বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

জাতি নির্মাণে গল্পযোগ

 জাতি নির্মাণে গল্পযোগ

 

 মানুষ সামাজিক জীব।তারা পরিবার গঠন করে।তারপর সে-ই পরিবার একটি গোষ্ঠীতে রুপান্তরিত হয় এবং ধীরে ধীরে একাধিক গোষ্ঠী একটা জাতিতে পরিনত হয়।অবশেষে তারা তাদের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাকে রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করে।একাধিক পরিবার ক্রমাগত পরিবর্তনের মাধ্যমে যে একটা রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়,তার জন্য গল্পের প্রয়োজন হয়।

আমাদের মূখ্য আলোচক মনে করেন, একটা জাতির আত্মসত্ত্বা নির্মাণের পেছনে গল্প থাকে ; যে গল্প সে-ই জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে এবং যার ফলে তারা সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে একটা রাষ্ট্র কায়েম করে।গল্পের জন্য প্রয়োজন জাতির ভাষা; যা একাধিক গোষ্ঠীর একীভূত হওয়ার অন্যতম উপযোগ। সামাজক আচার,ধর্মীয় জীবন, বিশ্বাস তাদেরকে এক বিন্দুতে দাঁড় করিয়ে দেয়।

বাঙালি জাতি- একটা  জাতি হিসেবে পরিচয় পেতে বহুকাল পেরুতে হয়েছে।এ-র প্রধান কারণ ছিলো একটা বিধিবদ্ধ ভাষার অভাব।বর্তমানের বাংলা সুলতানি আমলের শুরুতেও ছিলো বহু আঞ্চলিক ভাষার সমষ্টিমাত্র; যা এলাকা বেধে ভিন্ন ভিন্ন রুপে ব্যবহৃত হতো।বৃটিশ শাসন তাদের স্বরুপে হাজির হওয়ার আগেও বাংলা জনমানুষের ভাষা হতে পারেনি।তাই,বাঙালিরা একক জাতীয় চরিত্রের রুপ পেতে ব্যর্থ হয়েছিলো। এবং এ-ই কারণে জাতি  নির্মাণে  বাঙালির গল্প সৃজনের সুযোগ হয়নি।

২।গল্প একই সাথে  হবে মিথিকাল ও ইথিকাল

 একটা জনসমাজের ঐক্যবদ্ধ চরিত্র সৃষ্টির জন্য সত্য কাহিনী থাকা অত্যাবশ্যক নয়; শুধুমাত্র কাহিনীসূত্রই আবশ্যক।সৃষ্ট ঘটনার উপর ভিত্তি করে গল্প রচিত হবে।গল্পের চরিত্রগুলো মিথিকাল বৈশিষ্ট্য নিয়ে হাজির হবে; একইসাথে সেগুলো হবে এথিকাল বৈশিষ্ট্যে পূর্ণ।সেখানে ধর্মের চেয়ে ব্যক্তির কর্মকে বিশিষ্টতা দান করা হবে।একটা জাতির গল্প শুনলে চোখের সামনে ভেসে উঠবে তাদের এক অখণ্ড পরিচয়।

বৃটিশ শাসনের বদৌলতে কোলকাতা কেন্দ্রিক এক বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায় গড়ে উঠেছিলো ; যারা বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তাদের শব্দসম্ভারে ফুটিয়ে তুলিছিলেন।কিন্তু তাদের মধ্যে দু'একজন ব্যাতিক্রম ছাড়া কেউ তাদের সৃষ্টিতে ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠতে পারেন নি।ফলে একক জাতি হিসেবে বাঙালিকে কেউ দেখেছে হিন্দু, কেউ দেখেছে মুসলমান হিসেবে।জাতি হিসেবে ধর্ম ও বর্ণের ঊর্ধ্বে উঠবার জন্য যে ঔদার্য ও দূরদর্শিতা প্রয়োজন ছিলো, তা তাদের লেখায় ফুটে ওঠেনি।ফলে জাতি হিসেবে বাঙালি জাতি গঠনের গল্পও রচিত হয়নি।

।জাতির ভিত্তি ধর্ম হবে, নাকি ভাষা হবে তা আগেই ঠিক করে নিতে হবে এবং  তার উপর  ভিত্তি করেই গল্পের প্লট নির্মিত হতে হবে।এখানে প্রচলিত বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাস ও বিদ্যমান সাংস্কৃতিক চর্চাকে সম্মানজনক মিথষ্ক্রিয়ার  মাধ্যমে  ঐক্যবদ্ধ চেতনায় আনতে হবে।এজন্য জাতির গল্প রচনার জন্য লক্ষ্য সম্পর্কে পূর্বেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।  

সচেতন রাজনৈতিক গোষ্ঠী গল্পের প্লটের নির্দেশকের ভূমিকায় থাকবেন।লেখক,বুদ্ধিজীবীগণ তাঁদের চিন্তাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন; এটা প্রত্যাশিত।যদি তারা দূরদর্শীতা দেখাতে ব্যর্থ হন,তাহলে বুদ্ধিজীবীদেরকেই জাতির মননের আন্তঃপ্রবাহের মাঝি হতে হবে।কিন্তু বাংলাতে অধিকাংশ লেখক- বুদ্ধিজীবী রাজনৈতিক প্রবাহে ভেসে গিয়েছেন।পরিবর্তন বা নতুন সুন্দরের প্রতিষ্ঠায় তারা ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন।

।ভারতবর্ষ ভাগের অনিবার্য কারণ হলো, অখণ্ড জাতি গঠনের জন্য রচিত গল্পের অভাব।দু'শ বছরের পরাধীনতার শৃংখল ভাংগার জন্য দল মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলো। কিন্তু এতোদিনেও তাদের মধ্যে  ঐক্যের বোধ রচিত হয়নি।কারণ, তাদের  গল্পের প্লট জাতির মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করেছে।এ-র জন্য দায়ী একই সাথে ভারতীয় রাজনীতিবিদ এবং বুদ্ধিজীবী। নেতাজী সুভাষ বসু, কাজী নজরুল ইসলাম, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ব্যতীত কেউ জোরালোভাবে অখণ্ড ভারতের পক্ষে দাঁড়াতে পারেনি।যদিও বাঙালি মুসলিম রাজনীতিবিদগণ যুক্ত বাংলার স্বপ্ন লালন করেছিলেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন।কারণ, ণ্ডিত বাংলার পক্ষে হিন্দু রাজনৈতিক একজোট হয়েছিলেন। এজন্য বলা যায়,বৃটিশ শাসনামলে বাংলায় জন্ম নেয়া গল্প ছিলো ছিলো একটি একক জাতি হিসেবে বাঙালি জাতি গঠনের অন্তরায় এবং অবশেষে তা-ই সত্য হয়েছিলো।    

।ভাষা ও নৃতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে একটা জাতি গঠিত হতে পারে।কিন্তু এ-র উপর ভিত্তি করে জাতি গঠনের প্রধান অন্তরায় হচ্ছে ধর্মগুরুরা।তারা  একই ভাষাভাষী ,বর্ণ,সংস্কৃতিক বৈশিষ্টের জনসমষ্ঠির মধ্যেও বিভিন্নভাবে ভয়ানক পার্থক্য আবিষ্কার করে এবং ধর্মের ভয় দেখিয়ে পরষ্পর থেকে আলাদা করে রাখে।ফলে সম্ভাব্য ঐক্যবদ্ধ একটা জাতি ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর হয়।এক্ষেত্রে সূফীসাধকগণ স্পষ্টতঃ উদার।

।গল্প গালের জোরে রচিত হয়না; তা মানুষই রচনা করে এবং মানষই লালন করে।যারা মানুষকে ভাগ করা আর ভোগ করার গল্প রচনা করে তাদেরকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা উচিত।গল্পের উপাদান হিসেবে তাদেরকে উপেক্ষা করা উচিত।এদেরকে ফসলি জমিতে আগাছার মতো বিবেচনা করা সঙ্গত ।

।।জাতি নির্মাণের গল্পের ভিত্তি মজবুত হলে সে-ই জাতি একটি রাষ্ট্র নির্মাণে ব্রতী হয় এবং সে-ই রাষ্ট্রের ভিত্তি মজবুত হয়।জাতি নির্মাণের গল্পে থাকবে উদারতা,ন্যায়বিচার, সৃজনশীলতার প্রকাশ। থাকবে পেশাগত প্রতিটি ক্ষেত্রে নির্মোহ ত্যাগের প্রতিফলন।পরবর্তীরা যে ত্যাগের গল্প করবে,আবেগে  আনন্দাশ্রু ফেলবে।জাতির জন্মের পেছনে গল্প থাকলে জাতি পথ হারায়না।প্রতিটি সংকটে সম্ভাবনার পথ রচনা করে। আমরা জার্মানি,ইতালি,জাপান তুওরস্কের দিকে তাকালেই এই সত্য উপলব্দি করতে পারি।   

বাংলাদেশ বাঙালি জাতির পরিচয় নিয়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের অধিবাসী। একে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড় করিয়ে রাখবার জন্য একটা গল্পের প্রয়োজন। এ-ই গল্প হতে হবে বৈচিত্রপূর্ণ।চরিত্র হতে হবে বহুমুখী ; কিন্তু সকল চরিত্র এসে এক বিন্দুতে মিলিত হতে হবে।আমরা কী তেমন গল্প রচনায় এগুচ্ছি? না,আমার পর্যবেক্ষণে বহুর মধ্যে একের সন্ধান এখানে অনুপস্থিত।যাঁরা একীভূত একটা জাতির স্বপ্নকে গল্পের মধ্যদিয়ে,জীবনের মধ্য দিয়ে রূপায়িত করতে চেষ্টা করছে,তারা দৌঁড়ের উপরেই আছে।তারা কেউ হচ্ছেন গৃহহারা, কেউ হচ্ছেন ছন্নছাড়া। তাদের পাশে দাঁড়াবার জন্য জাতির আকাঙ্ক্ষার প্রতীক রাষ্ট্র নেই। এখানেও ভারত বিভক্তির সময়কার বুদ্ধিজীবীদের হীনমন্যতা ও অদূরদর্শীতার অগণিত প্রমান আছে।একদিকে আছে,সর্বজ্ঞানের অধিকারী আমলাগণ যাদেরকে আমি মায়ানমারের সামরিক বাহিনীর সাথে তুলনা করে থাকি,অন্যদিকে আছে  ফরমায়েশি বুদ্ধিজীবী ; তাণ্ডবে জাতির স্বপ্নের গল্প বলার পথ রুদ্ধ হয়ে গ্যাছে। তাহলে কি আমরা অদেখা এক অলঙ্ঘনীয় ভাঙ্গনের পথে আছি?এজন্য সত্যি আমি হতাশ!

এবং যেহেতু গল্পের শক্তিই রাষ্ট্রের স্থায়িত্বের নির্ণায়ক, সেহেতু আশা ও ভালবাসার গল্প দিয়েই সম্ভাবনার শিল্প নির্মিত হওয়া উচিত।এ-র মধ্য দিয়ে পরষ্পর গভীর প্রেমে আবদ্ধ একটা জাতি রাষ্ট্র নামে প্রতিষ্ঠানে কল্যাণকর জীবনের স্বাদ পায়।

১২/০৯/২০২২

শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আড্ডার দিনগুলো-২ (নাগরিক প্রসঙ্গ)

আড্ডার দিনগুলো-২

 (নাগরিক প্রসঙ্গ) 


একটি দেশের নাগরিক তাদের নাগরিক অধিকার ভোগ করবে,এটা প্রত্যাশিত। যখন রাষ্ট্রযন্ত্র নাগরিকের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, তখনই আমরা নাগরিকের শ্রেণিকরণ করা শুরু করি।কেউ প্রথম শ্রেণির নাগরিকবলে চিহ্নিত হই ,কেউ  দ্বিতীয় শ্রেণির, কেউবা তৃতীয় শ্রেণির।    

বিশ্বের যে সকল দেশে মানবাধিকার সমুন্নত আছে,সেখানে বাংলাদেশের মতো নাগরিক শ্রেণিকরণের বিষয় অনুপস্থিত।কর্মযজ্ঞে ব্যক্তি ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে অবস্থান নিলেও অধিকারের ক্ষেত্রে অভিন্ন সুযোগ পেয়ে থাকে। 

প্রায় বছর পাঁচেক আগে দেশখ্যাত শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার এ-ই বিষয়ে কিছু কথা বলেছিলেন।তিনি মনে করেন,বিদেশে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে বড় কাজ করা খুবই কঠিন।দেশে তাঁর বহু অনুরাগী রয়েছেন।আমি নিজেও তাকে ভালোবাসি। কিন্তু তাঁর উল্লিখিত মতের সাথে একমত হতে পারিনি। 


বাংলাদেশ এখন এমন এক অবস্থায় দাঁড়িয়েছে যে,নাগরিক শ্রেণিকরণের অদৃশ্য প্রভাবে যোগ্য অনেকেই ধরাশায়ী।আমাদের মূখ্য আলোচক মনে করেন,জ্ঞানী,গুনী ও সাধক সব যুগেই সারা পৃথিবীর সম্পদ।তারা একই সাথে জাতীয়তাবাদী ও আন্তর্জাতিকতাবাদী।সত্য ও ন্যায়, দেশ ও কাল নিরপেক্ষ। তারা নিজ জন্মভূমিতে যখন সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে লড়াইয়ে লড়তে গিয়ে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়,তখন তাদের হিজরত করা অনিবার্য হয়ে পড়ে।   

এবং একটি বাস্তবতা প্রতিটি শতাব্দীতে দেখা যায়,পৃথিবীতে মানুষের জন্য একটি আবাসস্থল থাকে , যেখানে মানুষ মুক্ত; মুক্ত থাকে স্বাধীন চিন্তা করায়,স্বাধীন থাকে নিজের বিশ্বাসকে লালন করায়।বর্তমানে এমন একটি অঞ্চল আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র।ইউরোপকেও এ-র আওতায় রাখা যায়।  

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র যদি কাউকে নাগরিত্ব দেয় কিংবা আশ্রয় দেয়,তাহলে মাত্র দু' একটি ব্যাতিক্রম ছাড়া সকল অধিকার ভোগ করার অধিকার দেয়।আমরা আমাদের নিজের জন্মভূমিতে যে সকল ন্যায্য অধিকার ভোগ করতে পারিনা,তা আমেরিকায় ভোগ করতে সক্ষম।সুতরাং, সেখনে আশ্রয়প্রাপ্ত যে কেউ সেখানে যে কোন বিচারেই দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক নয়।অথচ এখানে অগণিত অপবিত্র আত্মার সম্মিলনে আমাদের নাগরিক জীবন চারখার।ঘুষ-দুর্নীতি ,অনিয়মে দেশের সর্বস্তরের মানুষ ভুক্তভোগী।   


যে দেশে সত্যের পক্ষে থাকার জন্য,লড়াই করার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র নৈতিক সক্ষমতা হারিয়ে ফেলে,সেই দেশে নাগরিক শব্দটি অর্থহীন। যে-ই সুবিধা পায়,সে-ই নেয়; ন্যায়- অন্যায়ের বিচার উপেক্ষিত থেকে যায়।এখানে বিশ্বাসে ও কর্মে ভিন্নতা দৃশ্যমান হলে পেশিশক্তি দ্বারা সহজেই মানুষ আক্রান্ত হতে হয় এবং এজন্য আক্রান্ত ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বিচার প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। 


বাংলাদেশের বহু বিজ্ঞানী, গবেষক বিদেশে গিয়ে তাদের জ্ঞানচর্চা অব্যাহত রেখেছেন।অনেকেই ইচ্ছা থাকলেও দেশে গবেষণা কাজে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না।এমন অনেক বাংলাদেশী প্রবাসী বিজ্ঞানী আছেন,যারা একটি সুযোগ চাচ্ছেন,প্রত্যাশা করছেন যাতে দেশে একটি চাকুরীর সুযোগ পেতে পারেন।কিন্তু অযোগ্যদের দাপটে তাদের আসবার পথ রুদ্ধ।অনেকে দেশে এসে খ্যাতি কুড়িয়েছেন;কিন্তু তাদের উদ্ভাবন কী, তা বরাবরই অপ্রকাশিত।অথচ তাদের খ্যাতির সীমা নেই।


সত্যিকার সাধক ও বিজ্ঞানীরা রাজনীতি নিয়ে মাথা খাটাবার সময় পাননা।শুধু শুধু তেল দেবারও চিন্তা করেন না।ফলে বিদেশে তাদের জ্ঞানচর্চা চালিয়ে যান।জ্ঞানীদের দেশছাড়া হবার ইতিহাস নতুন নয়।আল-বেরুনী,ইবনে সীনা থেকে শুরু করে খ্যাতিমান অনেকের জীবনে এমনই ঘটেছে।কিন্তু তারা যেখানে গিয়েছেন সেখানেই সন্মানিত হয়েছে।আজ তারা সারা পৃথিবীর সম্পদ।

বাংলাদেশের  বহু চিকিৎসক দেশের সরকারি হাসপাতাল ছেড়ে বেসরকারি হাসপাতালে পেশাগত জীবন কাটাচ্ছেন।তাদের অনেকেই অন্ধ আনুগত্য দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন।যার ফলে ছিটকে পড়েছেন।এ-ই সরে যাওয়া তাদের জীবনকে বিষিয়ে দিয়েছে।কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে অন্ধ আনুগত্য প্রত্যাশা করেনা।তারা শ্রম ও কর্মের মূল্য দেয়।এজন্য নিজ জন্মভূমিতে গবেষণা করতে ব্যর্থ হয়ে(হুমকির মুখে থাকে) তারা স্বাধীন জমিন খুঁজে নেয়।এই নতুন স্থান খুঁজে নেয়া বিশ্ববাসীর জন্য প্রয়োজন।এই স্বাধীন পরিবেশের যারা সষ্ট্রা ,তারা মত ও পথে ভিন্ন হলেও জ্ঞান বিজ্ঞানের পথে তারা সকলকে এক সারিতে এনে দেয়।যতদিন তারা তাদের এই নীতি বজায় রাখবে ,ততদিন পৃথিবী তাদের হাতের মুঠোয় থাকবে।  


 অপবিত্র মানুষের জঞ্জাল থেকে যতদিন আমরা মুক্ত হতে পারবোনা,ততদিন আমরা কেউ প্রথম,কেউ দ্বিতীয়,কেউ তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক হয়ে থাকতে হবে।এটিই আমাদের নিয়তী।অন্যদিকে, অর্থের প্রবাহ ক্রমাগত আমাদের চরিত্র নষ্ট করে যাবে।

শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ভয়

 ভয়
লোকটা নাছোড় বান্দা। আমার পরিচিত। গতকাল থেকে তিনি গুরুতর এক সমস্যায় কাবু হয়ে আছেন।তিনি আমাকে কিছু বলতে চাচ্ছেন।আমাকে শুনতেই হবে।আমি শুনলাম।আমার ধৈর্য হারাবার কথা।কিন্তু শুনলাম।
তিনি বলে যাচ্ছেন,গতকাল দুপুরে তিনি লোকাল বাসে বসুরহাটে যাচ্ছেন।যাচ্ছিলেন ফেনী থেকে। পাশে বসা যাত্রীর সাথে তিনি কথা বলছিলেন। লোকটির মুখে ছিলো মাস্ক।চিনতে পারেননি।তবে মনে হয়েছে মধ্যবয়সী। চাপা স্বভাবের মানুষ। মাঝে মাঝে কথা বলছিলেন।মাঝে মাঝে হু হাঁ বলে উত্তর দিচ্ছিলেন।
তাহলে সমস্যাটা কী?আপনি এটা বলার জন্য আমাকে ডেকেছেন? হ্যাঁ,আপনাকে সবকিছু বলিনি।লোকটি ছিলো আমার পাশের আসনে।তিনি বলছিলেন, বাসের ভাড়া খুব বেশী বাড়িয়েছে।খুব অনিয়ম।আমি বললাম, সর্বত্র অনিয়ম। আমার এন আই ডি -তে ভুল হয়েছে।ভুল কারা করেছে?তারা।কিন্তু আমার কার্ডের সংশোধন করতে কতো ঘাটে যেতে লাগলো। আবার অফিসে অফিসে টাকা দিতে হলো। টাকা না দিলে তারা ফাইলের খোঁজই পায়না।ভূমি অফিস,ইউনিয়ন বোর্ড অফিস সবখানে মস্তবড় অফিসার বসে আছে।তারা অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে রাখে।কী এক ভয়াবহ সংকটে আছি।এসব কী, বলে বুঝানো যাবে!ভদ্রলোক আমার সাথে ঐক্যমত প্রকাশ করলেন।তাহলে সমস্যাটা কী?
সমস্যা হলো, লোকটিকে আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা।লোকটা যদি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে!যদি মামলা করে;থানায় কিংবা আদালতে!আমি সরকারের অনিয়মের কথা বলেছি।বলুনতো এখন কী করি?আমি বললাম, দুত্তরি কী সব আজে বাজে বকে যাচ্ছেন।অনেকেই অফিস আদালতের ঘুষ- দুর্নীতি নিয়ে পুলিশের সামনে বসেই বলে থাকে।
ভদ্রলোকের ভয় হচ্ছে,সহযাত্রী তার বিরুদ্ধে যদি মামলা করে দেন; তবেই তো ঝামেলায় পড়বেন।আমি তাকে বুঝাতেই পারছিনা যে, তিনি একজন বয়োবৃদ্ধ মানুষ, কষ্টের কথা শেয়ার করেছেন; এটা মামলার কারণ হয়না।মানুষের খেয়ে দেয়ে আর যেনো কাজ নেই।অযথা কেনো তারা সমস্যায় জড়াবে? তবু ভদ্রলোকের ভয় কাটে না।
লোকটা আমাকে চেনেই না।আমার মুখেও মাস্ক ছিলো। লোকটা আমার নামও জানতে চায়নি।তবুও আমার ভয় হচ্ছে।না ভাই,আমি তো ভালো আছি।টাকা আছে।টাকা দিয়ে ঝামেলা চুকিয়ে ফেলতে পারি।শুধু শুধু কথা না বললেই পারতাম।
হ্যাঁ,পারতেন।কিন্তু প্রতিবেশির ঘরে আগুন লাগলে আপনি নিরাপদ ভাববার কোন কারণ নেই।
এরা সমাজ বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠী। এরা নিজেদের সুখ ও সুবিধা নিয়ে আত্মতৃপ্তি খোঁজে। কিন্তু এরাই আজকাল মুখ ফসকে অনেক কথা বলে ফেলে।

Printfriendly

Featured Post

জাতি নির্মাণে গল্পযোগ

  জাতি নির্মাণে গল্পযোগ   ১ ।   মানুষ সামাজিক জীব।তারা পরিবার গঠন করে।তারপর সে-ই পরিবার একটি গোষ্ঠীতে রুপান্তরিত হয় এবং ধীরে ধীরে একাধিক গোষ...