ইহুদী-মুসলিম সমাচার
গতকাল জনৈক ভদ্রলোক বললেন,ফিলিস্তিন সংকট নিয়ে বিশ্বের মুসলিম জাতি উত্তাল। প্রতি নামাজে প্রার্থনায় ইজরায়েল রাস্ট্রের জন্য অভিশাপের বাণী দিচ্ছে।অথচ ইজরায়েল ক্রমাগতভাবে ফিলিস্তিনকে মারছে, তাদের ভূমি দখল করছে,ধ্বংসের দ্বারপ্রান্থে নিয়ে যাচ্ছে।আল্লাহ মালিক চেয়ে আছেন। তিনি নির্মোহ। বিগত সত্তর বছর ধরে চলে আসছে রক্তের খেলা।কিন্তু সমাধানের দেখা নেই।আসুন আমরা কারণ তালাশ করি।আমরা বিষয়টি নিয়ে সংক্ষেপে খোলাখুলি আলোচনা করি।
১।ফেসবুক ওয়াজিনের অনেকে প্রতিটি ওয়াজে কখনো স্বপ্নের মাধ্যমে,কখনো বিভিন্ন সম্ভবনা আলোকে ইমাম মেহেদীর আগমনী সংবাদের আশ্বাস দিচ্ছেন।আর বেশিদিন নেই।আল আকসা মুসলমানদের দখলে যাবে।
২।আমাদের বাড়িতে বাড়িতে, ঘরে ঘরে ইহুদী ফিলিস্তিন সংকট। প্রায় প্রতিটি বাড়িতে জায়গা জমি নিয়ে বিরোধ।একপক্ষ অবশ্যই অনিয়ম করে,জোর করে অন্যের জায়গা দখল করে।এদের না আছে পরকালের ভয়, না আছে আল্লাহর ভয়।তাহলে তারা কী করে ফিলিস্তিন সংকটে লাফ দিয়ে উঠে।আমরা নিজেরাই প্রথমে নায্যতার চর্চা করতে হবে।তবেই আল্লাহ আমাদের পক্ষে থাকবেন,আমাদেরকে বিজয়ী করবেন এবং আমাদের সত্যের সপক্ষে দাঁড়াবার শক্তি অর্জিত হবে।
৩।ইহুদিদের দুই হাজার বছরের স্বপ্ন ছিল, তারা ফিলিস্তিনে তাদের আবাস গড়ে তুলবে।তাদের স্বপ্ন সত্য হলো। তারা বলেন, ঈশ্বর তাদের প্রার্থনা কবুল করেছেন।এজন্য পবিত্র ভূমিতে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
৪।আরব বিশ্ব ইসরাইলের বিরুদ্ধে তিনবার যুদ্ধ করে পরাজিত হয়েছে; আর প্রতিবার এদিকে সেদিকে ভূমি হারিয়ে মুক্তি খুঁজেছে।প্রায় সারা বছর খুনাখুনি লেগেই আছে।নিরিহ শিশু,নারী আর বৃদ্ধ প্রাণ হারায়, শহীদ হয়। মুসলমান জাতি হাহুতাশ করে,সাহায্য পাঠায়,ফিলিস্তিন সাহায্য নিয়ে খায়,নতুন প্রাসাদ তৈরি করে।
৫।ফিলিস্তিনে নির্বাচন হয়।ভাগ বাটোয়ারা করে ক্ষমতা পায়- হামাস আর আব্বাসের দল।এখানে হিসেব নিকেশ আছে।জয় পরাজয় আছে।এজন্য প্রয়োজন সময়মত রক্তের।এবারে নির্বাচন হওয়ার সময় এগিয়ে এসেছে।আব্বাসের প্রয়োজন নির্বাচন পেছানো ; কারণ, এতে তার পরাজয়ের সম্ভাবনা আছে।এতএব, তাকে টিকিয়ে রাখতে হবে।কিভাবে? যেভাবে হবার সেভাবেই হলো।মাঝখানে আমরা হাহাকার করছি।এদিকে আব্বাস পরবর্তী ক্ষমতার আভাস পাচ্ছেন।এসকল মূল্যায়ন জেরুজালেম পোস্টের। আপনারা মিলিয়ে নিন।সাম্প্রতিক চলমান যুদ্ধে আব্বাসের ভূমিকা কী ছিল?
৬।কতো বছর এমনটা চলবে? মুসলিম বিশ্ব না আছে জ্ঞান সাধানায়, না আছে নৈতিকতা আর ন্যায্যতায়।তাদের অধিকাংশই বিলাসিতায় মগ্ন।তাহলে কি ফিলিস্তিনের মুসলিম এভাবেই শহীদ হবে?সমাধানের পথ কী?
মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ দেশই ইজরাইলকে স্বীকৃতি দেয়নি,দেবেনা এই শপথে ঐক্যমত্য আছে।আথচ কিছুদিন পরেই হয়তো ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের নাম স্বাধীন(!) রাস্ট্র তালিকা থেকেই মুছে যাবে।অর্থাৎ, পুরোটা ফিলিস্তিন ইজরেল দখলে নিয়ে যাবে।এদিকে মুসলিম বিশ্ব চিৎকার চেচামেচি করবে।কিছুই হবেনা।আমি মনে করি, মুসলিম বিশ্ব তাদের চিন্তাকে আর বিশ্বাসকে বিনির্মান করুক।তারা ইজরাইলকে একযোগে স্বীকৃতি দিয়ে তাদের সাথে কূটনীতিক সম্পর্ক স্থাপন করুক।ইজরাইল নিজেদের নিরাপদ ভাবতে থাকুক।পশ্চিমারা মধ্যপ্রাচ্যের সংকট জিইয়ে রাখার সুযোগ আর পাওয়া উচিত নয়। তাহলে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা অন্তত বন্ধ হবে।মুসলিম বিশ্বের নেতারা পশ্চিমাদের দাবার ঘুটি হয়ে থাকা উচিত নয়।তারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে যতবারই যুদ্ধ করেছে,প্রতিবারই পশ্চিমাদের গোপন ইন্দনে প্রভাবিত হয়েছে।আর পরাজিত হয়েছে।
৭।মুসলিম বিশ্ব মূলতঃ কূটনীতির খেলায় একেবাই অদক্ষ।তারা অদক্ষ সম্পদের বন্টনে আর সাম্যতায়, তারা অদূরদর্শী শিক্ষা ও গবেষণা খাতে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে।
আমি মনে করি, এদিক দিয়ে বাংলাদেশ কিছুক্ষেত্রে অগ্রগামী।সাম্প্রতিককালে, বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে গৃহীত সিদ্ধান্তে হট্টগোল হচ্ছে।আপনারা চিন্তা করুন, নির্যাতিত ফিলিস্তিনকেও ইজরায়েলের সাথে এক টেবিলে বসতে হয়,মিশরও বসে।এসবে অপরাধ নেই।সমাধান চাইলে বসতে হবে।
ক'দিন আগে আমার একজন প্রিয়ভাজন সারোয়ার তার ফেসবুক পোস্টে লিখেছে,দিনের শেষে আমরা ভালো সদাইটাই করি।তাই ইসরাইলের উৎপাদিত পন্য কেনা বন্ধ করার দাবী বা আবদার কেউ মানবেনা।কারণ, ইহুদীরা পন্য সকলের জন্য উৎপাদন করে,যা গুণে এবং মানে ভালো।এটিই বাস্তবতা।অতএব ব্যবসায় তারাই রাজত্ব করবে।আসুন,আমরা সেরা হওয়ার সাধনা করি, চেষ্টা করি।
এখন আমরা ফিলিস্তিনি জনগণের রক্ত চাইনা,চাইনা নির্মম মৃত্যুর মিছিল।আমরা শান্তির পৃথিবী চাই।আল্লাহ কবুল করুন।
২৯/০৫/২০২১