তাঁর রাজ্যের কর্ণধারের বিরাগবাজন হয়ে দেশ ছাড়তে হয়েছিল।কনফুসিয়াস আলোকিত মানুষ ছিলেন;তাই কর্ণধারগণের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিলেন।কারণ,তিনি ছিলেন সত্যিকার দেশ প্রেমিক।ফেরারি জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত তিনি দেশের কল্যাণে তাঁর চিন্তাকে নিয়োজিত রেখেছিলেন।আজকে আমরা যেই অখণ্ড চীনের অস্তিত্ব তা মূলতঃ তাঁর   লেখার প্রভাব।ফলে দীর্ঘকাল ধরে তিনিই চীনের স্বীকৃত ক্ষমতাধর সত্ত্বা।অন্যদিকে সক্রেটিসও দেশের আইন মেনে নিয়েছিলেন;হেমলক পানে আত্মহূতি দিয়েছিলেন।তাঁর অনুসারিদের সম্ভাব্য সংঘাত থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করেছিলেন।ফলে আজতক তিনিই শিক্ষাজগতের অন্যতম গুরু।
         স্বাধীন মানুষকে শৃংখলিত করার শক্তিশালী অজুহাত হল তাঁর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার আওয়াজ প্রতিষ্ঠা করা;এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে শাসকগণ এইক্ষেত্রে সফল হয়ে থাকেন।বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের যে কোন পর্যায়ে বাঙ্গালী নেতৃত্ব যখনি মানুষের অধিকারের কথা বলেছে তখনি পাকিস্থানী জান্তা দেশদ্রোহীতার গন্ধ খুঁজে পেয়েছে। তারা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়েছিল।কিন্তু তারা সফল হয়নি।কারণ,তাঁর অসংখ্য মানসজাত সন্তান ছিলেন। ফলে জান্তা সরকারের  তাঁকে শৃংখলিত করার উদ্দেশ্য সফল হয়নি। সেদিন তারাও শৃংখলা প্রতিষ্ঠার অজুহাত দেখিয়েছিল।
         প্রত্যাশিত শৃংখলা প্রতিষ্ঠার জন্য দরকার সার্বজনীন আইন;যা পক্ষপাতহীনভাবে সর্বত্র প্রয়োগ হবে।একটি কল্যাণ রাষ্ট্রে এমনটিই প্রত্যাশা করা হয়।বাংলাদেশে যেমন বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আইন নেই- তেমনি নেই নীতিমালা।অন্যদিকে আইন প্রয়োগকারি সংস্থার সদস্যসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম অভিযোগ রয়েছে;তাঁরা ক্ষমতাসীন দলের লেজুড়বৃত্তি করে থাকেন।আইনের সফল প্রয়োগে এটি সবচেয়ে বড় বাধা।অনেকে মনে করেন আইন প্রয়োগকারি সংস্থার যে সকল সদস্য অন্যায্য আচরণে অগ্রগামী তারাও একধরণের শৃংখলে আবদ্ধ এবং অনেকে বিশেষ ব্যক্তির ইচ্ছের কাছে সমর্পিত।এই কারণেই অল্পদিনেই দেশব্যাপি মাদক সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছে।বর্তমানে মাদক সম্রাটদের উত্থান রাষ্ট্রের নিরপত্তাকেও হুমকীর মুখে ঠেলে দিয়েছে।বর্তমানে মাদক ব্যবসায়িদের মৃত্য সাধারণ জনগোষ্ঠীর দয়ার উদ্রেক ঘটাচ্ছে না;যেমনটি বাংলা ভাইয়ের পতন পর্বে ঘটেছিল।এজন্য বহু উদাহরণ দেয়া যেতে পারে।পাশাপাশি সেবাখাতের কর্মী বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই।তারা  অনৈতিক উপায়ে অর্থ উপায়ে অর্থ আয় করেন।তারা পুরো জাতিকে শিকলে আবদ্ধ করে রেখেছে।

         শৃংখলিত করার জন্য শৃংখলা শব্দের ব্যবহার করলে যে কোন জাতির ভবিষ্যত ধ্বংস হবে।সাথে সাথে শাসকশ্রেণিও কালের গর্বে হারিয়ে যাবে।অতএব মানুষকে শৃংখলিত করার অভিপ্রায়ে শৃংখলা প্রতিষ্ঠার আওয়াজ যেন তোলা না হয়।7/5/18

             
হজরত মুহাম্মদ(সাঃ)-এর শিক্ষাদান পদ্ধতি ও কৌশল বইতে অন্তর্ভুক্ত   ২০২০ একুশে বইমেলা                                                                 ----

Printfriendly

Featured Post

জাতি নির্মাণে গল্পযোগ

  জাতি নির্মাণে গল্পযোগ   ১ ।   মানুষ সামাজিক জীব।তারা পরিবার গঠন করে।তারপর সে-ই পরিবার একটি গোষ্ঠীতে রুপান্তরিত হয় এবং ধীরে ধীরে একাধিক গোষ...