মঙ্গলবার, ২৫ জুলাই, ২০১৭

শিক্ষায় সৃজনশীলতা অর্জনে অন্তরায়সমূহঃপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ



শিক্ষায় সৃজনশীলতা অর্জনে অন্তরায়সমূহঃপ্রেক্ষিত বাংলাদেশ

সৃজনশীলতা একটি ইতিবাচক শব্দ ; যার মধ্যে নবতর সৃজনের প্রচেষ্টা লুপ্ত আছে।উন্নত উত্তরসূরী সৃষ্টিতে শিক্ষায় এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় ।বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার এই প্রত্যয়ে বহুতর পদক্ষেপ নিচ্ছে।তবুও কাংখিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হচ্ছে না।তাহলে এর পেছনে বাধা কোথায় ?আমরা তা বের করার চেষ্টা করব।

আমি এর পেছনে যে কারনসমূহ রয়েছে বলে মনে করি – তা হয়তো আপনারা কেউ কেউ চিন্তা করছেন ।

শিক্ষায় সৃজনশীলতা অর্জনে অন্তরায়সমূহঃ

১।সমন্বয়ের অভাব

২।মাঠপর্যায়ে অভিজ্ঞতাহীন ব্যক্তিবর্গ সুপারিশকারী

৩।শিক্ষকের যোগ্যতা এবং দক্ষতার অভাব

৪।যথাযত প্রশিক্ষণের অভাব

৫।ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত

৬।প্রতিষ্ঠান প্রধানের ভূমিকা

৭।পরীক্ষা পদ্ধতির ত্রূটি

৮।নিয়োগ ও পদোন্নতির ত্রূটি

৯।বিবিধ

 এখন আমরা উল্লিখিত সমস্যাগুলো ব্যাখ্যা করি ।

১। সমন্বয়ের অভাবঃসৃজনশীলতা অর্জনে সর্বাগ্রে প্রয়োজন ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনের সকল স্তরে সুষম সমন্বয় ।এই ক্ষেত্রে এটি অনুপস্থিত।শিখায় সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করার প্রত্যয় ঘোষণার সাথে সাথে শিক্ষক নিয়োগেও সতর্ক থাকা দরকার ছিল ।এইক্ষেত্রে আমরা দেখি এই সময়েও প্রাথমিক স্তরে ৬০% নারী কোঠা বরাদ্ধ রাখা হয় এবং এদের নুন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয় SSC পাস ।তদুপরি , আরও বিভিন্ন ধরণের কোঠা এবং দুর্নীতির কারণে তুলনামূলকভাবে কম যোগ্যতার শিক্ষক নিয়োগ পায়। আমরা জানি, সৃজনশীল মানুষই পারে সৃজনশীল মানুষ সৃষ্টি করতে।কিন্তু গুনগতমানে ঘাটতি নিয়ে শিক্ষকতায় আগমন  যাঁদের আগমন তারা কোনস্তরের গুণগতমান সমৃদ্ধ জাতি উপহার দিবেন তা প্রশ্নবিদ্ধ।ফলে কোটার বোঝা ত্রিশ বছর বইতে হবে।

 ২।মাঠপর্যায়ে অভিজ্ঞতাহীন ব্যক্তিবর্গ সুপারিশকারীঃমাঠপর্যায়ে অনভিজ্ঞ ব্যাক্তিবর্গ এবং কর্মকর্তাগণ শিক্ষায় সুপারিশকারী এবং প্রশাসনিক কর্মপদ্ধতি পরিচালনা করেন। যদিও শিক্ষকের কাজ  এবং শিক্ষায় কর্মপন্থা গ্রহণ একজন চিকিৎকের চেয়া কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ, শিক্ষার প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক স্তরের সাফল্যই একজন সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থীকে কাংখিত লক্ষ্যে নিয়ে যেতে পারে ।ফলে যা হবার তা হলো।

মাঠপর্যায়ে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসারগণের (মাধ্যমিক) অধিকাংশেরই শিক্ষায় (বিএড বা এমএড) ডিগ্রী ছিলনা।অন্যায্য সুবিধাপ্রাপ্ত হয়ে একটা গোষ্ঠী এঁদেরকে প্রকল্পে নিয়োগ দিয়েছিল ।কিন্তু দেশের কী লাভ হল? ফলে মাধ্যমিক পর্যায়ে সমস্যা চিন্থিত করে এর সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো এঁদের পক্ষে অসভবই হলঅন্যদিকে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অযোগ্যতা এবং দুর্নীতি শিক্ষায় গতিশীলতাকে স্তব্ধ করে দিয়েছে।সাম্প্রতি প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়ঃ বিদ্যালয়ে প্রতিটি নয়োগে সর্বোচ্চ দশ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লেন্দেন হচ্ছে।কারা এর পেছনে আছে কিংবা কারা সহযোগিতা করছে তা সর্বসাধারণের জানা বিষয়।এমনও দেখা গেছে – পছন্দের প্রার্থী নিয়োগ পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ না হওয়ায় নিয়োগ কমিটির সুপারিশ প্রহণ করা হয়নি।যদি এমন হয় কী করে সৃজনশীলতা অর্জিত হবে ?

৩।শিক্ষকের যোগ্যতা ও দক্ষতার অভাবঃএকটা সময় ছিল শিক্ষিত জনগোষ্ঠী সেবার ব্রত নিয়ে শিক্ষকতায় আসতেন। আমাদের ছাত্র জীবনেও আমরা এমনটি দেখেছি ।বর্তমানে অধিকাংশ ব্যাক্তি শিক্ষকতা পেশায় প্রজম্মকে স্বপ্ন দেখাতে আসেন না ; বরং স্বপ্ন হারিয়েই তাদের আগমন।ফলে ইচ্ছের দৈন্যতা তাদের গুণগত মানকে ধ্বংস করে দেয়এক্ষেত্রে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক এবং ইংরেজি বিষয়ের দেশব্যাপী বদনাম রয়েছে শিক্ষকের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নে সরকার বহুবিদ পদক্ষেপ নিয়েছে।বিগত প্রায় দশককাল ধরে তা চলে আসছেচদাতা সংস্থা থেকে গৃহিত ঋণ বা অনুদানের উপর ভিত্তি করে ট্রনিংসমূহ চলছে।উপর থেকে নিচে প্রায় সকল দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাক্তিবৃন্দ এর আওতায় এসেছেন।এখানেও সরকারি অর্থ হরিলুটের সংবাদ কমবেশি সবাই জানি।

ট্রনিং ম্যানুয়েল এবং ট্রেনারের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।অন্যদিকে প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত শিক্ষক-কর্মকর্তাগণ ট্রেনিং এ অর্জিত জ্ঞানকে পরবর্তীতে কর্মক্ষেত্রে এসে প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন ।অধিকাংশ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সৃজনশীন প্রশ্নপত্র প্রণয়নের অনুশীলন করেন না  কারণ,তাঁরা এর গুরুত্ব অনুধাবনে ব্যর্থ হচ্ছেন ।

শিক্ষকগণের অতিরিক্ত ক্লাসের চাপ থাকায় অর্জিত জ্ঞানের অনুশীলন করতে পারেন না বলে অভিমত দেন ।অধিকাংশ শিক্ষক সপ্তাহে ২৫ থেকে ২৭ টি ক্লাস নেন।ফলে তাদের পক্ষে প্রস্তুতি নেয়া সম্ভব হয় না ।সত্যি কথা হচ্ছে এই বিষয়ে বাধ্যবাদকতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

অন্যদিকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত বহু শিক্ষক আছেন যাদের বাংলা ভাষায় প্রয়োজনীয় দখল নেই ।যারা শুদ্ধ উচ্চারণে বাংলা বলতে যেমন ব্যর্থ তেমনি সৃজনশীল প্রশ্ন প্রনয়নেও অদক্ষ।

এর থেকে মুক্তির জন্য ইংরেজির মত ভাষাগত দক্ষতা প্রমাণের চারটি ক্ষেত্রের প্রতি নজর দেয়া উচিত। সর্বোপরি সৃজনশীল মনন ও মানসিকতা সম্পন্ন মানুষকে শিক্ষকতা পেশায় নিয়ে আসতে হবে ; তবেই কাংখিত সাফল্যের দেখা মিলবে।

৪।যথযথ প্রশিক্ষণের অভাবঃপ্রতিটি পেশাগত ক্ষেত্রে শিক্ষানবিশ হিসেবে সুনির্দিষ্ট  কর্মকাল ব্যয় করা প্রচলিত পদ্ধতি ।শিক্ষনবিশ হিসেবে সাফল্যের উপর ভিত্তি করে নতুন পেশাজীবিকে নিয়োগ প্রদান করা হয়।কিন্তু বাংলাদেশে শিক্ষকতায় এই ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠিত হয়নি।ফলে আগ্রহী শিক্ষকের সামর্থ ও প্রবণতা সম্পর্কে না জেনেই নিয়োগ প্রদান করা হয়।

নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকগণের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ; এর মাধ্যমে শিক্ষায় নবতর উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তির ব্যবহারসহ বহুবিদ জানা ও প্রয়োগের সুযোগ থাকে। সাথে সাথে পারষ্পরিক মিথষ্ক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষকদের দক্ষতা উন্নয়নের ক্রমিক পদ্ধতির প্রচেষ্টা নেয়া যেতে পারে।

ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতঃঅদ্যবদি বাংলাদেশে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত যৌক্তিক পর্যায়ে আনা সম্ভব হয়নি।ফলে শিক্ষক যাথযথভাবে শিক্ষার্থীদের শিখণ-শিক্ষণ প্রক্রিয়া চালাতে ব্যর্থ হন। অন্যদিকে শিক্ষার্থীর সামর্থ ও প্রবণতা বিবেচনা করে প্রয়োজনে শিক্ষ্ররথীদের একাদিক ভাগে বিভক্ত করে শেণি কার্যক্রম চালানো প্রয়োজন হয়।শিক্ষক স্বল্পতার কারণে তা সম্ভব হয়না।

প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্বঃপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক তার দক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে পুরো প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ উন্নত করতে পারেন।তার দূরদর্শিতা সৃজনশীলতাক অর্জনকে নিশ্চিত করতে পারে।এক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়।প্রশিক্ষিত শিক্ষককে সৃজনশীল প্রশ্নপত্র প্রনয়নে তিনি বাধ্য করতে পারেন ।কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না।

পরীক্ষা পদ্ধতির ত্রুটিঃ  বাংদেশে পরীক্ষা পদ্ধতি খুবই ত্রুটিপূর্ণ।দ’বছর ধরে পঠিত বিষয়সমূহের মূল্যায়ণ একসাথে করা হয়;যা শিক্ষার্থীর জন্য বোঝা স্বরুপ।এটি শিক্ষ্ররথীর মানসিক অবস্থাকে সংঘাতপূর্ণ করে দেয়।এরকম ভীতিকর ব্যবস্থায় সৃজনশীল পদ্ধতি সফল হতে পারে না। পাবলিক পরীক্ষায় মূল্যায়নকে সিমিত করে বিদ্যালয়ভিত্তিক মূল্যায়ণকে প্রতিষ্টিত করা উচিত ।সাথে সাথে সেমিস্টার পদ্ধতি চালুর বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করা উচিত ।

এখানে একটা বিষয় সকলের নজরে আনা উচিতঃআমাদের পাবলিক পরীক্ষার মাধ্যমে একজন শক্ষার্থীর শুধুমাত্র লেখার দক্ষতা পরিমাপ করা হয় ।কিন্তু তাও আজ প্রশ্নবিদ্ধ।দূর্নীতির আবর্তে নিমজ্জিত বোর্ডগুলো তার প্রমাণ রেখছে। 

নিয়োগ ও পদোন্নতির ত্রুটিঃ বাংলাদেশে শিক্ষক বাচাই থেকে শুরু করে নিয়োগ পর্যন্ত অধিকাংশই দূর্নীতিগ্রস্থ গোষ্ঠী কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত ।ফলে অসচ্চ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আগত শিক্ষকদের আনেকেই অযোগ্য ।অন্যদিকে সরকারি কিংবা বেসকারি কোন পর্যায়েই প্রতিযগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে পেশাগত পদোন্নতিকে প্রধান নিয়ামক হিসেবে রাখা হয়নি।  অতএব সরকার যদি সৃজনশীল পরবর্তী প্রজম্মের আভির্ভাব প্রত্যাশা করে তাহলে অবশ্যই শিক্ষক নিয়োগে সবচেয়ে বেশি সতর্ক থকতে হবে।

শিক্ষা একটা জাতির ভবিষ্যত নির্ধারণ করে দেয়।কিন্তু এই সত্যটিই আমরা অনুভব করতে অসমর্থ হচ্ছি ।ফলে শিক্ষা খাতে সরকারের বিনিয়োগ খুবই কম।এই আর্থিক দীনতা মানবিক বৈকল্য সৃষ্টি করছে।

সরকার দেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিয়ে যেতে হলে শিক্ষাখাতে নিনিয়োগ বাড়াতে হবে।দেশপ্রেমে উজ্জিবিত শিক্ষাবিদগণের সুপারিশ পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিতে হবে।তবেই উন্নত বিশ্বের কাতারে যাবার স্বপ্ন সত্যি হবে।

বর্তমানে শিক্ষাক্রমে কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে।মাধ্যমিক পর্যায়ে বাংলা উচ্চারণ রীতি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মহিলা শিক্ষক নিয়োগে সর্বনিম্ন যোগ্যতা উচ্চমাধ্যমিক করা হয়েছে।কিন্তু উন্নত জাতি বিনির্মানের জন্য আরো বহুদূর যেতে হবে।

          ---------------------




রবিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৭

জঙ্গিবাদের বিবর্তন



জঙ্গিবাদের বিবর্তন

বর্তমান মিডিয়ার কল্যাণে জঙ্গিবাদ  সর্বস্তরে সুপরিচিত শব্দ।এই এক আতংকের নাম।বিশ্বব্যাপী বিস্তারিত এই জঙ্গিবাদের সাথে ইসলামকে অন্যার্যভাবে এক করে দেখা হচ্ছে।যদিও ইসলামি শিক্ষা  ও দর্শণ কোনভাবেই জঙ্গি বাদের পরিপূর্ণ বিরোধী।তা হলে কারা এবং কেন বিশ্বব্যাপী এই আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।
    জঙ্গিবাদ আদিযুগেও ছিল।শুধু নামে ভিন্নতা ছিল।কর্ম প্রক্রিয়াতেও ভিন্নতা ছিল;কারণ তখনকার যুগে প্রতিপক্ষকে আঘাতের ধরণ এবং  অস্র ব্যাবহার আজকের মত ছিল না।যদি নিরস্র মানুষকে বা মানুষের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বস্তুর উপর অস্রধারি সম্প্রদায় বা গোষ্ঠী সংঘবদ্ধভাবে বা এককভাবে হামলা করে এবং তাদের জান-মালের স্থায়ী বা অস্থায়ী ক্ষতি করে তাহলে তারা স্পষ্ট সন্ত্রাসী।জঙ্গির কাজ ফোজদারি আদালতে বিচারযোগ্য।
  Terrorism-এর যে সংজ্ঞা অভিধানে দেয়া আছে তা রাজনৈতির ক্ষমতার সাথে সম্পর্কযুক্ত।কিন্তু বর্তমানে জঙ্গির কর্মকাণ্ড এতবেশি জটিলতাপূর্ণ যে এর পারিভাষিক অর্থের আরও ব্যাপ্তি প্রয়োজন।এজন্য আমি জঙ্গিবাদের শব্দগত ব্যাখ্যায় না গিয়ে ব্যাবহারিক অর্থকেই প্রাধ্যান্য দিচ্ছি।আমি মনে করি হজরত আদম(আঃ-এর পুত্র কাবিল  কর্তৃক হাবিল নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে জঙ্গি বাদের সৃষ্টি।মানব প্রজম্ম শেষদিবস পর্যন্ত এর মুখোমুখি হবে।
  বিশ্বের ইতিহাস খুঁজলে দেখা যায় ,অধিকাংশ ক্ষেত্রে শক্তিধর রাষ্ট্রশক্তি বা ক্ষমতাসীন ব্যাক্তিবর্গ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সৃষ্টিতে প্রত্যাক্ষ বা পরোক্ষভাবে মদদ এবং সর্বপ্রকার সহযোগিতা দেয়। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং ভিন্নমতের পন্ডিতসমাজ এদের অন্যতম টার্গেট হয়।তারা হত্যার শিকার হয়।এই প্রবণতা আগেও ছিল ;বর্তমানেও আছে;দ্বশ আর সমাজ ভিন্ন।শাসকশ্রেণি অধিকাংশ ক্ষেত্রীসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সুকৌশলে ধর্মীয় লেবাসে আবদ্ধ করার প্রয়াস পেয়েছে এবং কিছুটা সফলও হয়েছে।অন্যদিকে আমজনতা জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে শাসক শ্রেণির প্রচারিত প্রপাগান্ডাকেই সত্য বলেই জেনেছে।
   ইসলামের স্বর্ণযুগে হজরত ওমর(রাঃ),হজরত ওসমান(রাঃ),হজরত হাসান(রাঃ) এবং হজরত হোছাইন(রাঃ) মূলত সন্ত্রাসী হামলার শিকার হয়েছেন।পরবর্তী যুগে ইসলামী বিশ্বে কতিপয় দার্শনিক সম্প্রদায় সৃষ্টি হয় ;তাদের দার্শনিক মতবাদও বহু নিরীহ মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়।এবং এসকল দার্শনিক মতবাদও তৎকালীন  শাসকশ্রেণির পৃষ্ঠপোষকতায় ঘড়ে উঠে।ফলে ভিন্নমতের যাত্রিগণ অনিবার্যভাবে নির্যাতনের শিকার হয়।রাজশক্তি যখন ভিন্নমতের গোষ্ঠীকে যুক্তিতে হারাতে না পারে তখন আইনি প্রক্রিয়ার পথে হাটে।কারণ ,এই পথ তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের পথকে সহজ করে দেয়।যখন দেখে আইনি প্রক্রিয়া দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সৃষ্টি করবে তখন গুপ্ত হত্যার পথ ধরে।মানুষের “ইচ্ছার স্বাধীনতার” বিষয়কে ইস্যু করে আব্বাসীয়রা বহু মানুষের মৃত্যুকে বৈধতা দিয়েছে।
   রাষ্ট্রক্ষমতাকে নিষ্কন্টক করার মানসে ভিন্নমতের গোষ্ঠীগুলোর দার্শনিক দ্বন্ধকে ব্যবহার করা হয়।আরব অঞ্চলে গোত্রীয় আভিজাত্য কখনো ক্ষমতা দখলে ব্যবহার করা হয়েছে;কখনো ধর্মীয় গোষ্ঠীসমূহের দ্বন্ধে রুপান্তর করা হয়েছে।উমাইয়া খেলাফতের সময় শিয়া মতালম্বিগণ বড় ধরণের সংকটের মুখোমুখি হয়।তৎকালীন সুন্নি গবেষকগণ শিয়াদের মুসলমান হিসেবেই গণ্য করতেন না।তাদের ৭০ টি দলের মাঝে একটিকে ইসলামের কাছাকাছি বিবেচনা করা হত;কিন্তু তারাও কাফের বলেই বিবেচিত হত।ফলে তারাও রাষ্ট্রিয় সন্ত্রাসের শিকার  হত।বর্তমান আরববিশ্বে যুদ্ধ ও সংঘাতের সমাপ্তিহীনতার অন্যতম কারণও ধর্মীয় বৈরিতা। খ্রিষ্টান সমাজে ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টেন্ট মধ্যকার সংঘাত সর্বজনবিধিত।তবে বর্তমানে তাদের পারষ্পরিক শান্তিময় পরিবেশ বিরাজ করছে।

ভারতে জঙ্গিবাদ


ভারতবর্ষে ওহাবি আন্দোলন শুরু হলে এ অঞ্চলে কেয়ামি-বেকেয়ামি দুই ধারার মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাতপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হয় এবং দীর্ঘকাল তা বিক্ষুব্ধ অবস্থায় থাকে।বর্তমানে খারেজি মাদ্রাসা হিসেবে পরিচিত এবং দেওবন্দ উলুমের অনুসারি যে সম্প্রদায় আছে যাদেরকে সরকার নিয়ন্ত্রিত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মুহাদ্দেসগণ যথার্থ ধর্মীয় নের্তৃত্ব বলে মনে করেন না।এই মতবাদের অনুসারিরাই দোয়েল চত্তরে সমবেত হয় এবং সংঘাতের মাধ্যমে রাষ্টের নিয়ন্ত্রন নেয়ার চেষ্টা করে।
  বিশাল গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে জঙ্গিবাদ শক্ত ভীতের উপর দাঁড়িয়ে আছেএখানে রাজনৈনিক ক্ষমতা পাওয়ার লক্ষ্যে বিজিপি অনুসারি ছাত্রসংগঠন যুবসংগঠন বিশেষ করে আরএসএস সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠন রাজনৈতিক ক্ষমতা পাওয়ার অন্যতম উপায় হিসেবে মুসলিম নিধনকেই উপলক্ষ করেনবাবরি মসজিদ ভাঙ্গনসহ বিভিন্ন দাঙ্গা সৃষ্টি মূলত রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের কৌশল
জঙ্গিবাদ ও স্বাধীকার আন্দোলন
   রাজনৈতিক সচেতনতা থেকে নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য একধরনের প্রতিশ্রুতি মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয়;যা তাদেরকে সশস্র সংগ্রামের দিকে ধাবিত করে।শোষিত জনগোষ্ঠি যখন শাসকের বিরুদ্ধে সশস্র সংগ্রামে লিপ্ত হয় তখন শাসকশ্রেণী তাদেরকে জঙ্গি বলে অভিহিত করে।অন্যদিকে সশস্র সংগ্রামিগণ নিজেদেরকে স্বাধীনতাকামী বলেই বিশ্বাস করে।আসলে পরাজিত স্বাধীনতাকামীরা বরাবরই জঙ্গি নামধারি।রাজনৈতিক ভাগাভাগির খেলায় একসময়ের মুক্তিকামী সংগ্রামী নকশালী এবং পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যগণ জঙ্গি আর সন্ত্রাসী হিসেবেই স্বীকৃত হয় এবং নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে বিলুপ্তির পথে যায়।এরাও উলটোপথে রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়ার পরিকল্পনা করে;কিন্তু ব্যররথ হয়।পরবর্তিতে স্বাধীনতা উত্তর জাসদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এক রক্তাক্ত অধ্যায়ের সূচনা করে।সে ইতিহাস সকলেরই জানা।রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলই জঙ্গিবাদের মূল কারণ।প্রথাগত বাহিনী এবং রক্ষীবাহিনীর কাছে পরাজিত হলেও রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারনে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।কিন্তু এদের লাগানো অগুনেই বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুকে নিশ্চিত করেছে বলে অনেকেই অভিযোগ করে।
জঙ্গিসৃষ্টিতে সহায়কশক্তি
   জঙ্গিবাদের উৎপত্তির পেছনে পেতিটি দেশের প্রশিক্ষিত বাহিনীর একটা অংশের হাত থাকে।রাজনৈতিক  সংস্কৃতিতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যথার্থ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ না পেলে প্রথাগত প্রশিক্ষিত বাহিনী হস্থক্ষেপ করে ।বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ বিস্তারে এই বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত একটা অংশের হাত বরাবরই ছিল।পরবর্তিকালে ঐতিহাসিকগণ নিশ্চয় এই বিষয়ে লিখবেন।তাছাড়া বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর প্রতি জনসাধারণের ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে যাকে পূঁজি করে সামরিক কর্তারা ক্ষমতায় বসেছে।
  রাষ্ট্রের প্রতিটি সেক্টরেই বিভ্রান্ত আর লোভী ব্যক্তি থকতে পারে ;এরাই বাইরের অর্থ আর সুযোগের জন্য একটা গোষ্ঠী সৃষ্টি করে।বাংলাদেশের কয়রকটা রাজনৈতিক দল কৌশলে প্যারালাল সশস্র গোষ্ঠী সৃষ্টি প্রচেষ্টা চালায় বলে অভিযুক্ত ।বাংলা ভাই অধ্যায় এবং দশট্রাক অস্রের বিষয়টি সকলেরই মনে আছে।এর বাইরে কী আছে ,কী হচ্ছে তা আমাদের অজানা।এদের দেশব্যাপী নেটওয়ার্ক ছিল;অস্রও ছিল।বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল অস্র পাচারের সহজতম রুট।দীর্ঘদিন এদিকে কারো সতর্ক নজর ছিলনা।বিগত বি এন পি শাসনামলে নোয়াখালির পরিকল্পিত বনাঞ্চলে এরকম অস্রধারি গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণে আনতে শেষপর্যন্ত তিনবাহিনীর যৌথ অক্রমনেরর প্রয়োজন হয়েছিল।
                  

জঙ্গিবাদের অর্থনীতি

নিয়মতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক সরকার জঙ্গিবাদ সৃষ্টির পথে অন্তরায়।ফলে গণতান্ত্রিক সরকারই তাদের মূল টার্গেট এবং শত্রু;এই ধরণের সরকার উঠখাত করার মধ্য দিয়েই তারা অগ্রসর হয়।এজন্য কালোবাজারি,হুন্ডিব্যবসায়ী,মাদক ব্যবসায়িরা জঙ্গি সৃষ্টিতে অর্থ বিনিয়োগ করে।আইন-শৃংখলারক্ষাকারি বাহিনীকে জঙ্গি দমনে ব্যস্ত রেখে এরা এদের কর্ম হাসিল করে। করেআইন-শৃংখলারক্ষাকারি বাহিনী যদি এসকল অবৈধ গোষ্ঠীকে ধ্বংস না করে তাহলে দেশ সমূহ বিপদেরর মূখে বুঝতে হবে
জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখার কথা  জাতীয় সংসদেরতারাই তাদের প্রজ্ঞাপূর্ণ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এর সমাধানের উপায় বের করতে সমর্থকিন্তু প্রায় ৭০% সাংসদ যেখানে ব্যবসায়ী এবং অনেকের ব্যক্তি জীবনের অবৈধ কর্মকাণ্ড নিয়ে অভিযোগ আছে সেখানে সংসদ কতটুকু সাফল্য দেখাবে তা অনিশ্চিততবে আশার কথা এই যে ,বাংলাদেশের শিক্ষিত নতুন প্রজন্ম জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার অততব এদেশ থেকে অচিরেই জঙ্গি  নির্মূল হবে
      বর্তমানে জঙ্গিবাদের পেছনে ব্যাপক অর্থ বিনিয়োগ হচ্ছেএর সাথে জড়িত আছে বিশ্বের ক্ষমাওতাধর রাষ্ট্রগুলোতারা কেহ প্রত্যক্ষভাবে ,কেহ পরোক্ষভাবেএজেন্টের মাধ্যমে জঙ্গিকর্মকান্ডে অর্থ সরবরাহ করছেসাথে সাথে  তারা কয়েকগুণ বেশি লাভবান হচ্ছেমধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের প্রতিটি ফ্রন্টেই ক্ষমতাধর রাষ্ট্রসমূহ জড়িতএর জন্য কোন জবাব্দিহিতার প্রয়োজন নেইতুরস্ক তার ভাবাদর্শের দেশগুলো আই এসের থেকে নাম মাত্রমূল্যে  জ্বালানী তেল কিনছেআই এসের মত জঙ্গি গোষ্ঠী না থাকলে এটা অসম্ভব হতো ফলে এদের সৃষ্টিতে তুরস্কসহ আরবের বেশকয়েকটি শক্তিশালী রাষ্ট্র জড়িত আছেঅন্যদিকে জঙ্গিবাদ সৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় অর্থের যোগানদাতা হচ্ছে ইজরাইলতার নিজের নিরাপত্তার জন্য এটা প্রয়োজন বলে সে মনে করেকারণআরব দেশগুলো  মারামারি বন্ধ রেখে যদি চল্লিশ বছর সহুবস্থানে থাকতে পারে তাহলে আরব বিশ্বের দেশসমূহ ইজরাইলের জন্য হুমকী হয়ে দাঁড়াবে এবং হয়তো ইজরাইল নামটিও মুছে যাবেফলে যে ভাবে হোক মুসলিম বিশ্বে জঙ্গি সৃষ্টি প্রয়োজনএরা কেহই মুসলিম নয় ;ইয়াহুদী

                                               জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে বাংলাদেশ কোন কৌশল নেয়া উচিত?
অতীতে এমন কোন সময় আসেনি যা আজকের বাংলাদেশের অবস্তার সাথে তুলনীয় হতে পারেবাংলাদেশ আজ স্বশাসিত এক অনন্য ভূমিএত গৌরবের দিন বাঙালির  অতীতে আর কখনোই আসেনিপ্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিত্যদিনের আলোচ্য বিষয় এটি হওয়া উচিতধর্মীয় লেবাসে বাংগালি বরাবরই নির্যাতিত হয়েছেঅতএওব জীবনের প্রতিটি স্তরে এই সত্যের বোধ বিস্তৃত হওয়া উচিত এবং এটি সকল প্রকার নেতিবাচক কর্মকাণ্ড থেকে মুক্তি দিতে পারেঅফিস-আদালতে ঘুষ-দুর্নীতির বিস্তার রোধে সর্বত্তোম উপায় হচ্ছে সবার মাঝে স্বদেশ প্রেমের অনুভূতি সৃষ্টি করাঅন্যথায় এরাই সরকারের সাফল্যকে বাধাগ্রস্ত করতে অর্থ বিনিয়োগ করবেযখনই সরকার ন্যার্যতাকে প্রাধান্য দিবে তখনই এরা সরকারের প্রতিপক্ষ হবেপ্রতিটি জুমা মসজিদে এই বিষয়ে বয়ান করা উচিতআজকের বাংলাদেশ হওয়াতেই আমরা বুক উচিয়ে চলতে পারি
  স্বদেশ প্রেমে উজ্জ্বীবিত সেনাবাহিনী কোন অবস্থাতেই রাষ্ট্র ক্ষমতায় ভাগ বসাতে চায়না কারণ,সেনা শাসন কখনো দেশের সামগ্রিক কল্যাণ বা উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারেনাএই শসকদের জবাবদিহিতা থাকেনাএই ধরণের শাসককূল দেশের জন্য অভিশাপ স্বরুপএরা ক্ষমতায় যাওয়ার প্রস্তুতিপর্বে খুন-ঘুম আর অনিশ্চিত মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে আসে যাতে আমজনতা ক্ষমতাসীন গণতান্ত্রিক সরকারের প্রতিপক্ষ হয়ে পড়েতারপর চূড়ান্ত কৌশল আর কাজ!
     সশস্রবাহিনীর পেশাদারিত্বের অভাব জঙ্গি সৃষ্টির অন্যতম কারণপাকিস্থানের সেনাবাহিনীর মধ্যে এটি প্রবলভাবে উপস্থিতকারণ,তারা পাকিস্থানের সবচেয়ে বড় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারফলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা না হওয়ার পেছনে তাদের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি এবং তাদের ছায়াতলেই পাকিস্থানের জঙ্গিবাদের জন্ম
    বাংলাদেশের পুলিশ বিভাগ এককভাবে জঙ্গিবাদ মোকাবেলা করতে সক্ষম বলে আমার বিশ্বাসএরা দেশের সর্বস্তরের জনমানুষের সাথে কারণে অকারণে যুক্ত আছেশুধুমাত্র প্রযুক্তিগত উন্নত প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত হলে তারা সহজেই সফল হতে পারবে
                                                                                          ------

                                                    



Printfriendly

Featured Post

জাতি নির্মাণে গল্পযোগ

  জাতি নির্মাণে গল্পযোগ   ১ ।   মানুষ সামাজিক জীব।তারা পরিবার গঠন করে।তারপর সে-ই পরিবার একটি গোষ্ঠীতে রুপান্তরিত হয় এবং ধীরে ধীরে একাধিক গোষ...