মধ্যবয়সের দাম্পত্য সংকট
শুরুর
 কথা: সব রকম কাজ বা  চাকুরীর  জন্য শিক্ষা এবং  ট্রেনিং  প্রয়োজন হয়;নতুবা  চাকুরীতে  প্রত্যাশিত
মাত্রায়  সেবা প্রদান করা অসম্ভব
হয়।মানব জীবনে  সবচেয়ে  চ্যালেঞ্জিং  কাজ হচ্ছে
যথাযতভাবে  পরিবার প্রতিপালন
করা।এরজন্য  স্বীকৃত কোন প্রকার  ট্রেনিং  এর ব্যবস্থা
নেই।অধিকাংশ ক্ষেত্রে  দম্পতি
পরবর্তীকালের  আসন্ন সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ
সম্পর্কে  বেখবর  থাকেন এবং সঠিক সময়ে সঠিক  সিদ্ধান্ত নিতে
ব্যর্থ হন।ফলে মধ্যবয়সে এসে দুর্বহ সংকটে উপনীত হন।এখন আমরা মধ্যবয়সী  দম্পতির  জীবনে সৃষ্ট
সমস্যা ও করনীয়  সম্পর্কে আলোকপাত করার
চেষ্টা করব।
মধ্যবয়সী
দম্পতির  সাধারণ সমস্যা হচ্ছে বিবিধ অসুস্থতা । অধিকাংশ দম্পতির  সাধারণ সমস্যা হচ্ছে বিভিন্ন ধরণের শারীরিক   অসুস্থতা।বিশেষকরে   মহিলারা শারীরিক  সমস্যায়  বেশি আক্রান্ত
হন।ব্যাক   পেইন, মাঝায়  ব্যথা,হাঁড়  ক্ষয়, ডায়াবেটিকস, যৌন জড়তা ইত্যাদি।পুরুষদের ক্ষেত্রে শারীরিক ঘনিষ্ঠতায়
অনাগ্রহ,হার্টের  অসুখ,ডায়াবেটিকস ইত্যাদি। 
মধ্যবয়সের
দাম্পত্য সংকটের শুরু হয় বিয়েরও আগে।এর পেছনে বহুবিদ কারণ আছে।আমি
প্রধান দু’একটি দিক নিয়ে আলোচনা করতে চাই;যেগুলো অযাচিত কারণে প্রায় আলোচনার বাইরে
আছে।    
 
 
   
অপরিকল্পিত বৈবাহিক জীবন :বাংলাদেশের   প্রায় সকল
যুবক-যুবতী তাদের বৈবাহিক জীবন অপরিকল্পিতভাবে শুরু করে।অধিকাংশ ক্ষেত্রে মাতাপিতা
বা নিকটজন যুবক-যুবতীর বিয়ের ব্যবস্থা করিয়ে দেন।অনেক যুবক ব্যক্তিগত জীবনে তখনো
অর্থনৈতিক দিক দিয়ে শূণ্য অবস্থায় থাকেন। তারা তাদের  জীবন কিভাবে  কাটাবে,পারষ্পরিক দায়িত্ব ও কর্তব্য কী,কিভাবে নিজেদের
জীবনকে সাজাবে কোন কিছু সম্পর্কে  পূর্ব তাদের
পূর্ব ধরণা থাকেনা। 
পারিবারিকভাবে দায়িত্ব বণ্টন না
করা:বাংলাদেশে অধিকাংশ পরিবারের যুবকদেরকে পারিবারিক দায়িত্ব বণ্টন করে
দেয়া হয়না।ফলে তারা বিয়ের আগে কখনোই পরিবার প্রতিপালন সম্পর্কে জানার প্রত্যক্ষ
সুযোগ পায়না।অন্যদিকে বিয়ে নিয়ে শিক্ষামূলক মুক্ত আলোচনা করার ঐতিহ্য বাংলাদেশে
নেই।এইজন্য বিয়ের মধ্যদিয়ে দম্পতি  রহস্যময় জগতে
প্রবেশ করে।কিন্তু পারিবারিক জীবন হল বাস্তব জীবনচর্চা ;এটা তারা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়।
যৌথ পারিবারিক কাঠামো:
যৌথ
পারিবারিক কাঠামো নতুন প্রজম্মের সৃজনশীল মনন প্রতিষ্ঠার পেছনে অন্যতম প্রতিবন্ধক।
অধিকাংশ পরিবারের অগ্রজেরা নতুনদেরকে কোন সুনির্দিষ্ট কাজ করার দায়িত্ব দেননা।ফলে
নবদম্পতি ভুল কর আর শেখ এই পদ্ধতিতে অগ্রসর হয় এবং অনেক ভুল তাদের পারিবারিক
জীবনকে অনুত্তীর্ণ সমস্যায় পতিত করে।
নারী ও পুরুষের স্বাস্থ্যগত সমস্যা:মধ্যবয়সী
অধিকাংশ দম্পতি ক্রমিক রোগে আক্রান্ত হয়।এদের মধ্য অনেকে অপরিকল্পিত সন্তান
গ্রহণের কারণে সমস্যাকে ডেকে আনে।বহু মা আছেন তারা স্বাস্থ্যগত অবস্থার বিরুদ্ধে
পরপর মা হন।ফলে তাদের স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে ;এবং শরীরের রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।পুরুষদের মাঝেও অনেকে মধ্যবয়সে এসে বিব্রতকর সংকটে
পড়েন।আমাদের পরিচিত অনেকে রয়েছেন যারা যৌন জীবন থেকে অবসর নিয়েছেন।তারা চরম হতাশায়
আক্রান্ত হন।এমন অবস্থা  দম্পতির দ্বৈত
জীবনকে বিশৃঙ্খল করে দেয়।কারণে অকারণে ঝগড়া লেগে থাকে।
মূলত
বিজ্ঞানভিত্তিক জীবনাচারে অনভ্যস্ততা আর অজ্ঞতা অতি সাধারণ বিষয়কে জটিল করে
তোলে।মধ্যবয়সী দম্পতির ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটে।এইক্ষেত্রে নারীদের অনেকে যৌন জড়তায়
আক্রান্ত হন।যারা উচ্চমাত্রায় ভুগেন তারা দাসির কর্মে অগ্রগামী হন বটে;স্ত্রী হিসেবে জীবনাচারে ব্যর্থ হন।এমন অবস্থা অনেক সময় সংসারের
ভাঙ্গনকে অনিবার্য করে দেয়।এর থেকে মুক্তির জন্য যথাযথ চিকিৎসা প্রয়োজন ;কিন্তু বাঙ্গালির ঐতিহ্যগত আচরণ এইরকম ব্যধির প্রতিকারকে বাধাগ্রস্ত
করছে।ফলে বহু বিবাহিত নারী এবং পুরুষ অবৈধ সম্পর্কে জড়িত হচ্ছে এবং তাদের
বিপথগামিতার কারণে আপন সন্তানও হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে।বর্তমানে এই সমস্যা যে কত
গভীর এবং ভয়াবহ তা শব্দে প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
 ।  এখন    সবদিকে ভাঙ্গনের কাল চলছে;তাই দম্পতিকে মুক্তমনে এগিয়ে আসা উচিত।
আমার পরিচিত এক
দম্পতি   প্রায় একদশক বর্ণিত
সমস্যায় ছিলেন।পরবর্তিতে চিকিৎসকের পরামর্শে মুক্তি পান।অন্তত দুটো দম্পতির
বিচ্ছেদ ঘটে।উল্লেখ্য যে,নারীর সৃষ্ট সমস্যার জন্য দম্পতির
পুরুষ সদস্যই দায়ী বলে অনেকে মনে করেন।এখন প্রশ্ন হলোঃএই অবস্থা থেকে মুক্তির উপায়
কী? পাত্র-পাত্রীদের যারা বিবাহ করতে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়েছেন তাদেরকে যথাসম্ভব
অবহিত করণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।বিশেষ করে পুরুষদের এগিয়ে আসা উচিত। 
বিবাহিত
পুরুষদের ক্ষেত্রেও অনেকের  শারীরিক
সম্পর্কে জড়িত হওয়া থেকে অকালে অবসর নেন।ফলে তারা প্রচণ্ড হতাশায় আক্রান্ত
হন।প্রথমদিকে  তাদের অর্ধাঙ্গিনীগণ  গুরুত্ব দেন না;পরে তারা
অনেকেই বিভ্রান্তির পথে পা বাড়ান।
একদিকে জটিল
সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি পারিবারিক বন্ধনকে শিথিল করে দিচ্ছে, অন্যদিকে ধর্মীয় বিধিবিধান প্রতিপালনের প্রতি উপেক্ষা দাম্পত্যজীবনকে হুমকীর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। 
           বর্তমানে গ্রাম পর্যায়ে
কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে;এখানে
স্বাস্থসহকারি হিসেবে কর্মরত ডাক্তারদের মাধ্যমে গ্রামের সমস্যাক্রান্ত দম্পতিকে
সেবা প্রদান করা যায়।ইন্টারনেটের মুক্ত বিশ্বে মানুষের  আচরণিক পরিবর্তন খুব
দ্রুত ঘটছে;এই পরিবর্তন সামাজিক
মিথষ্ক্রিয়ার স্বপক্ষে কমই হচ্ছে।ফলে তা পারিবারিক জীবনকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে
নিয়ে যাচ্ছে।এথেকে পরিত্রাণের জন্য ঐক্যবদ্ধ সামাজিক আন্দোলন প্রয়োজন। বর্তমানে
শহুরে জীবনে পারষ্পরিক অবিশ্বাস প্রকট আকার ধারণ করেছে।এরফলে স্বামী-স্ত্রী অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ছে।বিশেষকরে যেসকল দম্পতি চাকুরী করেন তাদের অধিকাংশই এই রকম সমস্যার  মুখোমুখি। পারিবারিক বন্ধনের যে শৈল্পিক সৌন্দর্য
রয়েছে এখানে তা অনুপস্থিত।অনেকে সহকর্মীকে কল্পনায় গেঁথে ঘরে ফিরেন।আসলে, পরিশ্রান্ত
দম্পতি ঘরে ফিরলেও ঘরকরা হয়না।এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণের জন্য  উপযুক্ত
 কৌশল প্রণয়ন করা উচিত।আমি মনে করি এইক্ষেত্রে  দম্পতির একজন চাকুরী
করবে;বাকিজন অর্থনৈতিক দিক দেখাশুনা করবেন।একটু খোলাসা
করে বললে বলা যায়,স্বামী চাকুরী করলে
ব্যাংকের চেকের টাকা স্ত্রী উত্তোলন করবেন।তাহলে স্ত্রীর অর্থনৈতিক দিকের
নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।  ।উচ্চশিক্ষিত
হলে সকলকে যে চাকুরী করতে হবে এই মানসিকতা ত্যাগ করতে হবে।সম্ভব
হলে পারিবারিক পরিমণ্ডলে থেকে অতিরিক্ত আয়ের চেষ্টা করা যায়।বর্তমানে অনেক দম্পতির
একজন মুরগীর খামার কিংবা পশু পালন করে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় সাহসী ভূমিকা
রাখছে। 
উচ্চবিলাসী চিন্তাধারা :
অনেক সময়
দম্পতির অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা মধ্যবয়সী দম্পতির দাম্পত্যকলহের কারণ
হয়।পরিবারের আয়ের সাথে ব্যয়ের দুরত্ব নেতিবাচকদিকে বেড়ে গেলে সমস্যার সৃষ্টি
হয়।এইজন্য দম্পতিকে দ্রুততম উপায়ে বিত্তবান হওয়ার ইচ্ছে পরিহার করতে হবে।সন্তান
প্রতিপালনে প্রতিবেশির ব্যয়ের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে পৃথিবীর বৈচিত্রের প্রতি দৃষ্টি
দিতে হবে।নিজ নিজ সন্তানদেরকে স্বচ্চ ও মানসিকতা নিজে বেড়ে ওঠার শিক্ষা দিতে
হবে।সাথে সাথে তাদেরকে যৌবনে স্বাধীনতাও দিতে হবে যাতে তারা কর্ম জীবনের শুরুতেই
ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাহসী হয়ে উঠতে পারে।
দম্পতির
বার্ধক্যের ভাবনাও অনেক সময় তাদের চলমান সময়কে অশান্ত করে তোলে।বর্তমানে দ্রুত
নগরায়নের প্রভাবে একক পরিবার দ্রুত বিকশিত হচ্ছে।এটি মাতাপিতাদের আসন্ন
নিরাপত্তাহীনতাকে  যেন অনিবার্য
করে দিচ্ছে।এর থেকে উত্তরণের জন্য  সন্তানদের
নৈয়ায়িক বোধেকে যথার্থভাবে বিকশিত করতে হবে ;এবং এটি নিজের
কর্মদিয়েই দেখাতে হবে।দম্পতিগণ অবশ্যই তাদের উপর নির্ভরশীল বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের দায়িত্ব
নিতে হবে। প্রতিটি মানুষ তার মনের ভার বইবার মানুষ খোঁজে; দেহের ভার নয় ।এইজন্য শিশুদের কৈশর পেরনোর আগে স্নেহবঞ্চিত করা যাবে
না।বর্তমানে বহু পরিবার সন্তানদের শৈশবেই হোস্টেলে রেখে পড়ালেখা করাচ্ছেন।এদের
মধ্যে অধিকাংশ সন্তান বিপথে যাচ্ছে;নেশাগ্রস্থ
হচ্ছে কিংবা জঙ্গিবাদের দীক্ষা নিচ্ছে।এইজন্য সন্তানদের  আবশ্যিকভাবে ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করতে হবে।এতে তারা একদিকে যেমন
নিষ্কলুষ জীবনে প্রতি আগ্রহী হবে অন্যদিকে মাতা পিতার প্রতি দায়িত্ব পালনে
প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবে।আইন দিয়ে সব হয়না তা আমাদেরকে অনুধাবন করতে হবে।
আমরা  পত্রিকার পাতায় অসহায় মাতাপিতার দুর্দশার সংবাদ দেখি।উচ্চশিক্ষিত
সন্তান বৃদ্ধ মাতাপিতাকে অবহেলায় ছুঁড়ে ফেলে দেয়।যেখানে  সামাজিক নিরাপত্তাবলয় দুর্বল সেখানে উপার্জনক্ষম সদস্যারাই নির্ভরশীল
সদস্যদের দায়িত্ব নিবে;এটি যুক্তিসংগত। 
দম্পতির
বিবাহপূর্ব প্রস্তুতি বিবাহপরবর্তী জীবনকে সাফল্যের দিকে নিয়ে যেতে পারে।এজন্য
বহুপক্ষীয় পদক্ষেপ নেয়ার এখনি সময়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন