টাইমলাইনের চিত্রকলাঃআধুনিক চিত্রশিল্পীর জীবনবোধ ও শিল্পচর্চা
পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ জীবনাচারে পরষ্পররের থেকে কিছুটা
ভিন্ন।আপন বলয়ে সে রাজা;সে নতুন কিছু,ভিন্ন সত্ত্বা। শিল্পী তার শিল্পের মাধ্যমে তার কালকে
শুধু ধরে রাখে তা নয়;তিনি তার আত্মার আকুতিও শিল্পের মধ্যদিয়ে ফুটিয়ে
তোলেন। ভবিষ্যতের সম্ভাবনা আর সংকটকে দর্শকদের সম্মুখে উপস্থাপন
করেন।আধুনিক কালের নব্য শিল্পচর্চার অন্যতম দিকের মধ্যে লক্ষণীয় হল:সমাজের
অস্থিরতা,অবিশ্বাস আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।এদের মধ্যে
অনেকে নিভৃতচারী ;নীরবে রঙ ও রেখায় সমাজবাস্তবতাকে উপস্থিত করছেন।কেউ কেউ মাঝে মাঝে
সামাজিক মাধ্যমে দ’একটা ছবি পোস্ট করেন।আমি চট্টগ্রাম শহরকেন্দ্রিক দু’জন শিল্পী
সম্পর্কে আলোচনা করতে চাই।এইসব চিত্রশিল্পীগণ বিদ্যমান বিপক্ষ শক্তির
বিরুদ্ধে ক্রমাগত লড়ছেন এবং তাদের সংগ্রামী সত্ত্বাকেও ধরে রাখছেন।
এদের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক চিত্র
শিল্পীগণ অগ্রগামী। এরা ছবির মাধ্যমে আপন ব্যক্তিসত্বা এবং অসহায়ত্ব প্রকাশ
করেছেন।
এখানে কয়েকজনের ছবির ভাষা আর অভিব্যক্তি প্রকাশের ধরণ প্রশংসার
দাবী রাখে।ফেসবুকের টাইম লাইনে কিছু কিছু ছবি রেখে তারা সময়ের অখণ্ডতাকে
প্রতিষ্টিত করার চেষ্টা করেছেন।
এদের মধ্যে একজন
হলেন মারুফ আদনান ।তিনি একজন
ক্লান্তিহীন শিল্পসেবী।তার কয়েকটি সিরিজে আঁকা ছবির মাধ্যমে সমাজ ও কালের সংকট এবং দৈন্যতার ছবি।বিশষ করে গলিত
ভাবু,শরীর ভর্তি মৃত পিতার হাড়,বুদবুদ ও পিতাদের দ্বিত্ব অঙ্গ সমূহ সিরিজে আঁকা
ছবিসমূহ উল্লেখযোগ্য।কিছুটা মূর্ত, কিছুটা বিমূর্ত অভয়ব সমাজের বিশৃঙ্খল রূপের
প্রতিচ্ছবি।প্রতারক চরিত্রের উপস্থিতিকে তিনি তার রেখায় ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন এবং নিঃসন্দেহে সফলও হয়েছেন। ।তিনি
মানুষের কর্ম ও কল্পনার বৈপরীত্য সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন। ।সাথে সাথে মানবীয়
বন্যতাকে সুচারুভাবে দেখাতে চেয়েছেন এবং সফলও হয়েছেন।আমার মনে হয় তিনি
চিত্রশিল্পের প্রতিটি মাধ্যম নিয়ে সচেতনভাবে নিরীক্ষা করছেন।হয়তো এর মধ্যদিয়ে নতুন
শিল্পের ধারার সৃষ্টি হবে।
এদের মধ্যে অন্যতম একজন গোলাম সারোয়ার
জামিল;ইনি ছাত্র অবস্থায় রঙ ও রেখায় নিজস্বতা নির্মাণে সচেষ্ট
হয়েছেন।তার প্রথম দিকের ছবিতে পাথরের উপস্থিতি লক্ষণীয়।এর মধ্যদিয়ে তিনি বর্তমান
সময়ের চৈতন্যের বিলুপ্তিকে নির্দেশ করেছেন বলে মনে।তার স্টোন
লাইফ সিরিজে আঁকা ছবিসমূহে রংয়ের ব্যবহারে আত্মসচেতনতার প্রকাশ লক্ষ্য করা
যায়।তিনি যেন পাথরের মাঝেই নিজেকে নিঃশেষ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন।তার
সাম্প্রতিক কালে আঁকা ছবিতে সমাজে বিদ্যমান বৈষম্য আর একাকীত্বকে ফুটিয়ে তোলার
চেষ্টা কতেছেন।পরান পাখি,টোকাইয়ের পানি পান,নৌকা চালানো, ওয়াটার কালারে আঁকা মুখচ্ছবি ইত্যাদি ছবির মাধ্যমে তিনি
সময়কেই ধরতে চেয়েছেন। পথপাশের পানির টেপ থেকে পানি পান সমাজের একটা অংশের গভীরতম সংকটকে উপস্থাপন
করেছে ;যেন এক দুঃসহ অন্ধকার গড়িয়ে পড়ছে।এই ছবিতে কালো রঙ
বর্তমানের অন্ধকার সময়ের প্রতিনিধিত্ব করে।২০১০ সালে পাথরের মাঝে শান্তি তালাশ
করলেও বর্তমানে তিনি নির্মোহ দৃষ্টিতে চারপাশ দেখতে চেয়েছেন।ফলে শহুরে জীবনের
দুরাবস্থাকে নৌকা চালিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন।ক্ষমতাসীনদের দুর্মতি কিভাবে শহরকে ধ্বংস
করে দিচ্ছে তার প্রতিচ্ছবি এই ছবিতে রয়েছে।পাশাপাশি নামহীন ভয়ঙ্কর মুখের ছবি বর্তমানের ভয়াল অভয়বগুলোর প্রতিচ্ছবি।ইনি তার মূর্ত ছবির
প্রতি বিশেষভাবে আগ্রহী।তার চিত্রকলার মধ্যে বৃদ্ধপিতার ওয়াটার কালারে আঁকা চবি
অনন্য;এটি কালোত্তীর্ণ হবে বলে আমার বিশ্বাস।তার নিজস্বতার
বিশেষ দিক হল: তিনি যে সমাজের অংশ - তা আম জনতার বুঝতে অসুবিধা হয় না;যদিও শিল্পের
বিষয়বস্তু বুঝিয়ে দেয়া শিল্পীর দায়িত্ব
নয়।শিল্পরসিক নিজের মত করে সৃষ্টিকে অনুধাবনের চেষ্টা করবেন।
রাষ্ট্রের সর্বত্র যেখানে মানবতার অবনমন ঘটছে,সেখানে স্বাধীন স্বত্ত্বায় বিশ্বাসী শিল্পীগণ বড়
একা।তারা মানুষকে ভালবেসে শুধু কষ্টের বেসাতি করেই চলছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন