বুধবার, ২৯ নভেম্বর, ২০১৭

প্রধান শিক্ষকের আত্মকথা(৫):মোবাইল সমাচার ও অন্যান্য

প্রধান শিক্ষকের আত্মকথা:মোবাইল সমাচার ও অন্যান্য


 

 কিছুদিন পূর্বে দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের বললাম,তোমরা আমাকে বলতো দেখি, তোমাদের পড়ালেখার অবনতির কারণ কী? শিক্ষার্থীরা সবাই একবাক্যে বলল,স্যার মোবাইল। অথচ তারা এর পাশাপাশি অলসতা আর শিক্ষকের পাঠ উপস্থাপনা ভাল না লাগাকে দায়ী করে।
অক্টোবর শেষ হয়ে আসছে। অষ্টম শ্রেণির জন্য অনুষ্ঠিত পাবলিক পরীক্ষা শুরু  হবে।আমার বিদ্যালয়ে পুরোনো নতুনে মিলে মাত্র আশিজন পরীক্ষার্থী। দশম শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষা শেষ।শিক্ষক কাউন্সিলে একটি সভা করা দরকার;যাতে দশম শ্রেণির ফলাফল প্রকাশ করা ছিল অন্যতম এজেন্ডা।  পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ৬ষ্ঠ,৭ম এবং নবম শ্রেণির শ্রেণি কার্যক্রম কিভাবে  চালানো যায় কী না তা নিয়ে আলোচনা, ফরম পুরণসহ সাথে আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডা ছিল।
মিটিং শুরু হল।পারস্পরিক কুশল বিনিময়ের পরেই ওলিউল্যা স্যার বললেন,বোর্ড থেকে একটা চিঠি এসেছে।পেয়েছেন কি?
: কই,নাতো।কখন এলো?
: এইতো আজ সকালে।
:দিনতো দেখি।এটা তো দেখছি এস.এস.সি পরীক্ষক তালিকা আপডেট করে পাঠানোর চিঠি।
অত:পর আমি সহকারী প্রধান শিক্ষককে এটি যথাযথভাবে পূর্ণ করার জন্য অনুরোধ করলাম।সাথে নির্দেশনা অনুযায়ী Online এও প্রেরিত তথ্য সংশোধন করার নির্দেশ দিই।
এইবছর বোর্ড এস.এস.সি ফর পুরণে অরাজকতা বন্ধে কতিপয় শক্তিশালী পদক্ষেপ নিয়েছে।প্রথমত নির্বাচনী পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের ফরম পুরণ না করা, বিগত বছরে অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের আবশ্যিকভাবে নির্বাচনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা, নির্বাচনী পরীক্ষার ফলাফলের ডাটা Online এ ফরম পুরণে আগে প্রেরণ করা,নির্বাচনী পরীক্ষার খাতা সংরক্ষণ করা ইত্যাদি।বিদ্যালয় পর্যায়ে দুর্নীতি রোধকল্পে পদক্ষেপসমূহ শিক্ষকদের কাছে সাদরে গৃহীত হয়েছে।অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই আমদেরকে দশম শ্রেণির ফরম পুরণের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।প্রথমেই দশম শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষার ফলাফল সীট নিয়ে আলোচনা হল।দেখা গেল আমাদের সোনার ছেলেদের মধ্যে মাত্র দশজন সকল বিষয়ে পাশ করেছে।একবিষয়ে ফেল করেছে সাত জন।দুই বিষয়ে ফেল করেছে দশ জন।সব হিসেব নিকেশ করে দেখা গেল:চার বিষয় পর্যন্ত ফেল করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা চল্লিশজন।গত বছরে এক,দুই বা তিন বিষয়ে ফেল করেছিল ত্রিশ জন।
পরীক্ষকেন্দ্রে দায়িত্ব থাকায় আমি কয়েকদিন স্কুলে   অনিয়মিত ছিলাম।সহকারী প্রধান শিক্ষক ফেল করাদের পাশ দেখিয়ে বোর্ডে ফলাফল প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেন।

ফরম পুরণের অভিযোগ ও মোবাইল সংবাদ :

ফরম পুরণের জন্য দেয়া নির্দিষ্ট সময় শেষ হলে জনৈক অভিভাবক এলেন।তাঁর মেয়ে আট বিষয়ে ফেল করেছে।তার অভিযোগ হচ্ছে,স্যারদের কাছে প্রাইভেট না পড়ায় মেয়েটিকে ফেল করানো হয়েছে।অভিযোগ খুবই গুরুতর। আমি জমা দেয়া উত্তরপত্রগুলো দেখলাম।ভদ্রমহিলাকে বললাম,মেয়েটি যা লিখেছে তাতে পাশ করা অসম্ভব। আপনি কি খাতাগুলো দেখবেন?
:না,স্যার।
:তাহলে বলুন,মেয়েটি পরীক্ষায় এত খারাপ ফল করার কারণ কী?মেয়েটি কি বাড়িতে পড়া-লেখা করেনি?আর যা দেখলাম মেয়েটি ত্রিশ দিন স্কুলেই আসেনি।এমনটি হলে যে পাশ করার কোন কারণই নেই।
:কি বলব স্যার,মেয়েটির বাবা কি একটা টাচ মোবাইল দিয়েছে।সেই থেকে মেয়ের পড়া নেই,লেখা নেই ;শুধু ঐদিকে থাকে।ঘুম নেই,নিদ নেই।
মহিলার আক্ষেপের সাথে তীব্র হতাশা প্রকাশ পেল।
:ভালোইতো; মেয়ে এখন টাচ নিয়ে থাকুক;পরীক্ষা নাই বা দিলো। আর দেবারও সুযোগ নেই।
ঘুরতে ঘুরতে পিয়ন তনু মিয়া এদিগে এসেছিল।তনু মিয়া মাঝ বয়সী।     সে শুনলো।কিছুক্ষণ পরে সে বলল,স্যার ইনার মেয়ে পরী; আস্ত একটা শয়তান মেয়ে।স্কুলে মোবাইল আনে।হুজুর স্যার ধরেছিল।কি সব আজে বাজে ভিডিওতে ভরা।ঘেন্না লাগে।ঐদিন তো স্যারেরা বলেছিল,এই মেয়ে দশটা ছেলে মেয়েকে নষ্ট করবে।আরো কতকিছু আছে।অতকথা বলতে পারবো না।
এটা শুনে নেকাবে ঢাকা অর্ধবয়স্ক মহিলা নীরবে উঠে গেলেন।
শেণিকক্ষে মোবাইল ব্যবহার নিয়ে সরকারিভাবে মাঝে মাঝে সতর্কতামূলক প্রজ্ঞাপন দেয়া হয়।সম্প্রতি এই রকম একটি প্রজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে।যেখানে বলা হয়েছে,শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক বা শিক্ষার্থী কেউ মোবাইল আনতে পারবে না বা ব্যবহার করতে পারবেন না  নিঃসন্দেহে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা।কিন্তু এই নির্দেশের বিষয়ে ভিন্নমত রয়েছে।এটিও আমাদের ওলি উল্যা স্যারের নজরে আসল।তিনি মনে করেন,এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গেলে বা প্রতিরোধ করতে গেলে প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়নি।ফলে এটি শুধুমাত্র একটি কাগজ ছালাছালিতেই শেষ হবে বলে মনে হয়।অন্যদিকে,বৃট্রিশ কাউন্সিল  কর্তৃক প্রেরিত ইংরেজি শিক্ষণে সহায়ক উপকরণ হচ্ছে মোবাইল; এর মাধ্যমেই  প্রয়োজনে  শিক্ষার্থীদের অডিও শোনানো হয়।এখন এই নিষেধাজ্ঞা প্রেরণের ফলে এই অতি প্রয়োজনীয় উপকরণ ব্যবহার হুমকীর মুখে পড়বে।।সাথে সাথে শিক্ষার্থীর মোবাইল ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আনা এই মুহূর্তে অসম্ভবই বলে মনে হচ্ছে।প্রজ্ঞাপনের আজ্ঞায় শিক্ষক শিক্ষিকাগণ বন্দী ;কিন্তু ছাত্রছাত্রীরা যে নয় তা শতভাগ সত্য।
অবস্থা দৃষ্টে যা মনে হচ্ছে, ছাত্রছাত্রীদের নিয়ন্ত্রণ   এখন আর আমাদের হাতে  নেই;আজকাল এইক্ষেত্রে মাতাপিতাও অসহায়।সংস্কৃতির অসম বিস্তার সবকিছুকেই ভেঙ্গে চুরমার করে দিচ্ছে।ছাত্রছাত্রীদের কাছে শক্তিমান রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরা আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।ফলে তাদের নির্দেশ আর নির্দেশনা কিশোর কিশোরীর কাছে  শিরোধার্য।এইতো কিছুদিন আগে স্কুলের কিছু ছাত্র অমুক ভাইয়ের নির্দেশে মিটিংএ গিয়েছে।আমাদের কিছুই করার ছিলনা।কী ব্যাপার, আপনারা যে নিরুত্তর!
আমরা শুনছি তো।যাদের ডাকে এই অবুঝ শিশুরা ঘর আর ক্লাস ছেড়ে যাচ্ছে, তাদের পুত্র কন্যারা কেউই মিছিলে যায় না।এটা এদের কে কে বোঝাবে? বিশেষ করে প্রবাসীদের সন্তানেরা মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়েছে।অনেক মাকে বলতে শুনেছি:মোবাইল,হোন্ডা না হলে ছেলে স্কুলেই আসবে না।ছেলেরা সেই সব পাচ্ছে;আর স্কুল থেকে সরে যাচ্ছে।
তিন বছর আগে পাঁচ সাতটা ছেলে সমাবেশের আগমুহূর্তে জটলা করছিল।তনু মিয়া কিছু একটা অনুমান করে এবং উঁকি দিয়ে দেখে।তার চক্ষুচড়কগাছ।এরা সবাই অষ্টম শ্রেণির ছাত্র।পরে খোঁজ নিয়ে জানা গেল,আমাদের সাবেক ছাত্রী হাসিনার ছোট ভাই মোবাইল এনেছে।সাথে ছিল মেমোরি ভর্তি নিষিদ্ধ ভিডিও। স্থানীয় বাজারের মেমোরি লোডের অপার থেকে কম দামে কিনেছে।ছেলের মায়ের লজ্জায় মাথা হেট।তারা তো ওইসব জানে না ; কী হচ্ছে আর কী ঘটছে?
"হ্যাঁ ,শিক্ষক সম্প্রদায় তো ধোয়া তুলসী পাতা।তারা যে কত বিপদজনক তা কারো অজানা নয়।পরিমলেরা রাজনীতির কাঁধে ভর করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে পড়েছে এবং এরা খুবই শক্তিশালী।খোঁজ নিয়ে দেখুন ;অনেকের আমলনামা দেখলে গাঁ শিহরে উঠবে। " জয়নাল স্যার বললেন।
"তা ঠিক।কিন্তু , পেশার ধরণ আর অবস্থানগত কারণে এদের অধিকাংশকে ভালো থাকতেই হয়।সবস্থানেই মন্দ চরিতের উপস্থিতি থাকতে পারে।তবে তা কতটা বিপদজনক মাত্রায়  আছে তা দেখা যেতে পারে।মাঝে মাঝে আশে পাশের অনেক স্কুলের   শিক্ষকদের অনৈতিক আচরণের সংবাদ আসে।বিচার সভা বসে।স্বাক্ষীহীন অভিযোগে একসময় কালের গর্ভে হারিয়ে যায়।কিন্তু নিরপেক্ষভাবে খোঁজ খবর নিয়ে দেখা গিয়েছে যে, সব অভিযোগ অসত্য নয়।নিজের ঘরে এবং বিদ্যালয়ে প্রচণ্ড নিরাপত্তাহীতা নিয়ে মেয়ে শিশুরা এগুচ্ছে।এই অবস্থা নিয়ে নির্ভরযোগ্য কোন জরীপ নেই।আমাদের ওলি স্যার এটা নিয়ে নাকি একটি জরীপ চালিয়েছেন।তিনি বলেন,ছাত্রীরা সবচেয়ে বিশ্বস্থ হিসেবে শিক্ষকদের দেখে।কিন্তু দেখা গেছে,অনেক শিক্ষক না বোঝার ভান করে ছাত্রীদের গায়ে হাত দেয়,অনেকে মাথায় সাদা চুল তুলতে দেয়;প্রাইভেট পড়তে গেলে সুযোগ বুঝে অন্যায্য কাজ করে,বাজে ধরণের উপহার দেয়।এমতাবস্থায় বিব্রত মেয়েরা কাউকে বলতেও সাহস পায়না।বর্তমানে ইন্টারনেটের উন্মুক্ত ময়দানে শিক্ষকেরা যেমন এগিয়েছে,ছাত্রছাত্রীরাও নিষিদ্ধ আর গোপন সত্য আবিষ্কারের পথ খুঁজছে ।এখন প্রয়োজন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা;তা না হলে নেটের জালে আমাদের পুরো জাতি ধরাশায়ী হবে।"


বোর্ডের পরীক্ষক নির্বাচন :

ওলিউল্যা স্যার বোর্ডের পরীক্ষক নির্বাচনের গাফলা নিয়ে মজা শুরু করলেন।দেখেন স্যার,ইসলাম  ধর্মের স্যার বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষক এবং যথারীতি কাগজও পাচ্ছেন।বলুন তো দেখি এটা কী করে সম্ভব?
কথা কম বলার মানুষ হুজুর স্যার বললেন,যত দোষ সব নন্দঘোষ! আপনারা কি জানেন, নন্দিনী বিদ্যালয়ের কৃষিবিজ্ঞানের শিক্ষক   দুবছর ধরে বাংলা বিষয়ের প্রধান পরীক্ষক।ইনি কোন শ্রেণিতেই বাংলা পড়ান না।তিনি নিচের ক্লাসে গণিত এবং উপরের ক্লাসে বিজ্ঞান বা কৃষিশিক্ষা পড়িয়ে থাকেন।যেহেতু তিনি আমার প্রধান পরীক্ষক ছিলেন আমি এই বিষয়ে জেনেছি।স্নাতক পর্যায়ে তাঁর একশ নাম্বারের বাংলা বিষয় ছিল।আমারও তো তা ছিল। তাহলে সমস্যা কোথায়? আমিতো অষ্টম শেণিতে বাংলা পড়াই।
সমস্যা তো এখানে না।সমস্যা হল:আপনারা বোর্ডের কেরানী-ফেরানীকে পাঁচশো করে কেন দিয়েছেন। এতে যিনি যে বিষয়ে যোগ্য এবং অভিজ্ঞ তিনি কাগজ পাচ্ছেন না।এই যেমন ধরুন, আমি প্রায় বার বছর ইংরেজি পড়াচ্ছি।ইংরেজিতে সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়েছি।তবু আজ অবধি এসএসসি'র ইংরেজির কাগজ পাইনা।আপনি কি মনে করেন আমি কাগজ পাওয়ার অযোগ্য?
: আপনার যোগ্যতা সন্দেহাতীত। আমরা জানি।কিন্তু আপনি যে অফিস বুঝেন না।এই বলে অট্টহাঁসি দিলেন।
হুজুরের রসিকতায় গভীরতা আছে।তারপর বললেন,কাগজ পেতে হেডম লাগে।শুধু এলেম থাকলে হয়না হেলেমের জোরও লাগে।
হেলেমের জোরেও বোধহয় আর হচ্ছে না।বোর্ডের নতুন কর্তা খুবই কড়া।এইতো গত সপ্তাহে আমরা উত্তরপত্র আনতে গেলে তাঁর মুখেই কিছু কড়া বার্তা শুনলাম।তিনি স্পষ্ট বলে দিলেন,কোন প্রধান শিক্ষক  যদি পরীক্ষকের জন্য প্রেরিত তথ্যপত্রে অযৌক্তিকভাবে শিক্ষক ও বিষয় নির্বাচন করেন তবে তাঁকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হবে।
মুনির স্যার বললেন,ওখানে সুলতান মিয়া আছে।তাকে শপাঁচেক দিলে হয়ে যাবে।কে  কার খবর কে রাখে।
নীলু ম্যাডাম বললেন,যাই হোক যখন বিষয়টি নিয়ে বলাবলি আর লেখলেখি হচ্ছে - একটা কিছু তো নড়চড় হবে।সবকিছু যে বেপরোয়াভাবে চিরদিন চলবে তাতো নয়।একসময় বোর্ডের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ অকল্পনীয় ছিল।আমাদের শাহাদাত ভাইয়ের পরীক্ষায় ফেল এলে তিনি চ্যালেঞ্জ করেছিলেন।তার উত্তরপত্র দেখার সুযোগ পাঁচ বছরেও পাননি।এটি ১৯৮৩ সালের ঘটনা।  পরে আবার সববিষয়ে পরীক্ষা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন।সে তুলনায় এখন জবাবদিহিতা বেড়েছে।
আমাদের বিএসসি স্যার বললেন,আমরা যেইবার বিএসসি পরীক্ষা দিই,সেবার শতকরা পঁচানব্বই জন ছাত্রছাত্রী রসায়নে ফেল করেছিল।আমরা অনেক পরে জেনেছি,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রসায়নের কাগজ মূল্যায়নও করেনি।এর বিরুদ্ধে কলেজগুলো কিছুই করতে পারেনি।এরশাদশাহীর জামানায় এরকমটি প্রায় ঘটতো।সে তুলনায় অবস্থা এখন অনেক ভাল।কী বলেন?
আরে আমাদের মধুবাবুও তো গত বছর অষ্টম শ্রেণির ইংরেজি বিষয়ের প্রধান পরীক্ষক ছিলেন।তারও উচ্চমাধ্যমিকের পর ইংরেজি বিষয় ছিলনা।তিনি কিভাবে হলেন?
যতটুকু জানি তিনি একজন প্রধান শিক্ষক ।পড়ালেখা জানেন।বোর্ড়ও দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার মূল্য দেয়।
শিক্ষকদের  ব্যক্তিত্ব যে ক্রমশ পড়তির দিকে তা এবারে বোর্ড়ে গিয়ে বুঝলাম।পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শিক্ষকদের অনুরোধ করলেন যে তারা যেন কোন ক্রমেই তিনশ এর অধিক উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য না নেন।তিনি আরও বলেন,দেখুন আপনারা অনেকে আমাদের পিয়নকে পঞ্চাশ টাকা দিয়ে চারশ কাগজও নেওয়ার চেষ্টা করে থাকেন।এরকম না করার অনুরোধ করছি।কিন্তু স্পষ্ট নির্দেশও যে কেউ কেউ মানতে অভ্যস্ত নয়।সত্যিই কয়েকজন পিয়নকে টাকা দিয়ে তিনশএর অধিক উত্তরপত্র নিয়েছে।এই হল অবস্থা।

ওলি উল্যা স্যার আলোচনার  বিষয় উস্কে দিয়ে চুপচাপ শুনেন।কে কী বলেন লক্ষ করেন।
তার অভিমত হচ্ছে,  ট্রাডিশনাল বিষয়গুলো একেবারে ছুড়ে ফেলে দেওয়া নির্বুদ্ধিতার কাজ। আপনারা কী বলেন? আমিও একমত ; কিন্তু কিছু বিষয়ে বাছবিছারেরও দরকার আছে।অষ্টম শ্রেণিতে পাবলিক পরীক্ষার নেওয়ার বিষয়ে প্রায় সকল খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ দ্বিমত প্রকাশ করেছেন। কিন্তু সরকার এটি চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন এদেশে গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে গায়ের জোরে আর চেয়ারের জোরে সিদ্ধান্ত হয়।এখানে যে মাথার বিষয়ও আছে তা মানা হয় না।ফলে সম্ভাবনাময় অনেক মাথা হারিয়ে যাচ্ছে।
শিক্ষার্থীর প্রবণতা আর সম্ভাবনাকে আবিষ্কার করার কৌশল উদ্ভাবন করা উচিত।একজন শিক্ষার্থীর পাঠ্যক্রমের প্রতিটি বিষয়ে আগ্রহ নাই থাকতে পারে এবং এটাই স্বাভাবিক। এজন্য যে সকল বিষয়ে শিক্ষার্থী সাফল্য প্রমাণে সমর্থ হবে সেসকল বিষয়ের কোনটিতে উচ্চতর শিক্ষা অর্জনের অধিকার অযৌক্তিক নয়।বিজ্ঞানী আইনস্টাইন তাঁর মাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষায় বিজ্ঞান এবং গণিত ছাড়া বাকি বিষয়সমূহে অসন্তোষজনক ফলাফল অর্জন করেছিলেন।ফলে শিক্ষার পরবর্তী স্তরে তিনি বিজ্ঞান আর গণিত বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত বিষয়েই পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছিলেন।পরবর্তীকালে তাঁর সাফল্যের ইতিহাস সকলেরই জানা।আমাদের সমস্যা হল,শিক্ষার্থী একটিমাত্র বিষয়ে ফেল করলে অনুত্তীর্ণ বলে স্বীকৃত হয়।এটি আমি সুবিচারের অনুভূতিজাত বলে মনে করিনা।
আমরা সবাই শুনছি।জয়নাল স্যার মুখ খুললেন।তিনি বললেন,ওলি স্যারের কথার উপরে কর নির্ধারণ করা উচিত।ইনি প্রায়শই চলমান পদ্ধতিতে দোষ খুঁজে বেড়ান।তিনি গতকাল বললেন,পৃথিবীর সকল খ্যাতিমান বিশ্ববিদ্যালয়ে চক ডাস্টারে ক্লাস নেয়া হয়;কিন্তু আমরা হঠা করে মাল্টিমিডিয়ার আয়োজন করছি, যার প্রহণ যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে।বিদেশী ঋণের টাকা লুটপাটের এই এক মহা আয়োজনের ব্যবস্থা। প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল ছাপানো,বিতরণ আর লেখা - সবই যে কী মানের অভিজ্ঞ ব্যক্তির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে তা প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিগণ বুঝতে পারেন। অন্যদিকে, প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল লেখকের যোগ্যতা নিয়ে গুরুতর সন্দেহ আছে ; এদের  অনেকে অজ্ঞাত প্রতিষ্ঠান থেকে ডক্টরেট ডিগ্রী নিয়ে গলায় ঝুলাচ্ছেন আর দেশবাসীকে মুলো দেখাচ্ছেন।এসব ভূঁয়া ডিগ্রীদের নিয়ে দিনকয় আগে তালাশে প্রামাণ্য অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়েছিল।আমাদের শিক্ষা বিভাগের কর্তারাই এইক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন।
: আমি কি ভুল বলেছি? আপনারা যাচাই করুন।ওলি স্যার সংক্ষেপে বললেন।
অনেক সময় এজেন্ডাহীন আলোচনা চলে।বিশেষকরে বিরতির সময় রকমারি বিষয়ের বিস্তার ঘটে।এইক্ষেত্রে ওলি স্যার প্রশ্ন উত্তাপন করেন এবং সমাধানের সূত্র দিয়ে থাকেন।প্রায় প্রতিদিন এমনটি ঘটে।এইসব আলোচনা আমাদের পারষ্পরিক সম্পর্কে নতুন মাত্রা দেয়।ইনি একমাত্র ব্যক্তি যিনি শিক্ষকতাকে উপভোগ করেন এবং একে এক অনন্য আনন্দের উৎস হিসেবে বিবেচনা করেন।এদিন তিনি পাবলিক পরীক্ষায় পরীক্ষক নির্বাচনে স্বচ্ছতা আনয়নেও একটি উপায়ের কথা বললেন।

          বেনবেইজের সাথে সমন্বয় :

পাবলিক পরীক্ষায় পরীক্ষক নির্বাচন নিয়ে কথা আলোচনা চলছিল। ওলি উল্যা স্যার এই ক্ষেত্রে একটি সহজ পথের নির্দেশ দিলেন।তিনি মনে করেন,বোর্ডে শিক্ষকের তথ্য যাচাইয়ে বেনবেইজ দ্বারা গৃহিত তথ্যের সমন্বয় করলে বোর্ড়ের সুবিধা হবে।বিজ্ঞানের সমন্বয় ও নিঃসরণের বিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করলে সুস্থ শরীরের মত বোর্ড়ও  সুস্থ থাকবে।এইজন্য পরীক্ষক নির্বাচনে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসকে সংযুক্ত করা উচিত।এতে প্রধান শিক্ষকগণের চাপ ও ভারমুক্ত হওয়া সহজ হবে।

আসল সত্য হচ্ছে এই যে,যারা নীতি নির্ধারণ করেন তাদের সন্তানেরা এই সকল বিদ্যালয়ে পড়েনা।ফলে দেশের শিশুদের ক্ষতি হলে কার কী?হতাশার সুরে ওলি স্যার বললেন।

শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৭

ইংরেজি ভাষা শিক্ষণে সাফল্যের জন্য করণীয় কী?

ইংরেজি ভাষা শিক্ষণে সাফল্যের জন্য করণীয় কী?

আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে একটি বড় সমস্যা হল :শিক্ষাদান পদ্ধতি ও কৌশল সম্পর্কে নির্দেশনা দেন তারা যারা সরাসরি শিক্ষার সুনির্দিষ্ট স্তরে শিক্ষাদান কার্যক্রমে যুক্ত নন। আবার    এঁদের নির্দেশনা মাঠপর্যায়ে যারা দেখবাল করেন তাদেরও যোগ্যতা সীমিত এবং অভিজ্ঞতা নেই।এদের  অধিকাংশেরই শিক্ষাদান এবং গ্রহণ  প্রক্রিয়ায় প্রধান সহযোগীর ভূমিকায় থাকার অভিজ্ঞতা নেই।ফলে আমরা শিক্ষকগণ এক মহা যামেলায় আছি।
ইংরেজি যাদের মাত্রিভাষা নয় তারা কিভাবে এই ভাষা রপ্ত করবে;এটি দীর্ঘদিনের এক অমীমাংসিত সমস্যা।কারণ,শিক্ষায় দীর্ঘদিনের স্বীকৃত নীতি-পদ্ধতিও অনেক সময়ে ব্যক্তির ব্যক্তিত্বের বিভিন্নতার কারণে সফল হয়না।
কিছুদিন পূর্বে সরকারি এক বিশেষ নির্দেশে বলা হয়েছে যে ইংরেজি পাঠদানে শেণিকক্ষে শিক্ষক ইংরেজিতে প্রয়োজনীয় বক্তৃতা প্রদান করতে হবে।কিন্তু এই নির্দেশনা কতটুকু যৌক্তিক তা মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। প্রথমত গ্রামাঞ্চলের শিক্ষারথীরা এই প্রক্রিয়া গ্রহণে একেবারেই অনিচ্ছুক। আমার স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা এটা মানতেই রাজি নয়।তাদের প্রত্যাশা হল :ইংরেজি বক্তৃতাকে আবার বাংলায় অনুবাদ করে দিতে হবে;অন্যথায় তারা পাঠগ্রহণে অসমর্থ হবে।এখন আমি কী করি?পাঠদান বজায় রাখার জন্য শিক্ষার্থীর চাহিদাকে মূল্য দিতে হল ।দ্বিতীয়ত বিগত ক'বছর পূর্বে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় তাদের একটি গবেষণায় দেখেছে যে ইংরেজি  যাদের মাতৃভাষা নয় তাদেরকে অন্ততপক্ষে দশম গ্রেড পর্যন্ত অনুবাদের মাধ্যমে উভয় ভাষায় দক্ষ করে তোলা উচিত।তারপরে,পুরোপুরিভাবে ইংরেজি ভার্শনে পাঠদান করলে শিক্ষার্থীর  অর্জন স্থায়ী এবং ফলফ্রসু হয়।ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেই এর স্বাক্ষী।এই বিষয়ে আমি আমার অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে চাই।

আমার অতীত অভিজ্ঞতা:

আশির দশকে আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে জ্ঞানার্জন মুখস্ত নির্ভর ছিল।আমরা বিষয়ের পাঠ মুখস্ত করেই পাশ করতাম।এর বিকল্প কখনো ভাবিনি।কিন্তু উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে আমার নতুন অভিজ্ঞতা হয়।এইজন্য আমি  আমাদের বায়োলজির সম্মানিত অধ্যাপক মোমিন উল্লাহ স্যারের কাছে ঋণী। আমরা বেশ কয়েকজন ছাত্র তাঁর কাছে ইংরেজি প্রাইভেট পড়তাম।তিনি প্রথমে আমাদেরকে ইংরেজি বর্ণমালা শেখান। তারপর তিনি একএকটা করে ইংরেজি ব্যাকরণের পাঠ দেন;এবং প্রতিটি পাঠের পরেই তিনি বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদ করাতেন।সেক্ষেত্রে তিনি বাংলা পদক্ষমের সাথে  ইংরেজি পদক্রমের তুলনা করে দেখাতেন।দেখা গেছে আমরা অল্পদিনের মধ্যে নিজের মত করে কিছু কিছু ইংরেজি লেখায় সমর্থ হই।বর্তমানে আমি নিজেও এই কৌশল অনুসরণ করে সফলতা লাভ করেছি।আমার ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই নিজের অনুভূতি সহজে ইংরেজিতে  সুন্দর করে প্রকাশে সক্ষম।নিম্নে আমি আপনাদের জ্ঞাতার্থে তা উপস্থাপন করছি।আমি বিশ্বাস করি আপনাদের অনেকে  এটি জানেন।
.আমি ডাকি।
-I call.
.আমি তোমাকে ডাকি।
I call you.
 ৩.আমি তোমাকে সকালে ডাকি।
 I call you in the morning. 

মূল্যায়ন পদ্ধতির দূর্বলতাঃ

 যেহেতু আমাদের পাবলিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থী মূল্যায়নে Writing Skill -ই একমাত্র নির্ণায়ক।ফলে শিক্ষার্থীদের কোনভাবেই বাকি তিনটি দক্ষতার প্রতি আগ্রহী করে তোলা যাচ্ছেনা। এই বিষয়ে ভাবা উচিত।মূল্যায়ন পদ্ধতিতে যৌক্তিক পরিবর্তন কার্যকর করা উচিত।

বাংলা ভাষার মাস্তানি :

ভাষা বিজ্ঞানীগণ দুষ্টুমিচ্ছলে বলেন,বাংলা হল মাস্তান ভাষা। ফলে সর্বত্র তার প্রভাব অপ্রতিহত।আপনি বাংলাদেশে থাকবেন,খাবেন,ঘুরবেন; আবার বাংলাকে একদিকে সরিয়ে ইংরেজি নিয়ে বাতচিত করবেন তা কী করে হয়।একজন মাস্তান যেমন তার এলাকায় অন্য কারো অস্তিত্ব অস্বীকার করে , তেমনি বাংলা ভাষাও।এখানে পথে, ঘাটে ,মাঠে বাংলাই শোনা যা ;ইংরেজি নয়।বাংলার সমান্তরালে অন্য একটি ভাষা Communicative পদ্ধতিতে আয়ত্ব করা যুক্তিতে টেকে না।দেশের নামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের একজন অধ্যাপক বলেছিলেন(আমার শিক্ষক),তিনি উচ্চতর শিক্ষার জন্য অক্সফোর্ড়ে গেলে প্রথম এক বছর তাঁকে ইংরেজি ভাষার উপরে তালিম নিতে হয়েছিল।তারা বলেছিল,"তুমি খুব ভাল ইংরেজি জানলেও আমাদের প্রয়োজন অপূর্ণই থেকে যাবে।আসলে, নেটিভ না হলে ভাষাও দেশ নিরপেক্ষ হয়ে যায়।যে কারণে ইংরেজি ভাষার উচ্চারণে এবং ব্যবহারে দেশ নিরপেক্ষ চরিত্র উপস্থিত রয়েছে।

কোন স্তরের যোগাযোগ দক্ষতার জন্য Communicative English:

কোন স্তরের যোগাযোগের চাহিদা পূর্ণ করার জন্য  Communicative English কে অধিকতর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে তা ভেবে দেখা উচিত।উচ্চতর গবেষণার জন্য শুধুমাত্র মুখের সাধারণ বাতচিতের ভাষা কোন কাজে আসেনা।এর জন্য ভাষার উচ্চতর জ্ঞানার্জন প্রয়োজন।

ইংরেজি শিক্ষকের সংকট :

ইংরেজিতে ধারাবাহিক দক্ষতা অর্জনের জন্য শিক্ষার প্রতিটি স্তরে দক্ষ ইংরেজি শিক্ষক প্রয়োজন ;কিন্তু এই বিষয়টি এখন পর্যন্ত নিশ্চিত করা হয়নি।ফলে সব ধরণের বচন আর কথন ব্যর্থ হচ্ছে।শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের জন্য গুণগত মানের শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
শিক্ষাক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য শিক্ষাবিদগণের সুপারিশকে আমলে আনলে শিক্ষায় সফলতা অনিবার্য।আশাকরি,সরকার সেরকম পদক্ষেপই নিবে।
                                 ----



বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৭

প্রতিবছর কেন পরিবর্তিত পাঠ্যবই দরকার

প্রতিবছর কেন পরিবর্তিত পাঠ্যবই দরকার

আজ ভোরে জনৈক সুহৃদ ফোন করলেন।তার স্পষ্ট অভিযোগঃ মাধ্যমিক স্তর নিয়ে গবেষণা করেন,পঠন  পাঠনে যুক্ত আছেন তারা কী মাধ্যমিক স্তরের বই লিখতে আসমর্থ? আর প্রায় প্রতিবছর বইয়ের পরিবর্তন করা কি জুরুরী?আমি বললাম,হঠাৎ কী সমস্য হল? শুনি।ঐ সুহৃদ শিক্ষকতায় যুক্ত।
আমি কী উত্তর দিব তা নিয়ে ভাবছি।এই ভাবনার সাথে আমরা একটু পেছনে ফিরে যাই।জাপানের মত উন্নত দেশে শিশুদের জন্য পাঠ্যপুস্তক লেখার জন্য নাকি  মাত্র শ'খানিক লেখক আছেন।এরা যথারীতি যোগ্যতা প্রমাণ করেই লেখক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকেন।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন।বর্তমানে বই প্রকাশ, মতপ্রকাশ আর লেখকের আভির্বাব সবই রাজনীতিকরণ হয়েছে।রাজনীতিবিদেরা লেখক নির্বাচনের সূত্র দিয়ে দেন;সে অনুসারে লেখকেরা নির্বাচিত হয়ে থাকেন।জাতীয় ইস্যু একের অঙ্গুলি হেলেনেই পরিবর্তিত হয়।এখানে আবার ভাগবণ্টনের বিষয়ও জড়িত থাকে।ফলে কিছু কিছু পাঠ্যপুস্তক লেখা হয়েছে যেগুলো  শিক্ষার্থী মূল্যায়নে জন্য প্রণীত নির্দেশনার সাথে সাংঘর্ষিক।এই রকম এক সিরিজ বই ছিল ইংরেজি ব্যাকরণ বইটি।পাবলিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থী মূল্যায়ণের জন্য যেভাবে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হত তার পঞ্চাশ ভাগও সে সিরিজের বইতে ছিল না।কিন্তু দীর্ঘদিন সে বইটি দাপটের সাথে বিনামূল্যের  জোয়ারে ভেসে আসত।শ্রেণি কক্ষে যারা শিখন শিক্ষণে রত ছিলেন তাদের অধিকাংশ দু'একটা অধ্যায় ব্যতীত এই বইগুলো ধরার প্রয়োজন অনুভব করতেন না।সাথে সাথে শিক্ষার্থীদেরও তীব্র অসন্তোষ লক্ষ্য করা গেছে।
বর্তমানে নতুন সিরিজের ইংরেজি গ্রামার বিতরিত হচ্ছে।এটাও যে মূল্যায়নের জন্য নির্দেশিত সবগুলো দিক পূর্ণ করছে তা বলা অসম্ভব।মূলত যাচ্ছেতাই একটা বই বাজারে দিয়ে দেয়া হল।ছাপা ও কাগজ যেমন নিম্ন মানের তেমনি বইয়ের মানও।আপনারা NCTB এর মূল্যায়নের নির্দেশনা এবং নমুনা প্রশ্নপত্র মিলিয়ে দেখুন।পাঠ্যপুস্তক শুধুমাত্র শিক্ষকের জন্যতো নয়, এটি শিক্ষার্থীর চাহিদা পূর্ণ করার জন্য রচিত হয়।ছাপার মানের দৈন্যতা বইয়ের প্রতি শিক্ষার্থীর আগ্রহকে স্তিমিত করে দেয়।পাঠ্য বইয়ের এইরূপ দৈন্যদশার জন্য সমালোচকগণ NCTB এর সংঘবদ্ধ চক্রকেই দায়ী করেন ; তারা এর জন্য শিক্ষাবিভাগের একেবারে উপরের কর্তাদেরও সন্দেহ করেন।মূলত জনগণের মনোরঞ্জনের জন্যই বিনামূল্যের বই বিতরণের উৎসব।আমজনতা ব্যবসা বুঝেনা।তারা কিছু একটা পাচ্ছে এটাই বুঝে।হাতুড়ে ডাক্তার তের রকম ঔষধ দিলে রোগী প্রথম প্রথম কিছু বলেনা। যখন ঔষধে   রিয়েকশান হয় তখনই ঝামেলার সৃষ্টি হয়।শিশুদের নিয়ে যে ভয়াবহ ব্যবসা চলছে তা একসময় মানুষ বুঝে যাবে, তখনই ঝামেলা হবে।আমরা জানতে চাই NCTB তে চাকুরীরতদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কতটুকু।আমাদের কোটি সন্তানের দায়ত্ব যারা নিচ্ছেন তারা কী মানের শিক্ষাবিদ- তা জানার অধিকার আমাদের আছে। এক্ষেত্রে আমরা যতটুকু জানি,তা মোটেই সুখকর নয়।ফলে সরকারকেই দায়িত্ব নিতে হবে।কারণ,এই সরকাররের উপরই আমাদের প্রত্যাশা বেশি।

একাধিক পাঠ্যপুস্তক নির্বাচনঃ

আমরা মনে করি,গণিত,ইংরেজি ব্যাকরণ,বিজ্ঞানের বিষয় সমূহের বইয়ের ক্ষেত্রে একাধিক বইয়ের অনুমোদন দেয়া উচিত।বিনামূল্যের বইকে প্রতিযোগিতার বাজারে আনা হোক;তখনই দেখা যাবে কত ভালো মানের বই লেখা হয়েছে,শিক্ষার্থীরা কোনটিকে আগ্রহের সাথে গ্রহণ করছে।
গণিত বইয়ের ক্ষেত্রে সৃজনশীল প্রশ্নপত্রের উদাহরণ খুবই কম।কোন কোন অধ্যায়ে দেয়াই হয়নি। সৃজনশীল প্রশ্নের সাথে দ'চারটা উত্তরের সন্নিবেশ ঘটালেই শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক উপকৃত হত।বাইরের দুনিয়ায়ও গণিতের পাঠ্যপুস্তক আছে;সেগুলো দেখলেই বিচার করা যাবে।প্রয়োজনে বাইরের বইয়ের বাংলা ভার্শনের অনুমোদন দেয়া হোক।যার ইচ্ছে সে সাহায্য নিবে।
আমদের দেশে একটা বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বমানের নেই;যদিও আমাদের অহংকারের শেষ নেই।বিশ্বমানের শিক্ষার জন্য শিক্ষক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।আমাদের যদি এত এত সেরারা থাকেন তাহলেতো আমরাই সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকারী হতে পারি।কিন্তু তা তো হচ্ছে না।এই পর্যায়ে আমি মনে করি মাধ্যমিক স্তরে  কিছু কিছু বিষয়ের একাধিক বইয়ের অনুমোদন দেয়া উচিত। প্রয়োজনে কিছু বিষয়ের উপরে বাইরের বই আমদানি ক্রা যায়।অনেক কিছুইতো আমদানি হয়,'একটা বই আমদানি হলে মহাভারত অশুদ্ধ হবেনা।
আমার সুহৃদের প্রসঙ্গে ফিরে আসি।তার অভিমত হচ্ছে সরকার বিনামূল্যে একটা সেরা(?)বই অনুমোদন দিন;ভালো কথা। পাশাপাশি আরও বই নগদ টাকায় কিনবার সুযোগ দিন।তখন শিক্ষার্থী, শিক্ষক অভিভাবক সকলেই বুঝতে সক্ষম হবেন:সরকার কোন সেরাটি নির্বাচন করেছেন।আমিও আমার বন্ধু শিক্ষাবিদের সাথে একমত।সরকার যে সাহসী এবং শিক্ষাবান্ধব তা তারা প্রমাণ করুক।  



শুক্রবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৭

টাইমলাইনের চিত্রকলাঃআধুনিক চিত্রশিল্পীর জীবনবোধ ও শিল্পচর্চা

টাইমলাইনের চিত্রকলাঃআধুনিক চিত্রশিল্পীর জীবনবোধ ও শিল্পচর্চা  


পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ জীবনাচারে পরষ্পররের থেকে কিছুটা ভিন্ন।আপন বলয়ে সে রাজা;সে নতুন কিছু,ভিন্ন সত্ত্বা। শিল্পী তার শিল্পের মাধ্যমে তার কালকে শুধু ধরে রাখে তা নয়;তিনি তার আত্মার আকুতিও শিল্পের মধ্যদিয়ে ফুটিয়ে তোলেন ভবিষ্যতের  সম্ভাবনা আর সংকটকে দর্শকদের সম্মুখে উপস্থাপন করেন।আধুনিক কালের নব্য শিল্পচর্চার অন্যতম দিকের মধ্যে লক্ষণীয় হল:সমাজের অস্থিরতা,অবিশ্বাস আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।এদের মধ্যে অনেকে নিভৃতচারী ;নীরবে রঙ ও রেখায় সমাজবাস্তবতাকে উপস্থিত করছেন।কেউ কেউ মাঝে মাঝে সামাজিক মাধ্যমে দ’একটা ছবি পোস্ট করেন।আমি চট্টগ্রাম শহরকেন্দ্রিক দু’জন শিল্পী সম্পর্কে আলোচনা করতে চাই।এইসব চিত্রশিল্পীগণ বিদ্যমান বিপক্ষ শক্তির বিরুদ্ধে ক্রমাগত লড়ছেন এবং তাদের সংগ্রামী  সত্ত্বাকেও   ধরে রাখছেন।
এদের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক চিত্র শিল্পীগণ অগ্রগামী। এরা ছবির মাধ্যমে আপন ব্যক্তিসত্বা এবং অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন।
এখানে কয়েকজনের ছবির ভাষা আর অভিব্যক্তি প্রকাশের ধরণ প্রশংসার দাবী রাখে।ফেসবুকের টাইম লাইনে কিছু কিছু ছবি রেখে  তারা সময়ের অখণ্ডতাকে প্রতিষ্টিত করার চেষ্টা করেছেন।
এদের মধ্যে একজন হলেন মারুফ আদনান ।তিনি  একজন ক্লান্তিহীন শিল্পসেবী।তার কয়েকটি সিরিজে আঁকা ছবির মাধ্যমে সমাজ ও কালের সংকট এবং দৈন্যতার ছবি।বিশষ করে গলিত ভাবু,শরীর ভর্তি মৃত পিতার হাড়,বুদবুদ ও পিতাদের দ্বিত্ব অঙ্গ সমূহ সিরিজে আঁকা ছবিসমূহ উল্লেখযোগ্য।কিছুটা মূর্ত, কিছুটা বিমূর্ত অভয়ব সমাজের বিশৃঙ্খল রূপের প্রতিচ্ছবি।প্রতারক চরিত্রের  উপস্থিতিকে তিনি তার রেখায় ধরে রাখার  চেষ্টা করেছেন এবং নিঃসন্দেহে সফলও হয়েছেন। ।তিনি মানুষের কর্ম ও কল্পনার বৈপরীত্য সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন। ।সাথে সাথে মানবীয় বন্যতাকে সুচারুভাবে দেখাতে চেয়েছেন এবং সফলও হয়েছেন।আমার মনে হয় তিনি চিত্রশিল্পের প্রতিটি মাধ্যম নিয়ে সচেতনভাবে নিরীক্ষা করছেন।হয়তো এর মধ্যদিয়ে নতুন শিল্পের ধারার সৃষ্টি হবে।

এদের মধ্যে অন্যতম একজন গোলাম সারোয়ার জামিল;ইনি ছাত্র অবস্থায় রঙ ও রেখায় নিজস্বতা নির্মাণে সচেষ্ট হয়েছেন।তার প্রথম দিকের ছবিতে পাথরের উপস্থিতি লক্ষণীয়।এর মধ্যদিয়ে তিনি বর্তমান সময়ের  চৈতন্যের বিলুপ্তিকে নির্দেশ করেছেন বলে মনে।তার স্টোন লাইফ সিরিজে আঁকা ছবিসমূহে রংয়ের ব্যবহারে আত্মসচেতনতার প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়।তিনি যেন পাথরের মাঝেই নিজেকে নিঃশেষ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন।তার সাম্প্রতিক কালে আঁকা ছবিতে সমাজে বিদ্যমান বৈষম্য আর একাকীত্বকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা কতেছেন।পরান পাখি,টোকাইয়ের পানি পান,নৌকা চালানো, ওয়াটার কালারে আঁকা মুখচ্ছবি ইত্যাদি ছবির মাধ্যমে তিনি সময়কেই ধরতে চেয়েছেন। পথপাশের পানির টেপ থেকে  পানি পান সমাজের একটা অংশের গভীরতম সংকটকে উপস্থাপন করেছে ;যেন এক দুঃসহ অন্ধকার গড়িয়ে পড়ছে।এই ছবিতে কালো রঙ বর্তমানের অন্ধকার সময়ের প্রতিনিধিত্ব করে।২০১০ সালে পাথরের মাঝে শান্তি তালাশ করলেও বর্তমানে তিনি নির্মোহ দৃষ্টিতে চারপাশ দেখতে চেয়েছেন।ফলে শহুরে জীবনের দুরাবস্থাকে নৌকা চালিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন।ক্ষমতাসীনদের দুর্মতি কিভাবে শহরকে ধ্বংস করে দিচ্ছে তার প্রতিচ্ছবি এই ছবিতে রয়েছে।পাশাপাশি নামহীন ভয়ঙ্কর মুখের ছবি  বর্তমানের ভয়াল অভয়বগুলোর প্রতিচ্ছবি।ইনি তার মূর্ত ছবির প্রতি বিশেষভাবে আগ্রহী।তার চিত্রকলার মধ্যে বৃদ্ধপিতার ওয়াটার কালারে আঁকা চবি অনন্য;এটি কালোত্তীর্ণ হবে বলে আমার বিশ্বাস।তার নিজস্বতার বিশেষ দিক হল:  তিনি যে  সমাজের অংশ -  তা আম জনতার বুঝতে অসুবিধা হয় না;যদিও  শিল্পের বিষয়বস্তু বুঝিয়ে দেয়া  শিল্পীর দায়িত্ব নয়।শিল্পরসিক নিজের মত করে সৃষ্টিকে অনুধাবনের চেষ্টা করবেন।
রাষ্ট্রের সর্বত্র যেখানে মানবতার অবনমন ঘটছে,সেখানে স্বাধীন স্বত্ত্বায় বিশ্বাসী শিল্পীগণ বড় একা।তারা মানুষকে ভালবেসে শুধু কষ্টের বেসাতি করেই চলছেন।


বুধবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৭

মধ্যবয়সের দাম্পত্য সংকট

মধ্যবয়সের দাম্পত্য সংকট
শুরুর  কথা: সব রকম কাজ বা  চাকুরীর  জন্য শিক্ষা এবং  ট্রেনিং  প্রয়োজন হয়;নতুবা  চাকুরীতে  প্রত্যাশিত মাত্রায়  সেবা প্রদান করা অসম্ভব হয়।মানব জীবনে  সবচেয়ে  চ্যালেঞ্জিং  কাজ হচ্ছে যথাযতভাবে  পরিবার প্রতিপালন করা।এরজন্য  স্বীকৃত কোন প্রকার  ট্রেনিং  এর ব্যবস্থা নেই।অধিকাংশ ক্ষেত্রে  দম্পতি পরবর্তীকালের  আসন্ন সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে  বেখবর  থাকেন এবং সঠিক সময়ে সঠিক  সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হন।ফলে মধ্যবয়সে এসে দুর্বহ সংকটে উপনীত হন।এখন আমরা মধ্যবয়সী  দম্পতির  জীবনে সৃষ্ট সমস্যা ও করনীয়  সম্পর্কে আলোকপাত করার চেষ্টা করব।
মধ্যবয়সী দম্পতির  সাধারণ সমস্যা হচ্ছে বিবিধ অসুস্থতা অধিকাংশ দম্পতির  সাধারণ সমস্যা হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের শারীরিক   অসুস্থতা।বিশেষকরে   মহিলারা শারীরিক  সমস্যায়  বেশি আক্রান্ত হন।ব্যাক   পেইন, মাঝায়  ব্যথা,হাঁড়  ক্ষয়, ডায়াবেটিকস, যৌন জড়তা ইত্যাদি।পুরুষদের ক্ষেত্রে শারীরিক ঘনিষ্ঠতায় অনাগ্রহ,হার্টের  অসুখ,ডায়াবেটিকস ইত্যাদি।
মধ্যবয়সের দাম্পত্য সংকটের শুরু হয় বিয়েরও আগে।এর পেছনে বহুবিদ কারণ আছে।আমি প্রধান দু’একটি দিক নিয়ে আলোচনা করতে চাই;যেগুলো অযাচিত কারণে প্রায় আলোচনার বাইরে আছে।    
   


অপরিকল্পিত বৈবাহিক জীবন :বাংলাদেশের   প্রায় সকল যুবক-যুবতী তাদের বৈবাহিক জীবন অপরিকল্পিতভাবে শুরু করে।অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাতাপিতা বা নিকটজন যুবক-যুবতীর বিয়ের ব্যবস্থা করিয়ে দেন।অনেক যুবক ব্যক্তিগত জীবনে তখনো অর্থনৈতিক দিক দিয়ে শূণ্য অবস্থায় থাকেন। তারা তাদের  জীবন কিভাবে  কাটাবে,পারষ্পরিক দায়িত্ব ও কর্তব্য কী,কিভাবে নিজেদের জীবনকে সাজাবে কোন কিছু সম্পর্কে  পূর্ব তাদের পূর্ব ধরণা থাকেনা।
পারিবারিকভাবে দায়িত্ব বণ্টন না করা:বাংলাদেশে অধিকাংশ পরিবারের যুবকদেরকে পারিবারিক দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়া হয়না।ফলে তারা বিয়ের আগে কখনোই পরিবার প্রতিপালন সম্পর্কে জানার প্রত্যক্ষ সুযোগ পায়না।অন্যদিকে বিয়ে নিয়ে শিক্ষামূলক মুক্ত আলোচনা করার ঐতিহ্য বাংলাদেশে নেই।এইজন্য বিয়ের মধ্যদিয়ে দম্পতি  রহস্যময় জগতে প্রবেশ করে।কিন্তু পারিবারিক জীবন হল বাস্তব জীবনচর্চা ;এটা তারা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়।

যৌথ পারিবারিক কাঠামো:

যৌথ পারিবারিক কাঠামো নতুন প্রজম্মের সৃজনশীল মনন প্রতিষ্ঠার পেছনে অন্যতম প্রতিবন্ধক। অধিকাংশ পরিবারের অগ্রজেরা নতুনদেরকে কোন সুনির্দিষ্ট কাজ করার দায়িত্ব দেননা।ফলে নবদম্পতি ভুল কর আর শেখ এই পদ্ধতিতে অগ্রসর হয় এবং অনেক ভুল তাদের পারিবারিক জীবনকে অনুত্তীর্ণ সমস্যায় পতিত করে।

নারী ও পুরুষের স্বাস্থ্যগত সমস্যা:মধ্যবয়সী অধিকাংশ দম্পতি ক্রমিক রোগে আক্রান্ত হয়।এদের মধ্য অনেকে অপরিকল্পিত সন্তান গ্রহণের কারণে সমস্যাকে ডেকে আনে।বহু মা আছেন তারা স্বাস্থ্যগত অবস্থার বিরুদ্ধে পরপর মা হন।ফলে তাদের স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে ;এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।পুরুষদের মাঝেও অনেকে মধ্যবয়সে এসে বিব্রতকর সংকটে পড়েন।আমাদের পরিচিত অনেকে রয়েছেন যারা যৌন জীবন থেকে অবসর নিয়েছেন।তারা চরম হতাশায় আক্রান্ত হন।এমন অবস্থা  দম্পতির দ্বৈত জীবনকে বিশৃঙ্খল করে দেয়।কারণে অকারণে ঝগড়া লেগে থাকে।
মূলত বিজ্ঞানভিত্তিক জীবনাচারে অনভ্যস্ততা আর অজ্ঞতা অতি সাধারণ বিষয়কে জটিল করে তোলে।মধ্যবয়সী দম্পতির ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটে।এইক্ষেত্রে নারীদের অনেকে যৌন জড়তায় আক্রান্ত হন।যারা উচ্চমাত্রায় ভুগেন তারা দাসির কর্মে অগ্রগামী হন বটে;স্ত্রী হিসেবে জীবনাচারে ব্যর্থ হন।এমন অবস্থা অনেক সময় সংসারের ভাঙ্গনকে অনিবার্য করে দেয়।এর থেকে মুক্তির জন্য যথাযথ চিকিৎসা প্রয়োজন ;কিন্তু বাঙ্গালির ঐতিহ্যগত আচরণ এইরকম ব্যধির প্রতিকারকে বাধাগ্রস্ত করছে।ফলে বহু বিবাহিত নারী এবং পুরুষ অবৈধ সম্পর্কে জড়িত হচ্ছে এবং তাদের বিপথগামিতার কারণে আপন সন্তানও হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে।বর্তমানে এই সমস্যা যে কত গভীর এবং ভয়াবহ তা শব্দে প্রকাশ করা সম্ভব নয়।    এখন    সবদিকে ভাঙ্গনের কাল চলছে;তাই দম্পতিকে মুক্তমনে এগিয়ে আসা উচিত।
আমার পরিচিত এক দম্পতি   প্রায় একদশক বর্ণিত সমস্যায় ছিলেন।পরবর্তিতে চিকিৎসকের পরামর্শে মুক্তি পান।অন্তত দুটো দম্পতির বিচ্ছেদ ঘটে।উল্লেখ্য যে,নারীর সৃষ্ট সমস্যার জন্য দম্পতির পুরুষ সদস্যই দায়ী বলে অনেকে মনে করেন।এখন প্রশ্ন হলোঃএই অবস্থা থেকে মুক্তির উপায় কী? পাত্র-পাত্রীদের যারা বিবাহ করতে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়েছেন তাদেরকে যথাসম্ভব অবহিত করণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।বিশেষ করে পুরুষদের এগিয়ে আসা উচিত।
বিবাহিত পুরুষদের ক্ষেত্রেও অনেকের  শারীরিক সম্পর্কে জড়িত হওয়া থেকে অকালে অবসর নেন।ফলে তারা প্রচণ্ড হতাশায় আক্রান্ত হন।প্রথমদিকে  তাদের অর্ধাঙ্গিনীগণ  গুরুত্ব দেন না;পরে তারা অনেকেই বিভ্রান্তির পথে পা বাড়ান।
একদিকে জটিল সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পারিবারিক বন্ধনকে শিথিল করে দিচ্ছে, অন্যদিকে ধর্মীয় বিধিবিধান প্রতিপালনের প্রতি উপেক্ষা দাম্পত্যজীবনকে হুমকীর মুখে ঠেলে দিচ্ছে।
           বর্তমানে গ্রাম পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে;এখানে স্বাস্থসহকারি হিসেবে কর্মরত ডাক্তারদের মাধ্যমে গ্রামের সমস্যাক্রান্ত দম্পতিকে সেবা প্রদান করা যায়।ইন্টারনেটের মুক্ত বিশ্বে মানুষের  আচরণিক পরিবর্তন খুব দ্রুত ঘটছে;এই পরিবর্তন সামাজিক মিথষ্ক্রিয়ার স্বপক্ষে কমই হচ্ছে।ফলে তা পারিবারিক জীবনকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে।এথেকে পরিত্রাণের জন্য ঐক্যবদ্ধ সামাজিক আন্দোলন প্রয়োজন। বর্তমানে শহুরে জীবনে পারষ্পরিক অবিশ্বাস প্রকট আকার ধারণ করেছে।এরফলে স্বামী-স্ত্রী অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে।বিশেষকরে যেসকল দম্পতি চাকুরী করেন তাদের অধিকাংশই এই রকম সমস্যার  মুখোমুখি। পারিবারিক বন্ধনের যে শৈল্পিক সৌন্দর্য রয়েছে এখানে তা অনুপস্থিত।অনেকে সহকর্মীকে কল্পনায় গেঁথে ঘরে ফিরেন।আসলে, পরিশ্রান্ত দম্পতি ঘরে ফিরলেও ঘরকরা হয়না।এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য  উপযুক্ত  কৌশল প্রণয়ন করা উচিত।আমি মনে করি এইক্ষেত্রে  দম্পতির একজন চাকুরী করবে;বাকিজন অর্থনৈতিক দিক দেখাশুনা করবেন।একটু খোলাসা করে বললে বলা যায়,স্বামী চাকুরী করলে ব্যাংকের চেকের টাকা স্ত্রী উত্তোলন করবেন।তাহলে স্ত্রীর অর্থনৈতিক দিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।  উচ্চশিক্ষিত হলে সকলকে যে চাকুরী করতে হবে এই মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে।সম্ভব হলে পারিবারিক পরিমণ্ডলে থেকে অতিরিক্ত আয়ের চেষ্টা করা যায়।বর্তমানে অনেক দম্পতির একজন মুরগীর খামার কিংবা পশু পালন করে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় সাহসী ভূমিকা রাখছে।

উচ্চবিলাসী চিন্তাধারা :

অনেক সময় দম্পতির অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা মধ্যবয়সী দম্পতির দাম্পত্যকলহের কারণ হয়।পরিবারের আয়ের সাথে ব্যয়ের দুরত্ব নেতিবাচকদিকে বেড়ে গেলে সমস্যার সৃষ্টি হয়।এইজন্য দম্পতিকে দ্রুততম উপায়ে বিত্তবান হওয়ার ইচ্ছে পরিহার করতে হবে।সন্তান প্রতিপালনে প্রতিবেশির ব্যয়ের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে পৃথিবীর বৈচিত্রের প্রতি দৃষ্টি দিতে হবে।নিজ নিজ সন্তানদেরকে স্বচ্চ ও মানসিকতা নিজে বেড়ে ওঠার শিক্ষা দিতে হবে।সাথে সাথে তাদেরকে যৌবনে স্বাধীনতাও দিতে হবে যাতে তারা কর্ম জীবনের শুরুতেই ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাহসী হয়ে উঠতে পারে।
দম্পতির বার্ধক্যের ভাবনাও অনেক সময় তাদের চলমান সময়কে অশান্ত করে তোলে।বর্তমানে দ্রুত নগরায়নের প্রভাবে একক পরিবার দ্রুত বিকশিত হচ্ছে।এটি মাতাপিতাদের আসন্ন নিরাপত্তাহীনতাকে  যেন অনিবার্য করে দিচ্ছে।এর থেকে উত্তরণের জন্য  সন্তানদের নৈয়ায়িক বোধেকে যথার্থভাবে বিকশিত করতে হবে ;এবং এটি নিজের কর্মদিয়েই দেখাতে হবে।দম্পতিগণ অবশ্যই তাদের উপর নির্ভরশীল বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের দায়িত্ব নিতে হবেপ্রতিটি মানুষ তার মনের ভার বইবার মানুষ খোঁজে; দেহের ভার নয় ।এইজন্য শিশুদের কৈশর পেরনোর আগে স্নেহবঞ্চিত করা যাবে না।বর্তমানে বহু পরিবার সন্তানদের শৈশবেই হোস্টেলে রেখে পড়ালেখা করাচ্ছেন।এদের মধ্যে অধিকাংশ সন্তান বিপথে যাচ্ছে;নেশাগ্রস্থ হচ্ছে কিংবা জঙ্গিবাদের দীক্ষা নিচ্ছে।এইজন্য সন্তানদের  আবশ্যিকভাবে ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করতে হবে।এতে তারা একদিকে যেমন নিষ্কলুষ জীবনে প্রতি আগ্রহী হবে অন্যদিকে মাতা পিতার প্রতি দায়িত্ব পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবে।আইন দিয়ে সব হয়না তা আমাদেরকে অনুধাবন করতে হবে।
আমরা  পত্রিকার পাতায় অসহায় মাতাপিতার দুর্দশার সংবাদ দেখি।উচ্চশিক্ষিত সন্তান বৃদ্ধ মাতাপিতাকে অবহেলায় ছুঁড়ে ফেলে দেয়।যেখানে  সামাজিক নিরাপত্তাবলয় দুর্বল সেখানে উপার্জনক্ষম সদস্যারাই নির্ভরশীল সদস্যদের দায়িত্ব নিবে;এটি যুক্তিসংগত।
দম্পতির বিবাহপূর্ব প্রস্তুতি বিবাহপরবর্তী জীবনকে সাফল্যের দিকে নিয়ে যেতে পারে।এজন্য বহুপক্ষীয় পদক্ষেপ নেয়ার এখনি সময়।


Printfriendly

Featured Post

জাতি নির্মাণে গল্পযোগ

  জাতি নির্মাণে গল্পযোগ   ১ ।   মানুষ সামাজিক জীব।তারা পরিবার গঠন করে।তারপর সে-ই পরিবার একটি গোষ্ঠীতে রুপান্তরিত হয় এবং ধীরে ধীরে একাধিক গোষ...