বুধবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১৮

বৈষম্যের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের চলমান আন্দোলন

বৈষম্যের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের চলমান আন্দোলন

বাংলাদেশের আম জনতার সিংহভাগ তাদের অধিকার সম্পর্কে জানে না; কারণ তাদেরকে এ সম্পর্কে জানতে দেয়া হয়না।সরকার আসে, সরকার যায়।সাধারণ মানুষের লক্ষ্য অপূর্ণ থেকে যায়।মানুষের মৌলিক অধিকার পুরনের পথে বহু অনাকাঙ্ক্ষিত বাধা সৃষ্টি হয়;এসব সৃষ্টি করে মূলত সরকারের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। বর্তমানে শিক্ষক সমাজ আন্দোলন করছে।এটা যতটুকু না তাদের স্বার্থসাধনের জন্য, তার চেয়ে বেশি দীর্ঘস্থায়ী পরিবর্তনের জন্য।যাদের জন্য এবং যাদের সন্তানদের জন্য শিক্ষায় বৈষম্য বিলুপ্ত হওয়া প্রয়োজন তারা তা অনুধাবন করছে না।একই দেশের নাগরিক, একই দেশের মাটি-জলে মানুষ, একই দেশের সন্তান হয়েও তারা অবহেলা আর শোষণের শিকার।রাষ্ট্রব্যবস্থার অন্যায্য আচরণের কারণে দেশের প্রায় ৯৭%মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থী সরকারি সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বেসরকারি শিক্ষা কতটুকু বঞ্চিত তা কাগজে কলমে হিসেব করলে সকলের চোখ কপালে উঠবে।যদিও বৈশ্বিক বিচারে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও যৌক্তিক সহযোগিতা পায়না।এখন অন্তত মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাকে জাতীয়করণ করা উচিত।এটা কিছুটা হলেও গ্রাম এবং শহরের মাঝে বিদ্যমান বৈষম্য নিরসনে ভূমিকা রাখবে।আমরা সচেতন রাজনৈতিকদের ভূমিকা প্রত্যাশা করছি।
আমাদের অগ্রগামী দলের একটা সাহসী অংশ ঢাকা শহরে অবস্থান করছে।তারা সত্য অনুধাবন করেছে।আরেকটা অংশ লেজুড়বৃত্তিতে স্বস্তি পাচ্ছে।কোনটা সম্মানজনক কর্ম, তা আমরা বুঝি।আমাদের মধ্যে যারা এখনো সত্য অনুধাবনে ব্যর্থ হচ্ছেন তাদের আগামীদিনগুলো সম্মানের হবে বলে অনেকে মনে করেন না।
আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজম্মের কাজে মাথা উচু রাখতে চাই।তাই, বিশ্বাস করি সংগ্রামই লক্ষ্য অর্জনে নিশ্চয়তা দেয়।আসুন সকলেই মাধ্যমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণে সংগ্রাম অভ্যাহত রাখি।1/24/18

জাতীয়করণের দাবী এবং শিক্ষক নেতৃত্বের টারনিং পয়েন্ট

 জাতীয়করণের দাবী এবং   শিক্ষক নেতৃত্বের টারনিং পয়েন্ট

 অধিকারের বিষয়টি যারা বুঝতে ব্যর্থ  হলে  নেতৃত্ব আর কতৃত্ব হারাতে হয়।নেতা কর্মীর মতামত শুনবেন,সত্য উপলব্ধি করবেন, তারপর উপযোগী সিদ্ধান্ত নিবেন;এটাই যুক্তির কথা।অনেক সময় অতি উৎসাহী কর্মীরা অন্যায্য আচরণ করে,অসম্ভবের পেছনে ছোটে তখন নেতার কাজ হচ্ছে তাঁর দার্শনিক প্রজ্ঞা দিয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা।কিন্তু নেতা যদি কর্মীর মনের ভাষা বুঝতে ব্যর্থ হন,তাহলে সমূহ বিপদ।
বলছিলাম দেশব্যাপী চলমান শিক্ষক আন্দোলনের কথা।মাত্র কিছুদিন আগেও শিক্ষক ফোরাম নামে কোন সংঘটনের অস্তিত্বও ছিলনা।বর্তমানে তারাই দুর্দশাগ্রস্থ শিক্ষকসম্প্রদায়ের জন্য অনশনে রয়েছেন।তারা শিক্ষায় বৈষম্য নিরসনের জন্য জীবনপণ সংগ্রামে লিপ্ত।এজন্য তারা শিক্ষাকে বিশেষ কতে মাধ্যমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণের দাবী জানাচ্ছে।   আমারা দেখেছি এদের মধ্যে অধিকাংশই শিক্ষকতা পেশায় নবীন।অনেকে নিবন্ধন পরীক্ষার মধ্যদিয়ে এ সম্মানজনক পেশায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।তারা তাদের শ্রম এবং প্রত্যাশা সম্পর্কে খুবই সচেতন।সঙ্গত কারণে তারা প্রথমে তাদের অগ্রজদের নেতৃত্ব স্বীকার করেছে।কিন্তু বর্তমানে তাদের বোধোদয় হয়েছে;এভাবে চললে তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।হয়তো তাদের শিক্ষা এবং তথ্যগত উচ্চ যোগ্যতা তাদেরকে চ্যালেঞ্জ নেবার ক্ষেত্রে সাহসী করেছে।কিন্ত প্রশ্ন হল:তারা কি ভুল করছে?অথবা তারা কী ভুল করছে? যেসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক চলমান সংগ্রামের সাথে একমত নন,তারা দাবী আদায়ের সংগ্রামে পিছিয়ে আছেন।ফলে তারা তাদের নবীন সহকারীদের হুমকী দমকী দিচ্ছেন এবং অসদাচরণ করছেন।কিন্তু এটা তো সত্য যে যারা ঢাকায় এবং দেশের অন্যান্য স্থানে দাবী আদায়ের জন্য সমর্থন দিচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্য সৎ।
এমতাবস্থায় যে সকল শিক্ষক নেতৃত্ব এবং সংঘটন দাবী আদায়ের এই সংগ্রামে পিছিয়ে আছে তারা অচিরেই নেতৃত্ব হারাবেন।শিক্ষকসম্প্রদায় একেবারেই বোকা নয়,তারা তাদের নেতাদের আচরণ নিয়ে আলোচনা করছেন।অল্পকালের মধ্যেই যে দেশের সকল উপজেলায় ফোরামের সমর্থক গোষ্ঠী কমিটি করবেনা তার নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না।অতএব,বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির নেতাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ :তাঁরা যেন আগামী দিনের জন্য নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করার পদক্ষেপ নেন।1/24/18

সোমবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১৮

বাংলাদেশে শিক্ষায় বৈষম্যের স্বরূপ

বাংলাদেশে শিক্ষায় বৈষম্যের স্বরূপ

সাম্প্রতিক কালে বিভিন্ন স্তরের শিক্ষকদের মধ্যে দাবী দাওয়া নিয়ে আন্দোলন চলছে।তাদের প্রতিটি সংগঠন শিক্ষায় বিদ্যমান বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে এবং একটা পর্যায়ে এসে সরকার তাদের দাবী মেনে নেয়ার আশ্বাস দিচ্ছে।পরবর্তী ফলাফল কী হবে তা আমরা জানিনে কিন্তু শিক্ষকদের দাবীর স্বপক্ষে যথেষ্ট যুক্তি আছে।
শিক্ষক সংগঠনের চলমান আন্দোলন :  মাত্র কয়েকদিন আগে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের সংগঠন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনশন করেছিল।তাদের অভিযোগ ছিল বিদ্যমান    বৈষম্য নিয়ে ;যেখানে সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেলের অবস্থান প্রধান শিক্ষকদের চার ধাপ নিচে।এটা নিরসনের দাবীতে তারা অনশন শুরু করে।অত:পর এম পি ও হীন শিক্ষকগণ অনশন শুরু করে।  সরকার তাদের দাবী  মেনে নেওয়ায় অনশনের ইতি ঘটে। এখন অনশনে নেমেছে বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সংগঠন ;তাদের দাবী হচ্ছে :মাধ্যমিক শিক্ষাকে সরকারিকরণ করে পরিপূর্ণভাবে বৈষম্য দূরীকরণে পদক্ষেপ  নেয়া এবং তা বাস্তবায়ন করা।এসব বিছিন্ন ঘটনা শিক্ষা ব্যবস্থায় অস্থিরতা এবং বিশৃঙ্খলাকে স্পষ্ট করে দেয়। এ সকল অবস্থা সমস্যাক্রান্ত চাকুরীজীবীদের প্রতিক্রিয়া মাত্র;কিন্তু এটা শিক্ষায় বিদ্যমান সকল প্রকার বৈষম্যকে উপস্থাপন করে না।বাংলাদেশে শিক্ষাক্ষেত্রে যে সকল বৈষম্য দৃশ্যমান হয়;সেগুলো দু'টো পর্যায়ে দেখা যায়।
বৈষম্য   বিদ্যালয় পর্যায়ে এবং প্রশাসনিক পর্যায়ে দেখা যায়।প্রথমে আমরা প্রশাসনিক পর্যায়ে বৈষম্যগুলো চিহ্নিত করি।এগুলো হল:
 ১.শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধরণ:বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক শিক্ষা হিসেবে আইনসিদ্ধ করা হয়েছে।এ স্তরে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়,বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইবতেদায়ি মাদ্রাসা, কিন্ডারগার্টেন, ইংরেজি মাধ্যম স্কুল,নূরানি মাদ্রাসা,ক্যাডেট মাদ্রাসা ইত্যাদি বিবিধ নামের এবং ধরনের বিদ্যালয়।সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকার কর্তৃক পুরোপুরিভাবে নিয়ন্ত্রিত;শিক্ষার্থীদের বই-পুস্তক, প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন, শিক্ষকদের বেতন-ভাতা সকল কিছু সরকার দেখবাল করে।এখানে শিক্ষার্থীদের বেতন নেই;বরং পিছিয়ে পড়া পরিবারের ছাত্র ছাত্রীদের উপবৃত্তি প্রদান করে।ইবতেদায়ি মাদ্রাসাসমূহের মধ্যে অধিকাংশই এম.পি.ও ভুক্ত;অর্থাৎ এ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সরকারি বিধি অনুযায়ী সরকারি অর্থ প্রদান করে।এ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতই সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকে।তবে উন্নয়নকাজ,  ট্রেনিং এবং বেতনের স্কেলে সরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে এসকল প্রতিষ্ঠানের বৈষম্য রয়েছে।অনেক ইবতাদায়ি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের থেকে বেতন নেয়া হয়।অন্যদিকে,কিন্ডারগার্টেন, নূরানি মাদ্রাসা এবং ক্যাডেট মাদ্রাসাসমূহে (যেগুলোর মানে ইতোমধ্যে পরিবর্তন করা হয়েছে) শিক্ষার্থীদের থেকে প্রচুর পরিমানে অর্থ নেয়া হয়।অধিকাংশ উপজেলা সদরের কেন্দ্রে অবস্থিত কেজি স্কুলের প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের বেতন ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা,গ্রামীণ পর্যায়ে এটা ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা,নূরানি মাদ্রাসায় বেতন ২০০০টাকা পর্যন্ত। কিন্তু কিন্ডারগার্টেন এবং নূরানি মাদ্রাসায় শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনপ্রকার বাধ্যবাধকতা নেই এবং শিক্ষকদের বেতন নির্ধারণের ক্ষেত্রেও কোন প্রকার মানদণ্ড নেই।এ সকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন ১৫০০ টাকা থেকে শুরু হয়।শিক্ষাগত যোগ্যতা এস এস সি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত থাকে।এদের অধিকাংশ টিউশনি করে অর্থনৈতিক ঘাটতি পূর্ণ করার চেষ্টা  করেন।অন্যদিকে,সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক বিধি অনুযায়ী সরকারি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন।
তাহলে আমরা দেখলাম:একই শিক্ষাস্তরে কর্মরত শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতার যেমন হেরফের রয়েছে তেমনি রয়েছে বেতনও বৈষম্য। এর ফলে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা; এতে শিক্ষার্থীর শিক্ষার গুণগত মানের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে এবং মানসিক বিকাশও প্রত্যাশিত মাত্রায় অর্জিত হচ্ছেনা।অথচ এরা প্রাথমিক স্তরের কয়েক লক্ষ (প্রায় এক কোটির কাছাকাছি)  শিক্ষার্থীর পঠনপাঠনে যুক্ত আছেন।

মাধ্যমিক স্তরে বৈষম্যের বিভিন্নতা:

মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরে  বৈষম্য আরো ব্যাপক। দেশের প্রায় সত্তর লক্ষ(১৯১৬ সালের হিসেবে) মাধ্যমিক শিক্ষার্থীর মাত্র পাঁচ শতাংশেরও কম শিক্ষার্থী সরকারি বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করে।বাদবাকিরা বেসরকারি বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করে।সরকারি বিদ্যালয়সমূহ শহরাঞ্চলে অবস্থিত। ফলে অধিকতর স্বচ্ছল এবং শিক্ষিত সম্প্রদায় এর সুফল ভোগ করছে।সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধার উত্তম অংশ  থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সরকারি উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।আমরা দেখেছি উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে এমন অনেকে আছে যারা উপবৃত্তি পাওয়ার যোগ্য নয়।আবার,অনেক যোগ্য শিক্ষার্থী উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।অভিভাবকদের অনেকে এজন্য শিক্ষকদেরকে অভিযুক্ত করেন।অনেক পরিবারে দু'য়ের অধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত ;তারাও উপবৃত্তির আওতায় আসেনি।উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সরকার টিউশন ফি দেয়;এটি সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের জন্য নির্ধারিত টিউশন ফি-এর অর্ধেকের চাইতেও কম।ফলে বিদ্যালয়ের আয় হ্রাস পাচ্ছে;যা বিদ্যালয় পরিচালনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
সরকারি বিদ্যালয়সমূহে ছাত্রছাত্রীদের বেতন গতবছর পর্যন্তও ২০টাকার কম ছিল।অন্যদিকে বেসরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে এটি ৭০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০ পর্যন্ত হয় এবং প্রাইভেট বিদ্যালয়ে এটি ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত উঠানামা করে।অতএব সন্তানদের পড়ালেখা শেখাতে গিয়ে অভিভাবকেরা রীতিমত হিমসীম খাচ্ছে।যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা অধিক বেতন দিয়ে পড়ালেখা করছে সে সকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষিকদের  বেতন ভাতা একেবারেই কম।
বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয় এবং সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রায় একই।কিন্তু সরকারি সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তির দিক দিয়ের বৈষম্য ব্যাপক। যদিও এরা একই শিক্ষাস্তরের ছাত্রছাত্রীদের পাঠদান করেন।বেসরকারি শিক্ষকদের পদোন্নতির সুযোগ নেই বললেই চলে;অন্যদিকে সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষকগণও উচ্চ যোগ্যতার অধিকারী হলেও দীর্ঘসময় ধরে একই পদে কর্মরত থাকতে বাধ্য হন।অনেকে সহকারী শিক্ষক থাকা অবস্থায় অবসরে গমন করেন-যা একজন দেশ নির্মাতার জন্য অপমানকর। যদিও সরকারি অন্যান্য চাকুরীতে যথাযথভাবে পদোন্নতির প্রক্রিয়া গতিশীল রয়েছে।এটাও শিক্ষাক্ষেত্রে বড় ধরনের বৈষম্যের প্রমাণ।

২.সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের আচরণ :
শিক্ষাপ্রশাসনে কর্মরত কর্মকতা- কর্মচারীদের অদক্ষতা এবং অসহযোগিতাও শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য সৃষ্টির অন্যতম কারণ।তাদের কারণে শিক্ষকদের এম পি ও,  ইনক্রিমেন্ট, পদোন্নতি, টাইমস্কেলসহ বিভিন্ন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয় এবং তারা সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়।অনেক শিক্ষক আছেন যারা দুই থেকে দশ বছর পর্যন্ত শিক্ষকতায় যুক্ত থেকেও এম পি ও ভুক্ত হননি। শিক্ষকদের অনেকে এটাকে বৈষম্যপূর্ণ আচরণ বলে মনে করেন।
৩.গবেষণা খাতে অপ্রতুল বরাদ্ধ:
বাংলাদেশে শিক্ষাক্ষেত্রে মৌলিক গবেষণাকে উৎসাহিত করার জন্য সরকারি সহায়তা একেবারেই নগণ্য। দু'বছর পূর্বে বাংলাদেশে  পুরো শিক্ষাখাতে গবেষণার জন্য যা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছিল, তা ভারতের আসাম রাজ্যের মাত্র একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চাইতেও কম।তাহলে বাংলাদেশে শিক্ষায় বৈষম্যের ভয়াবহতা কেমন তা সহজেই অনুমান করা যায়।
৪.মেধাবীদের প্রতি অবহেলা:মেধাবীদের একধরণের পাগলামি থাকে,  থাকে অহংকার ;তাদের অধিকাংশই বিক্রিযোগ্য হয়না।বিশেষকরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষক বা গবেষণা করতে আগ্রহী সিংহভাগ বুদ্ধিজীবী যেকোন রাজনৈতিক দলের অন্ধ আনুগত্য করতে অনাগ্রহী। অথচ রাজনৈতিক বিবেচনায় শিক্ষক এবং গবেষক নিয়োগের বাজারে এদের অনেক পাত্তা পাবেন না।এটাও শিক্ষা ব্যবস্থাকে চরমভাবে সংকুচিত করছে;সাথে সাথে বৈষম্য  সৃষ্টি করছে     
৫.একীভূত শিক্ষা প্রসঙ্গ:শিক্ষা উন্নয়নের জন্য বৈদেশিক ঋণে প্রবাহের সদ্ব্যবহারের জন্য দেশব্যাপী সকল শিক্ষাস্তরের শিক্ষক- শিক্ষিকাদের একদশকেরও অধিককাল ধরে  প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।এ ক্ষেত্রে একীভূত শিক্ষা শিরোনামে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় আলোচনায় আনা হতো;এটি হল: একীভূত শিক্ষা;যার ভাবার্থ হচ্ছে শ্রেণিতে বা বিদ্যালয়ে উপস্থিত সমাজের বিভিন্ন স্তরের,  বিভিন্ন মানসিকাতার,বিভিন্ন ধর্মের, বিভিন্ন পরিবেশ থেকে আগত শিক্ষার্থীদের একই শ্রেণিতে একই শিক্ষিক দিয়ে সমতার ভিত্তিতে পাঠদান নিশ্চিত করা।একটু খোলাসা করে বললে এরকমটি হয়:
   "একীভূত শিক্ষা হচ্ছে একটি প্রক্রিয়া, যা প্রত্যেক শিশুর চাহিদা ও সম্ভাবনা অনুযায়ী শিখন ও জ্ঞান অর্জনের প্রতিবন্ধকতা সীমিত ও দুরীকরণের মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি ঘটায়। একীভূত শিক্ষা হচ্ছে একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে ধর্ম-বণর্, ধনী-গরীব, ছেলে-মেয়ে, প্রতিবন্ধী-অপ্রতিবন্ধী সহ সকল শিশুকে একই শিক্ষক দ্বারা, একই পরিবেশে এক সাথে মানসম্পন্ন শিক্ষাদান করা হয় । একীভূত শিক্ষা হলো দৃষ্টি ভঙ্গি, মুল্যবোধ এবং বিশ্বাস। একীভূত করণ একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে শিখন এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের চাহিদাগুলোকে সামাজিক সাংস্কৃতিক অংশগ্রহন এর মাধ্যমে পরিপূর্ন করা হয় এবং শিক্ষা থেকে ঝরে পড়া কমানো হয় একীভূত শিক্ষা প্রত্যেক শিশুর শিক্ষায় সাম্যতা ও অধিকার নিশ্চিত করে। সমাজের দীর্ঘদিনের বৈষম্যপূর্ণ কাঠামো ভেঙ্গে ফেলে। এই শিক্ষা কার্যক্রমে প্রতিবন্ধীসহ প্রান্তিক শিশু ও সাধারণ শিশু একসাথে অধ্যায়ন করে। ফলে পরস্পর সম্পর্কে জ্ঞান ও শ্রদ্ধাবোধ অর্জন করতে পারে, যা একটি বৈষম্যহীন ও একীভূত সমাজ ব্যবস্থা বিনির্মাণের ভিত্তি।
"inclusiveeducationinbangladesh"
তাত্ত্বিকভাবে সঠিক কথা এবং ধারণাই ট্রেনিংএ প্রদান করা হচ্ছে।কিন্তু এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীকে যখন দেশের শিক্ষাসহ অন্যান্য বিষয়াদি সম্পর্কে জানানো হয় তখন শিক্ষার্থী নিজেই বিদ্যমান বৈষম্য আর অনিয়ম সম্পর্কে জেনে যায়।যেমন,দশম শ্রেণির ইংরেজি বইয়ে GOOD CITIZEN হওয়ার জন্য কতিপয় বিষয় জানার উপর জোর দেয়া হয়।সেখানে দেশের Educational systems and Educational structure সম্পর্কে জানার বিষয়টি উল্লেখ আছে।এগুলো জানলে শিক্ষার্থী সহজেই বুঝে যাবে যে তারা রাষ্ট্রীয়ভাবে লালিত বৈষম্যের শিকার।বাকি কাথা থাকুক।
৬.শিক্ষকদের আচরণে বৈষম্য :
 শিক্ষকদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা প্রাইভেট টিউশনির লক্ষ্য নিয়ে শিক্ষকতার মত মহান পেশায় আসেন।তারা নৈতিকতাকে বিসর্জন দেন এবং শিক্ষার্থীদের সাথে অন্যায্য আচরণ করেন।অনেক শিক্ষক প্রাইভেট না পড়লে শিক্ষার্থীদের নাম্বার প্রদানে পক্ষপাতিত্ব করেন।এটা স্পষ্ট বৈষম্যের উদাহরণ।
৭.শিক্ষায় অপ্রতুল বরাদ্ধ:
বাজেটে শিক্ষাখাতে অপ্রতুল বরাদ্ধ শিক্ষায় বৈষম্য সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ।শিক্ষাখাতে প্রচুর বরাদ্ধ দেয়া হয় এবং এর ব্যাপক অংশ উন্নয়ন খাতে যায়।যারা পঠনপাঠনে যুক্ত থাকেন তাদের জীবনমান সম্মানজনক পর্যায়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় না।
৮.বৈষম্য বিলুপ্তির সম্ভাবনা:জাতির জনকের স্বপ্নের বাংলাদেশ গঠতে হলে তাঁর গৃহীত পদক্ষেপকে মূল্য দিতে হবে।তিনি শিক্ষাকে জাতি গঠনের প্রধান নিয়ামক হিসেবে দেখেছ্নথভাবে  এবং এজন্য তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের সূচনা লগ্নেই যুগোপযোগী শিক্ষানীতি উপহার দিয়েছেন।তিনি শিক্ষাখাতে জাতীয় আয়ের কত অংশ বরাদ্ধ দিয়েছেন তা কারো অজানা নয়।আমরা মনে করি,শিক্ষায় বৈষম্য দূর করতে হলে শিক্ষায় বরাদ্ধ যৌক্তিক করা উচিত।আশাকরি সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণে শিক্ষাখাতে বরাদ্ধ বৃদ্ধি করবে।সাথে সাথে শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় ইতিবাচক পরিবর্তনও নিশ্চিত করবে।
 সার্বজনীন আইনের অভাব বৈষম্য সৃষ্টির অন্যতম কারণ।শুধুমাত্র পরিপত্রের ফাঁদে রেখে একটি মৌলিক ইস্যুকে যথার্থভাবে মূল্যায়ন অসম্ভব।যত দ্রুত এটি নীতি নির্ধারকদের মগজে প্রবেশ করবে ততই মঙ্গল।1/15/18

  

হজরত মুহাম্মদ(সাঃ)-এর শিক্ষাদান পদ্ধতি ও কৌশল বইতে অন্তর্ভুক্ত   ২০২০ একুশে বইমেলা



বুধবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৮

মহাজোট আবার ভোট চাইবার অধিকার রাখে কী?

মহাজোট   আবার  ভোট চাইবার অধিকার রাখে কী?

       বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির বর্তমান অবস্থা সুষ্ঠু ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়াকে সমর্থন করেনা।বিরোধী দলসমূহ দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনাকে একেবারেই উড়িয়ে দিয়েছেন।তবুও আগামীর ভোট নিয়ে সরকারি এবং বিরোধী শিবিরে প্রস্তুতি চলছে।সর্বশেষ  সংসদ নির্বাচন ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।যদিও ক্ষমতাসীন দল একে সরকার গঠনের যৌক্তিক প্রক্রিয়ার অনিবার্য  পরিণতি বলে অভিহিত করেন।এখন আবার ভোটের কাল আসছে। সরকার বিরোধীদের কট্টর সমালোচনা অহরহ চলছে।এমতাবস্থায়  ক্ষমতাসীন   সরকার পুনঃরায় ভোট চাইবার অধিকার রাখে কী না তা নিয়ে অহরহ  প্রশ্ন উঠছে।আসুন, আমরা বিষয়টি আলোচনা  করি।মহাজোট সরকারের শক্তিশালী শরিক আওয়ামীলীগ এবং তাদের শরিকদলসমূহ ভোটের বাজারে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করার জন্য পূর্বপ্রস্তুতি নিচ্ছে।এজন্য তারা তাদের যোগ্যতা এবং পুনরায় ক্ষমতা পাওয়ার যৌক্তিক কারণ উপস্থাপন করতে পারে।এগুলো হল:

১. বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার:আমার একজন মামা আছেন,তিনি একসময় আওয়ামীলীগের উপর খুব ক্ষুব্ধ ছিলেন।তিনি বলতেন,শেখ হাসিনা মদীনায় গিয়ে বঙ্গবন্ধুর বিচার করার ওয়াদা করেছে।এটা আওয়ামীলীগের প্রথম বার ক্ষমতা গ্রহণের সময়। কিন্তু তিনি বিচার করেননি।অতএব তিনি ক্ষমতা হারান।যদি তিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার যথাযথভাবে শুরু করতেন তাহলে তিনি ক্ষমতা হারাতেন না।আওয়ামীলীগ দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে সে ভুল করেনি।অতএব শেখ হাসিনা তাঁর  প্রতিশ্রুতি  রক্ষা করেছেন। যারা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব দেখেছেন, তারা একে আওয়ামীলীগের সেরা সফলতা হিসেবে বিবেচনা করেন।
২.মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার:মহাজোট সরকারের অন্যতম কাজ হচ্ছে  মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজ সফলভাবে চালয়ে যাওয়া ;এবং এর মাধ্যমে জাতিতে কলঙ্ক মুক্ত করা।যেহেতু এরকম বিচারকাজ দেশে একেবারেই নতুন ছিল,অভিজ্ঞতাও ছিলনা;ফলে প্রক্রিয়াগত জটিলতা দেখা দিয়েছিল।এটা সত্য যে,এর পরেও অত্যন্ত ধীর গতিতে বাস্তবায়িত এই বিচারকাজ বিশ্ববাসীর আগ্রহের বিষয় ছিল;বর্তমানেও আছে।যে কারণে বিশ্বের আরও অনেক স্থানে দেশিয় আইনে এরকম অপরাধের বিচার কাজ করার আগ্রহ দেখা গেছে।বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের চেয়েও এটি কঠিনতর বিচারকার্য।এটা সত্য যে বিরুদ্ধবাদীগণ এই বিচার প্রক্রিয়া,উদ্দেশ্য  এবং এর স্বচ্চতা সম্পর্কে ভিন্নমত বিভিন্নভাবে প্রকাশ করছেন।এক্ষেত্রে স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তি বরাবরই বিচার এবং এর রায়ের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য সোচ্চার ছিল;এখনও আছে।মহাজোট সরকারের শক্তিশালী অংশীদার আওয়ামীলীগ জনমত এবং সংবাদ মাধ্যমকে সুকৌশলে তাদের পক্ষে ব্যবহার করতে সক্ষম হয়েছেন।
৩.রাজনৈতিক সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ : বাংলাদেশের    রাজনৈতিক সংস্কৃতির অন্যতম মন্দ দিক হচ্ছে রাজনৈতিক সন্ত্রাস।বিরোধী শিবিরে থাকা কালীন সময়ে ইচ্ছেমত ধর্মঘট ডাকা আর ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালানো নিয়ম হয়ে গিয়েছে। । দাবী আদায়ের লক্ষ্যে বিএনপি এবং তার শরিক দল কতৃক যানবাহনে পেট্টোল বোমা নিক্ষেপ করা,সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করার সকল প্রচেষ্টা শক্ত হাতে থামিয়ে দেয়।যদিও বিপক্ষ দল এসকল কাজে ক্ষমতাসীন দলের হাত আছে বলে অভিযোগ করে।কিন্তু যাদের ছত্রছায়ায় বাংলা ভাইয়ের তাণ্ডব আর দেশব্যাপী বোমাহামলা হয়েছিল,তাদের দাবী বাজার পায়নি।
৪.শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হানাহানি নিয়ন্ত্রণ:মহাজোট সরকারের অন্যতম সাফল্য হল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সেশনজট শূণ্যের ঘরে নামিয়ে আনা।বর্তমানে প্রায় সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক ক্যালেন্ডারের শতভাগ বাস্তবায়ন ঘটছে।বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বড়ধরণের সংঘাত এখন পর্যন্ত হয়নি।অন্যদিকে মারামারি, খুনাখুনির ঘটনাও এমন পর্যায়ে পৌঁছেনি যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয় দীর্ঘকালের জন্য বন্ধ রাখতে হয়েছিল।আমার পরিচিত অন্তত দু'জন ছাত্র যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত তারা তাদের বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ইতিবাচক অভিমত প্রদান করেছে।তাদের মনে করে, "বর্তমানে  দলবাজি বা মাস্তানি নেই বললেই চলে। আমাদের তিন বছরের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রনেতাদের সহযোগিতা দেখেছি;জোর-জবরদস্তি করে মিছিলে নেয়া বা পরীক্ষার সময়ে ডিস্টার্ব করার সংস্কৃতি এখন নেই "এদের একজন বলল।
 তবে বিরুদ্ধবাদীরা অবশ্যই বলবেন,ভোটার বিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে আসায় তারা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন দেয়নি।।কারণ,বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিশ্বাস করা যায় না।কিন্তু প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংসদের বরাদ্দকৃত অর্থ ভাগযোগ করে সাবাড় করেছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারের সবচেয়ে সাহসী সিদ্ধান্ত হচ্ছে :প্রাথমিক  শিক্ষাকে শতভাগ সরকারের অধীনে নিয়ে আসা।মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়নে সরকার বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে।কিন্তু এখনও শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য প্রকট।
৬.রোহিঙ্গা সমস্যায় প্রজ্ঞাপূর্ণ সিদ্ধান্ত: সরকারের শেষ সময়ে রোহিঙ্গা সমস্যা বড় লধরণের সংকটের সৃষ্টি করেছে।তবে এক্ষেত্রে সরকারের পদক্ষেপে প্রজ্ঞার পরিচয় পাওয়া যায়।বিশেষকরে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তসমূহ দেশকে আন্তর্জাতিক  ষড়যন্ত্র থেকে দেশে রক্ষা করেছে।কোনপ্রকার উস্কানিতে সরকার প্রভাবিত হয়নি।বলা যায়,বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নিজস্ব ঘরানা সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়েছে।এর মধ্য দিয়ে জাতি হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মর্যাদার আসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
৭.অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি:প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হলেও এর বিরুদ্ধে বিরোধীদল কোনপ্রকার  শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে।কারণ,সাধারণ জনগণ তাদের সমর্থন দেয়নি।এর মূল কারণ হল:দেশের অর্থনৈতিক গতিশীলতা।হরতাল,ধর্মঘট বা ভাংচুরের মত ঘটনা বন্ধ হওয়ায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রত্যাশিত মাত্রায় পৌঁছেছে। দেশের সাধারণ মানুষের আয় বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যবৃদ্ধি  সত্ত্বেও  সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সফল হয়নি।
৮.জাতীয় সম্মান রক্ষা:তামাম বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ আজ সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত। বিশেষ করে পদ্মাসেতু- বিশ্বব্যাংক কাণ্ডে বাংলাদেশ মাথা নিচু করেনি এবং নিরপরাধ প্রমাণিত হয়েছে।অন্যদিকে দেশের উন্নয়ন বাজেটে বিদেশ নির্ভরতা সম্মানজনক অবস্থানে এসেছে।সাথে সাথে ছিটমহল বিনিময়ে সম্মানজনক চুক্তি সরকারের বিদেশিক কূটনীতিতে সাফল্যের উদাহরণ।
৯.  শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা:মহাজোটের কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।মাঝেমাঝে আওয়ামীলীগের অফসাইডে এবং অনসাইডের নেতা-কর্মীরা শরিকদের সাথে ঝামেলাপূর্ণ  আচরণ করেন।প্রধানমন্ত্রীর কারণে  এসবে অনৈক্য সৃষ্টি হয়না; সেসব  শুধুমাত্র খবরের হেডলাইনে সীমাবদ্ধ থাকে।অন্যদিকে,বিরোধী দলের অনেক প্রবীণ নেতা তাঁকে যথেষ্ট প্রজ্ঞাবান বলে  স্বীকার করেন। তার শক্তিশালী ইমেজকে সামনে রেখে আওয়ামীলীগ  ভবিষ্যতের উন্নত বাংলাদেশ গঠতে তাঁর নেতৃত্বের অনস্বীকার্যতাকে সক্ষমতার সাথে উপস্থাপনের সুযোগ পাবে।অনেকে তাঁকে জাতির ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করেন।
মহাজোট সরকারের প্রধান শরিক আওয়ামীলীগ জোট সরকারের সাফল্যের জন্য নিবেদিতপ্রাণ কিছু নেতাকর্মীকে পেয়েছে।তাদের অনেকে সত্যিকার অর্থে দেশপ্রেমিক এবং সার্বজনীন দৃষ্টিকোণ থেকে নেতৃত্ব প্রদান করে।এদেরকে পুঁজি করে তারা আবারো ক্ষমতার স্বাদ পেতে পারে।
মহাজোট  কেন আবার ভোট চাইবার অধিকার রাখে না
মহাজোট সরকারের কট্টর সমালোচক গোষ্ঠী তাদের বিভিন্নভাবে তাদের সমালোচনা করে থাকে।তারা মহাজোট সরকারের যে সকল অন্যায্য কর্মকাণ্ডের প্রতি নির্দেশ করে সেগুলো হলঃ
১.অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন:
প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন আওয়ামীলীগের গলার কাঁটা হয়ে আছে।বিগত সংসদ নির্বাচনে প্রায় অর্ধেক সাংসদ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।আবার যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল,সেখানেও ভোট হয়নি।ক্ষমতাসীন জোট সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা দোহাই দিয়ে পার পেয়ে যাবার পথ খুঁজে নিয়েছে।কিন্তু বিরোধী শিবির এটা মানতে রাজি নয় বা কখনো ছিলনা।আওয়ামীলীগপন্থী  বুদ্ধিজীবীগণ মনে করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মানে হচ্ছে:জনগণের নির্বাচিত নেতা বা সাংসদের বিরুদ্ধে অন্ধ অজুহাত খাড়া করানো।জনগণ যাদেরকে নির্বাচিত করলো,তাদেরকেই অবিশ্বাস করলো;তাদের দ্বারা অনুষ্ঠিত নির্বাচন দুর্নীতিযুক্ত হবেই বলে প্রচার করে দিল।এরা মনে করে,জামাতে ইসলামী সুকৌশলে জনগণের নির্বাচিত ব্যক্তিবর্গকে অবিশ্বস্ত বলেই ধরে নিল;এটা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জন্য অবমাননাকর।  যে কারণে  মহাজোট সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার কাঠামোর তত্ত্বই অস্বীকার করে।

২.দুর্নীতির বিস্তার:মাঝেমধ্যে আওয়ামীলীগ সরকারের মন্ত্রীদের কেউ কেউ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণার কথা জনগণকে স্মরণ করিয়ে দেন;যদিও জনগণ এখানে আক্রান্ত  শ্রোতাদর্শক মাত্র।সর্বত্র দুর্নীতিবাজদের কারণে নিরীহ মানুষ জুলুমের শিকার হলেও তারা কিছুই করতে পারে না।প্রতিকার চাইতে গেলে হয়রানি বৃদ্ধি পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।অন্যদিকে রয়েছে বড় বড় দুর্নীতি ;বিশেষকরে ব্যাংকলুট, হলমার্ক,শেয়ার মার্কেট জালিয়াতিসহ বড়মাপের দুর্নীতি মহাজোট সরকারের ব্যার্থতাকে  স্পষ্ট করে দেয়।উন্নয়নমুখী কর্মকাণ্ডের প্রতিটি স্তরে দুর্নীতির উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।এজন্য অনেকে বলেন,মহাজোট সরকার চুরি চামারিতে নিজস্ব ঘরানা সৃষ্টি করেছে।যে কারণে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী তাঁর সাম্প্রতিক কালে দেয়া বক্তৃতায় দুর্নীতি নিয়ে বিভ্রান্তিকর কথা বলেছেন।নিয়োগে,পরীক্ষায়,উন্নয়নকাযে  ভূমি অফিস,শিক্ষাপ্রশাসন,পুলিশ বিভাগে  দুর্নীতি বহুক্ষেত্রে সীমা ছাড়িয়েছে।অতি সম্প্রতি ১৪১ জন মাদক ব্যবসায়ী নিয়ে যুগান্তর পত্রিকায় সংবাদ বেরিয়েছে।এদের মধ্যে সিংহভাগ ক্ষমতাসীন সরকারের নেতা বা সক্রিয় কর্মী। এসব মাদক ব্যবসায়ীদের তৎপরতা উঠতি প্রজম্মকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে।আমজনতাকে এরকম অবস্থায় রেখে মহাজোট  সরকার পুনরায় ভোট চাইবার অধিকার রাখেনা বলে অনেকে মনে করেন।
৩.পুলিশি রাষ্ট্র কায়েম:বিরোধী দলের নেতাগণ বরাবরই অভিযোগ করে আসছে যে দেশ এখন একটি পুলিশি রাষ্ট্রের প্রতিচ্ছবি। অনেক ক্ষেত্রে বিরোধী দলের নেতা কর্মীরা সামান্য কারণে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।সরকারের ইন্দনে গুম এবং খুন হচ্ছে।ভিন্নমতকে কৌশলে দমন করা হচ্ছে বলে অনেকে অভিমত দেন।
৪.  শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ব্যর্থতা :শিক্ষাক্ষেত্রে সরকার যুগোপযোগী ব্যবস্থা কায়েম করতে ব্যর্থ হয়েছে।এক্ষেত্রে শিক্ষায় প্রত্যাশিত গুণগত মান অর্জনের লক্ষ্যে বিবিধ পদক্ষেপ নিলেও প্রত্যাশিত ফল অর্জিত হচ্ছেনা।মূলত প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়ায় নিয়োগ এবং পদোন্নতির ব্যবস্থা কার্যকর না হওয়ায় এজন্য দায়ী।মাঝেমধ্যে  কোন কোন  বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নীরিহ শিক্ষার্থীরা নিগৃহীত হতে হয়।সরকার দলীয় ছাত্রসংগঠনের ডাকে সাড়া না দিলে হলে থাকার অধিকার হারায়।স্বাস্থ্য সেবা এখনও সার্বজনীন হয়নি।সরকারের কল্যাণকর প্রচেষ্টা সফলতা পায়নি।মেডিকেলে ভর্তি নিয়ে জালিয়াতি সর্বসাধারণের নিন্দার কারণ হয়েছে।
অনেকে জোট সরকারকে বিচার বিভাগে অন্যায় হস্থক্ষেপের জন্য অভিযুক্ত করেন।সে যাই হোক,
আওয়ামীলীগ পন্থী  বুদ্ধিজীবীগণ সরকারের ব্যর্থতার জন্য দলে এবং প্রশাসনে গুপছি মেরে থাকা বর্ণচোরাদের দায়ী করেন।তারা মনে করেন,এর সাথে যুক্ত আছে দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্র। প্রশাসনে লুকিয়ে থাকা বি এন পি এবং জামাত পন্থী কর্মকর্তারা সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করে।ফলে সরকারের সাফল্য আর সদিচ্ছা অনেক সময়  প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।এরা মনে করেন, অচিরেই এসব বর্ণচোরাদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।আর যেহেতু আওয়ামীলীগের সাথে অন্যদের তুলনা অযৌক্তিক,সেহেতু তাদের ব্যর্থতা পুরো জাতিকে বহন করতে হবে।অতএব,মহাজোট সরকারে ঐক্যবদ্ধ স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তিকে আরো শক্তহাতে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে হবে।  তারা মনে করে মহাজোট সরকার পুনরায় নির্বাচিত হলে বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে সামিল হবে।সাথে সাথে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করাও সম্ভব হবে।আসুন,আমরা মহাজোটের সংকল্প পুরনের বাস্তবতা বিচার করি।1/10/18



Printfriendly

Featured Post

জাতি নির্মাণে গল্পযোগ

  জাতি নির্মাণে গল্পযোগ   ১ ।   মানুষ সামাজিক জীব।তারা পরিবার গঠন করে।তারপর সে-ই পরিবার একটি গোষ্ঠীতে রুপান্তরিত হয় এবং ধীরে ধীরে একাধিক গোষ...