অভিযোজিত কালের কথন-৩
সারাটা দিন তাকিয়ে থাকি বাহির পথে-কখন তাহার
সময় হবে বসবে কাছে। একটু খানি দেখতে খুবই
ইচ্ছে হয়। বুকটা বড়ই ফাঁকা বিশাল দুরের কোন
দ্বীপের মতো জনবিরল।তসবি দানা হাতে নিয়ে
আল্লাহ জপি-দোয়া করি একটু তারে বিরাম দাও
বসতে পাশে-দুটো কথা বলবে শুধু হেঁসে হেঁসে।
তার যে ভারি ক্ষণের অভাব একটুখানি সময় দেবার।
ঘরের কোনে পড়ে থাকি ভারী পাথর।হাটুতে শূল,
কোমরে শূল কতশত ব্যামোরা সব বাঁধলো বাসা-
শরীরখানার ভাজে ভাজে নিরানন্দের সূত্রসকল
কার্যরত। সকাল দুপুর রাত্রি আসে-তাদের মতো।
ঔষধ খাওয়ার সূচি আছে যথারীতি-ঔষধ প্রায়ই
পাইনা খুঁজে হাতের কাছে। ভুলো মনা ছেলে আমার
ভুলার বাতিক। কতো কাজে ব্যস্ত থাকে, গভীরতম
অবসাদে ঘরে ফিরে। কেমনে বলি বাছা আমার
কঠিন বোঝা বয়ে চলে! দু'টো শিশু মানুষ করা
নয়তো সোজা। কেমন করে ছয়টি ছেলে দুটো মেয়ে
উঠলো বেড়ে। এখন ভেবে ভয়েই মরি কেমন করে
সময় গেলো! এখন এরা দু'জন নিয়ে পাগল প্রায়
দিশেহারা। আমি বুড়ি একটি কোনে একাকিনী
বসে থাকি।নাড়ি ছেঁড়া ধনেরা সব বনবাসী অচিন গাঁয়।
মাঝে মাঝে মোবাইলে খবর নিয়ে জানান দেয় ;
আজকে শুধু অকারণে কান্না আসে-কাঁদতে হয়।
দূরে দূরে ছড়িয়ে থাকা ছেলেমেয়ে-একটি নজর
দেখতে তাদের ইচ্ছে হয়। মরার আগে এমন খায়েশ
পয়দা হয়-মা-দাদিরা বলে গেছেন মিথ্যা নয়।
জানালাতে তাকিয়ে থাকি শান্তিময়। নাতি-পুতি
কারো মোটেই দেখা নেই।সারাটা দিন নাতি-নাতনি
ব্যস্ত থাকে।স্কুল-কলেজ হুজুর-গুরু আসে যায়।
আমার মতো তাদের দু'য়ের বন্দী জীবন।মোটাফ্রেমের
চশমা চোখে টিপাটিপি-এটাই তাদের বিনোদনে অন্যতম
প্রাসঙ্গিক। জানলাতে হলুদ পাখি আসে একা,
অনুবর্তী পাশে বসে,টুস্কি মারে- চপল মেজাজ-
আমি চেয়ে চেয়ে দেখি হেঁসে ফেলি আচমকা।
আমি একা একটি কোনে পড়ে থাকি। কষ্ট লালন
করা নাকি একটা নেশা। না হয় দেখো গর্ভবতীর
কষ্ট নিয়ে ক্ষণের হিসেব চালিয়ে যাওয়া; ফলবতীর
নেশায় মেতে যমের সাথে লড়ে যাওয়া। হায়রে জীবন!
এখন কেন দেহশূলের একটু আঘাত সইতে ভারি
কষ্ট হয়!প্রৌঢ়া দেহ পুড়ে পুড়ে ভস্ম হল-
মন যে আজো জীবনেরে খুঁজে ফিরে অকারণে।
বাতাবিলেবুর দেহের মতো কুঁচকে যাওয়া শরীরখানা-
কবে কখন মুক্তি পাবে আল্লাহ মালুম।২৯/০৯/২০২০