শনিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৮

শংকরবংশীর মৃত্যু

শংকরবংশীর মৃত্যু

একসময় খালটি খুবই খরস্রোতা ছিল।এর নাম শংকরবংশী।
এটি বসুরহাটের উপর দিয়ে প্রবাহিত।দীর্ঘদিন থেকে এটি মৃত।চলতি অর্থবছরে খালটি সংস্কারের জন্য বিপুল টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়।এটি খালটির সংস্কারের পরের অবস্থা।
এখনকার শংকরবংশী 
 কোম্পানিগঞ্জ, নোয়াখালী। 







বুধবার, ২১ মার্চ, ২০১৮

রাজাকার শব্দের ব্যবহারে রাজনীতি

রাজাকার শব্দের  ব্যবহারে রাজনীতি


বাংলাদেশে সুবিধাবাদীদের দৌরাত্ম্য অপ্রতিহত গতিতে অগ্রসরমান।বিশেষ করে রাজাকার শব্দের অনৈতিক ব্যবহার। যখন যেখানে ব্যবহার করা যায়,ব্যবহৃত হচ্ছে।আর মিডিয়া,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যাচ্ছেতাই তা ব্যব্যহার করছে;কোন বাছবিচার নেই।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে সুবিধাবাদী শব্দ হচ্ছে:রাজাকার।অবস্থা এমন যে,যারা সক্রিয় রাজনীতি করেন না তারাও এই শব্দদিয়ে আক্রান্ত।এই শব্দের অন্যায্য ব্যবহারে মহাজোটের কর্মী বা নেতারা প্রথম সারিতে।তাদের সমালোচনা করলেই হলো;আর রক্ষা নেই।
সাথে সাথে এটাও দেখা যায় যে,অত্যন্ত সৎ এবং কর্মঠ সরকারি কর্মকর্তাগণও এই নিন্দনীয় শব্দ দিয়ে আক্রন্ত হচ্ছে।এদের মধ্যে অনেক কর্মকর্তা আছেন,যাদের মাতাপিতা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।জোট সরকারের অন্যায়ের সাথে আপোষ না করলে কারণে অকারণে তারা হয়রানির শিকার হন,বিভাগীয় সুবিধা থেকে তাদের অযৌক্তিকভাবে বঞ্চিত করা হয়।খ্যাতিমান ব্যাংকার সিরাজী সাহেব সাহসী কর্মের জন্য দীর্ঘদিন হয়রানির শিকার হতে হয়েছে।অথচ যারা তাকে অন্যায়ভাবে হয়রানি করেছে তাদের বিচার হয়েছে কি?তা অজ্ঞাত।যতটুকু জানি তারা সবাই দেশপ্রেমিক হয়েছে;অতএব তাদের কিছুই হবে না।
দেশের বিপুল পরিমান অর্থ যারা লুট করে নিয়ে গেল তারা কি দেশ প্রেমিক? এখন রাজাকার শব্দের পারিভাষিক অর্থকে অধিকতর বিস্তৃত করা প্রয়োজন।দরকার হলে এরজন্য আইন করা হোক।যারা দেশকে ঠকাবেন,অন্যায়কে ন্যায় বলে চালাবেন, দুর্নীতি করবেন ,বিনাভোটে নির্বাচিত হবেন,সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুন্ন করবেন তারা সবাই রাজাকার।
বাংলাদেশের অধিকাংশ খ্যাতিমান রাজনীতিবিদের অতীত ইতিহাস তালাশ করলে দেখা যায় তাদের অধিকাংশের পূর্বপুরুষ স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় পাকিস্থানপন্থী ছিল অথবা নীরব ছিল।কারণ,মুসলিম লীগ থেকে সরে আসার মত সাহসিকতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন।কিন্তু তাদের উত্তর প্রজন্ম :সন্তান,নাতি-পুতি তাদের সাথে ঐক্যমত্য পোষণ করেনি।তারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।এটিই বাস্তবতা।
এখন সমস্যা হল:রাজাকারপুত্রদের মধ্যে যারাই জোট সরকারের সাথে ভিন্নমত প্রকাশ করেন তারাই সংকটাপন্ন। বিএনপি তে প্রচুর মুক্তিযোদ্ধা আছেন,দেশের জন্য যাদের অবদান অবিস্মরণীয়।কিন্তু তারাও নিন্দাবাক্যে আক্রান্ত হচ্ছেন।ইমরান এইচ সরকার যখন সরকারের সহযোগী হল,তখন সে বীরপুত্র।যখনই সে সরকারের বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করলো তখনই সে রাজাকার পুত্র-নাতি হয়ে গেল।
আজ দেশ উন্নয়নশীলের কাতারে প্রবেশের স্বীকৃতি পেল।এখন বিভেদের দেয়াল ভেঙ্গে ফেলা দরকার।দরকার সকল চোর বাটপারদের রাজাকার হিসেবে অভিহিত করা।সুবিধাবাদী চরিত্রের মানুষদের দেশের দায়িত্ব দেয়া যাবে না।উন্নত দার্শনিক চিন্তায় সমৃদ্ধ হয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।নচেৎ যে কোন সময় অনুত্তীর্ণ সমস্যায় পড়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে।3.21/18
                               ----

শনিবার, ১৭ মার্চ, ২০১৮

কোম্পানিগঞ্জের মাদ্রাসাভিত্তিক শিক্ষার হালহকিকত

কোম্পানিগঞ্জে মাদ্রাসাভিত্তিক শিক্ষার হালহকিকত






   বাংলাদেশের বিশাল জনশক্তি মাদ্রাসাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থার আওতায় রয়েছে।মাদ্রাসা থেকে শিক্ষা অর্জনকারীরাই দেশের একেবারে তৃণমূলে নিজকে কর্মে নিযুক্ত করেন এবং ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা প্রদানের মহান দায়িত্ব পালন করেন।তারা এই দায়িত্ব পালনে কতটুকু যোগ্য হয়ে উঠতেছেন এবং পালনে সমর্থ হচ্ছেন-তা কতটুকু আলোচিত হচ্ছে বা বিবেচিত হচ্ছে। আমার মনে হয়, এ বিশাল মানব শক্তি মানব সম্পদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।আমি এখানে কোম্পানিগঞ্জের মাদ্রাসাভিত্তিক শিক্ষার অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা করছি।



    বাংলাদেশে মাদ্রাসা শিক্ষা আলাদা ঘরানার;ঠিক যেমনটি টোল।টোলের ধরণে ভিন্নতা নেই।মাদ্রসার ধরণে আকারে ব্যবস্থাপনায় প্রার্থক্য আছে।বাংলাদেশে অপরাপর অঞ্চলের মত কোম্পানিগঞ্জে ছয় ধরণের মাদ্রাসার অস্তিত্ব আছে।এগুলো হল:এমপিও ভুক্ত  মাদ্রাসা, কওমি মাদ্রাসা,নুরানি মাদ্রাসা,নন-এমপিও ভুক্ত মাদ্রাসা,হাফিজিয়া মাদ্রাসা এবং ফোরকানিয়া মাদ্রাদা ।এমপিও ভুক্ত মাদ্রাসা সরকারি শিক্ষাক্রমের আওতাভুক্ত দ্বিনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,কওমি মাদ্রাসা সরকারি তত্ত্বাবধানের বাইরে ;এরা মূলত ভারতের দেওবন্দ উলুমের অনুসারী। এর বাইরে আছে নন এমপিও মাদ্রাসা যারা সরকারি পাঠ্যক্রম অনুসরণ করে, যদিও  এগুলোর একটিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত হয় না।এরা কেউই  সরকারি স্বীকৃতি নেয় না;অন্যকোন স্বীকৃতিপ্রাপ্ত  মাদ্রাসা থেকে পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নেয়।অন্যদিকে, নুরানি মাদ্রাসায় পবিত্র কোরান শুদ্ধভাবে পাঠ করা শেখায়।হাফিজিয়া মাদ্রাসায় পবিত্র কোরানের হিফজ তৈরি করে এবং ফোরকানিয়া মাদ্রাসা সামাজিকভাবে পরিচালিত কোরান শিক্ষার প্রতিষ্ঠান।
    মূলধারার মাদ্রাসা হচ্ছে এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।   কোম্পানিগঞ্জের প্রাচীনতম মাদ্রাসার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বামনী আছিরিয়া ফাজিল মাদ্রাসা এবং বসুরহাট ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা।এদুটো মাদ্রাসা বিংশশতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে তাদের কার্যক্রম শুরু করে।বহু আলেম এদুটো প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা অর্জন করে যশস্বী হয়েছেন।কিন্তু এসকল প্রতিষ্ঠান যুগের চাহিদা পূরণে কতটুকু ভূমিকা রেখেছে?ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে সেবাদান ব্যতীত সামাজিক,রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা প্রত্যাশিত  ভূমিকা রাখতে সমর্থ হয়েছে কী?
     ধর্মভীরু মুসলিম জনগোষ্ঠী পরকালের তালাশে নিজ নিজ সন্তানকে মাদ্রাসায় ভর্তি করায়।কিন্তু বাস্তব জীবনে এসে এদের অনেকে হতাশার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়।আমি আমার যৌবনের উচ্ছল সময়ে বামনী মাদ্রাসায় শিক্ষকতায় যুক্ত ছিলাম।আমি আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, এদের মধ্যে অধিকাংশই তাদের ভবিষ্যৎ জীবন সম্পর্কে সংশয় আর অনিশ্চয়তায় থাকে;যদিও এদের মধ্যে অনেকেই প্রচণ্ড মেধাবী।এর পেছনে বহুবিদ কারণ রয়েছে।আমাদের আলোচনার প্রান্তদেশ এসে আমরা এগুলো নিয়ে আলোচনা করবো।  এখন মাদ্রাসায় বিদ্যমান সমস্যা সম্পর্কে আলোকপাত করা যাক।
     প্রথমে এমপিও ভুক্ত মাদ্রাসার দিকে নজর দিই। প্রথমত বর্তমানে মাদ্রাসা শিক্ষায় লক্ষ্য নির্ধারণে সংকোচন ঘটেছে।মুসলিম সম্প্রদায় আল্লাহর কাছে ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ প্রার্থনা  করে।এটা সত্য যে এখানে ইহকালীন কর্মকাণ্ড পরকালীন মুক্তির পাথেয় হিসেবে ভূমিকা রাখে।এখন প্রশ্ন হলো, ইহকালে আমাদের খেতে হয়,সংসার করতে হয়,প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে হয়;এজন্য প্রতিটি শিক্ষার্থীকে দুনিয়ার কল্যাণ করার জন্যও শিক্ষা অর্জন করা আবশ্যক।কিন্তু মাদ্রাসা শিক্ষায় এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখা যাচ্ছে না।কারণ মাদ্রাসায় শিক্ষা অর্জনকারী অধিকাংশ মেধাবী শিক্ষার্থী দাখিল পরীক্ষার পরে সাধারণ শিক্ষায় চলে যায়।আমার মনে হয়,মেধাবী শিক্ষার্থীদের শতকরা ১০ জনও আলিম শ্রেণিতে ভর্তি হচ্ছে না।এ প্রসঙ্গে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে,কোম্পানিগঞ্জের কোন মাদ্রাসায় আলিম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগ নেই এবং মেধাবীরাই মূলত বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়।একজন শিক্ষার্থী পরকালীন মুক্তির লক্ষ্যে ইহকালে জীবন জীবিকার জন্য দক্ষ হয়ে উঠা আবশ্যক।আমি এরকম কয়েক জনকে চিনি যারা দাখিল পাশের পরে কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছে।পরবর্তিতে তারা মানবিক বিভাগ থেকে অনার্স-মাস্টার্স করেছে।
 তবে এদের মধ্যে যারা দাখিল পাশের পরে  দেশের কোন খ্যাতিমান প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে, তাদের জীবনের বাঁক ইতিবাচক দিকে  পরিবর্তিত হয়েছে।  বিশেষ করে তামির উল মিল্লাত তে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী ব্যক্তি জীবনে বহুমূখী প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছে।আমার এক প্রাক্তন ছাত্র একটি খ্যাতিমান মাদ্রাসায়   আলিমে ভর্তি হওয়ার পরে     আমাকে বলেছিল:স্যার, দশ বছরে আরবি ব্যাকরণ  যা শিখিনি,একটিমাত্র ক্লাসেই তারছে বেশি আত্মস্থ করেছি।

  ব্যক্তিজীবনে আমি অনেক মেধাবী ছাত্রকে দেখেছি তারা আলিম বা উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পরে ফাজিল বা কামিল পড়ার দিকে অগ্রসর হয়নি।আবার অনেককে দেখেছি যে তারা সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি ফাজিল বা কামিল ডিগ্রি অর্জন করছে।কিন্তু কোন নির্দিষ্ট  বিষয়ে অধিকতর যোগ্য হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত  করতে ব্যর্থ হচ্ছে।    চাকুরীর ক্ষেত্রে এরা খুবই সংকটে পতিত হচ্ছে।এদের অনেকে একই সেশনে একাধিক ডিগ্রি নেয়ার প্রবণতা রয়েছে;যা শিক্ষাবর্ষ বিবেচনায় অযৌক্তিক।
  দ্বিতীয়ত শিক্ষার গুণগত মানের অবনতি মাদ্রাসা শিক্ষাকে সংকটে ফেলে দিয়েছে।বিশেষ করে কোম্পানিগঞ্জের প্রায় সকল মাদ্রাসায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইসলামি ছাত্র শিবির প্রতিষ্ঠিত ছাত্র সংগঠন।   বিকল্প কোন দলের অনুসারীর উপস্থিতি এখানে নেই।ঢাকা সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ব্যতীত দেশের সর্বত্রই এমন অবস্থা বিরাজমান   অধিকাংশ  শিক্ষকের সাথে   বাংলাদেশ   জামাতে ইসলামীর  সম্পৃক্ততা রয়েছে ;তাঁরা দলের নেতা অথবা মন্ত্রণাদাতা।ফলে শিক্ষার্থীদের কারোই এই বৃত্তের বাইরে গিয়ে চিন্তা করার সুযোগ হয় না।
প্রতিষ্ঠানের সংখ্যার আধিক্য:কোম্পানিগঞ্জে ছাত্র সংখ্যার বিচারে মাদ্রাসার সংখ্যা বেশি।কোম্পানিগঞ্জে সাধারণ  মাদ্রাসার সংখ্যা ১৪(চৌদ্দ )। অন্যদিকে,মাদ্রাসা মানেই আলিম ক্লাস থাকা যেন আবশ্যক।ফলে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ আলিম ক্লাস চালু করতে আগ্রহী। কারণ ব্যাখ্যা করে লাভ নেই।যারা লেখাটি পড়ছেন,তারা নিশ্চয় সত্য আবিষ্কার করতে সক্ষম হবেন।অথচ মাত্র তিনটি মাদ্রাসায় দাখিল স্তরে বিজ্ঞান বিভাগ আছে।উল্লেখ্য যে, শতাব্দী প্রাচীন বামনী আছিরিয়া সিনিয়ার মাদ্রাসায় বিজ্ঞান বিভাগ নেই।  অনেক মাদ্রাসায় সাত আটজন শিক্ষার্থী নিয়ে আলিম ক্লাস শুরু করে। নব্বইয়ের দশকে আট জন ছাত্রের জন্য আট-দশজন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হত ;এসব নিয়ে প্রচুর আলোচনা সমালোচনা হত।শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের দুর্নীতিবাজ চক্র এসব কাণ্ড অবলীলায় করে গেছে। বর্তমানে ছাত্র সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে।কিন্তু বিজ্ঞান বিভাগে পড়ালেখার মান অসন্তোষজনক। মাদ্রাসাসমূহে অতিপ্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক সরাঞ্জম নেই,প্রয়োজনীয় শিক্ষক নেই;বিশেষ করে গণিত এবং পদার্থ-রসায়নের শিক্ষকের খুবই সংকট।আর এটা সত্য যে,মাদ্রাসার সুপার বা অধ্যক্ষ হতে গেলে শিক্ষায় ডিগ্রিলাভের কোন শর্ত নেই।অথচ উন্নত শিক্ষাদানের জন্য শিক্ষাদান পদ্ধতি বা কৌশল জানা অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।অথচ মাদ্রাসার ক্ষেত্রে এটি বাস্তবায়ন করা হয়নি ;বরং উপেক্ষা করা হয়েছে।এপ্রসঙ্গে একটি কথা বলার আবশ্যকতা অনুভব করছি।
 সরকার সাধারণ স্কুল কলেজে শিক্ষক নিয়োগে শিক্ষক-শিক্ষিকার আবশ্যকীয় অনুপাত বজায় রাখে;কিন্তু মাদ্রাসায় এটি নেই।বিশেষ করে ইবতেদায়ী পর্যায়েও তা মানা হয় না।একজন শিক্ষকের সাথে আলোচনা করলে তিনি বলেন,এদের বারো মাসে তের পার্বণ ;শরীর অসুস্থ থাকে।কোরান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিলে তারা দায়িত্ব পালনে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে।অথচ বর্তমানে মাদ্রাসায় প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি মেয়ে শিক্ষার্থী পড়া লেখা করে।
মাদ্রাসাসমূহ ইসলামি শিক্ষাকে ধারণ করতে সমর্থ হলে ইসলামের স্বর্ণযুগের মত সোনার মানুষ তৈরি হত।এরা জ্ঞান বিজ্ঞানে  বিশ্বব্যাপী প্রভাব বিস্তারে সক্ষম হত।সারা পৃথিবী এদের গবেষণার দ্বারা উপকৃত হত ।ইবনে খালদুন,ওমর খৈয়াম,ইমাম গাজ্জালীর মত মনীষীর জন্ম হত।মাদ্রসাসমূহে গবেষণার পথ সংকুচিত।
   এমপিও ভুক্ত মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার সুযোগ সীমিত।সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে।আগেকার মত জলসার প্রচলন নেই।হাইস্কুলগুলোতে এর প্রচলন অনেক আগেই রহিত করা হয়েছে।ফলে কোম্পানিগঞ্জের কোন মাধ্যমিক বিদ্যালয়েই বৃহিস্পতিবারের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়মিত হয় না।এসব কাজে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেয়া হয় না।
 এখন বাদবাকি মাদ্রাসার প্রসঙ্গে আসি।সাধারণ মাদ্রাসার কাতারে আরো যেসব মাদ্রাসা আছে, এগুলো হল নন-এমপিও ভুক্ত(যারা সরকারি স্বীকৃতি চায়),নন-এমপিও ভুক্ত(যারা এমপিও চায় না)। কোম্পানিগঞ্জে নন-এমপিও ভুক্ত(যারা এমপিও চায় না) মাদ্রসা বেশ প্রভাবশালী।এ রকম মাদ্রসার সংখ্যা আট দশটার কম নয়।এগুলোর বেশির ভাগ ভাড়া বাড়িতে চালু হয় এবং প্রায় সবগুলো দশম শ্রেণি পর্যন্ত চালু আছে।এরা অন্য কোন সরকার স্বীকৃত মাদ্রাসা থেকে  শিক্ষার্থীদের  পরীক্ষার ব্যবস্থা করে।এদের প্রতিষ্টানসমূহের অভ্যন্তরে কী হচ্ছে শিক্ষা বিভাগের কেউ জানে না;শিক্ষার্থী বা শিক্ষকের বেতন ভাতা কোন নিয়মে গ্রহণ বা প্রদান করা হয়, তা কারো জানবার দরকার হয় না;অন্যান্য মাদ্রাসার মত আউট ডোর ক্রীড়ার অস্তিত্ব এখানেও বিলুপ্তপ্রায়।শিক্ষার্থীদের প্রচুর বিদ্যা গেলানো হয়।এখানে যান্ত্রিক নিয়মে সব চলে।বন্ধের বালাই নেই।এ সকল মাদ্রাসার প্রায় সকলেরই হোস্টেল সুবিধা আছে।অন্যান্য খরচ ব্যতীত শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন নুন্যতম পাঁচশ টাকা। অভিভাবকদের কাছে এ সকল মাদ্রাসা খুবই জনপ্রিয়;নচেৎ ছোটখাটো মফস্বল শহরে ছয়-সাতটা মাদ্রাসা ছলমান থাকা অসম্ভব হত।
অন্যদিকে,গ্রামের আনাচেকানাচে, পুকুরপাড়ে,খালপাড়ে বহু নূরানি মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।নূরানি মাদ্রসার দাপটে অনকে স্থানে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছেনা  পাশাপাশি রয়েছে প্রথাগত হেফজখানা।এখানে শিক্ষার্থীদের পবিত্র কোরান হেফজ করানো হয়।
   বেশ জৌলুসপূর্ণ অবস্থায় আছে কওমি মাদ্রাসাগুলো।এখানে দূরদূরান্তের শিক্ষার্থীরা উচ্চতর শিক্ষা অর্জন করে।এসকল প্রতিষ্ঠানে পবিত্র কোরান,হাদিস, ফিকাহসহ ধর্মীয় বিষয়াদির পাঠদান করা করা হয়।বিজ্ঞানের মৌলিক বিষয়াবলী কিংবা গণিতের পাঠদান করা হয় না। দরিদ্র পরিবারের  শিশুরা এখানে পড়তে আসে।অনেক শিশু নিষ্ঠুরতম শাস্তির কারণে মাদ্রাসা ছাড়তে হয়। মাঝেমধ্যে এদের নিয়ে পত্র পত্রিকায় লেখালেখি হয়।এসকল প্রতিষ্ঠান শতভাগ  আবাসিক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় শিক্ষার্থীদের চারিত্রিক শুদ্ধতা হুমকীর মুখে পড়ে।এসব নিয়েও প্রায় পত্রিকায় সংবাদ আসে।এরা স্থানীয় বিত্তবান এবং বিদেশি সাহায্য পেয়ে থাকে;কিন্তু এদের আয় ব্যয়ের সরকারি  অডিট হয় না।তবে এখান থেকে অনেকে হিফজ সমাপ্ত করে সাধারণ মাদ্রাসা শিক্ষায় চলে আসে।
 অসচেতন মাতা পিতার পরকালীন মুক্তির লক্ষ্যে তাদের সন্তানেরা  উৎসর্গিত হয়।এসব প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য,রাজনীতি,অর্থনীতি, দর্শন, গণিত, বিজ্ঞান এবং আইসিটি পঠনপাঠনের ব্যবস্থা নেই।বাংলাদেশের সর্বত্র বিস্তারিত এসব কওমি মাদ্রাসার শিক্ষাদান পদ্ধতি এবং সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বিশ্বাসযোগ্য কোন গবেষণাও নেই।
মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা এদেশের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।এর যথাযথ উন্নয়ন পুরো জাতীর উন্নয়নকে গতিশীলতা দান করতে পারে।তাই, যত দ্রুত সম্ভব মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী শিক্ষাধারায় নিয়ে আসতে হবে।যে দুর্বল, সে যুক্তিহীন ;  সে হিংস্রতার জন্মদাতা।অতএব একটি বিশাল শিক্ষার্থীগ্রুপকে দুর্বল করে রাখা মোটেই সুবিবেচনার কাজ নয়।3/17/18
                                                         ----

হজরত মুহাম্মদ(সাঃ)-এর শিক্ষাদান পদ্ধতি ও কৌশল বইতে অন্তর্ভুক্ত   ২০২০ একুশে বইমেলা

বৃহস্পতিবার, ৮ মার্চ, ২০১৮

চাঁদ সওদাগর:বাঙালির মিথিকাল চরিত্র

চাঁদ সওদাগর:বাঙালির মিথিকাল চরিত্র
চাঁদ সওদাগর বাঙালির মিথিকাল চরিত্র।আমরা বেহুলা লক্ষিন্দরের কাহিনী নিয়ে সিনেমা দেখেছি।কেঁদে চোখের জল ফেলেছি।কিন্তু কাহিনীর পেছনের গল্প বা উদ্দেশ্য চাপা পড়ে থেকেছে।  চাঁদ সওদাগর মনসাকে পুজো দিলেন না।ফলে তিনি তার সাত সন্তানকে হারালেন,পুত্রবধুরা বিধবা হল।তিনি ও তার স্ত্রী অসহনীয় কষ্ট পেলেন।তিনি  শুধু শুধু কেন তার সাত সন্তানকে হারাবার ঝুকি নিলেন!
কাহিনীর মূলে আছে আধিপত্যবাদী চরিত্র মনসা।মনসা চাঁদ সওদাগরের কাছে পুজো দাবি করে।পুজো না দেওয়ায় মনসা একে একে তার সাত পুত্রকে দংশন করে। ফলে তারা মৃত্যুর মুখে পতিত হয়।এখানে মনসা শোষণকারী পক্ষের প্রতিনিধি।চাঁদ সওদাগর শোষক আর আধিপত্যবাদীর ক্ষমতাকে স্বীকৃতি দেয়নি।কারণ,মাঝাভাঙ্গা-কুঁজো, বন্য আর গর্তবাসি মনসার মানবজাতিকে শাসনের কোন অধিকার নেই।মানুষ সৃষ্টির সেরা।তাই, চাঁদ সওদাগর এটিই মানতে চাননি। এটি ছিল তার অপরাধ।
চাঁদকে সবশেষে আপোষ করতে হয়েছিল;বিধবা পুত্রবধুদের ক্রন্দন আর অসহায়ত্ব তার অন্তর ছুঁয়েছিল।ফলে নিরুপায় হয়ে তিনি কুঁজোকে পুজো দেন।তবে তার শর্ত ছিল:তিনি বাম হাতে পিছনে নিক্ষেপ করে পুজো দিবেন।  মনসা তাতেও রাজি হল ।তার অপমানবোধ নেই।কারণ,সে তো মানুষ নয়।অশিক্ষিত, মূর্খ একটা জানোয়ার।চাঁদের নিক্ষিপ্ত ফুলতো দর্শনীয় বস্তু।এটিই যথেষ্ট।
  কোম্পানিগঞ্জে ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত বৈশাখী মেলায় কোম্পানিগঞ্জ কবিতা পরিষদের কাব্য আলক্ষ্যে আমরা নব রূপায়নে চাঁদ সওদাগরের ব্যক্তিসত্তাকে উপলক্ষ করে একটি পুঁথি পাঠের আয়োজন করেছিলাম।তরুণ আবৃত্তিকার সাইফুল ইসলামের দল এটি উপস্থাপন করেছিল।পুঁথিটি আমি লিখেছিলাম।3/8/18


বাংলাদেশের শিক্ষা আইন ও শিক্ষানীতি

বাংলাদেশের শিক্ষা আইন ও শিক্ষানীতি


          আইন ও নীতি হয় সার্বজনীন ;এটিই স্বীকৃত সত্য।বাংলাদেশেও যুগোপযোগী শিক্ষা আইন ও শিক্ষানীতি প্রণয়নের কাজ বিগত দশক ধরে চলে আসছে।মাঝে মাঝে প্রণীত শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়;আবার সংশোধন হয়;আবার পরিবর্তন হয়।দিন যায়,ক্ষণ যায়;পুনরায় পরিমার্জন করা হয়।এভাবেই চলছে।
 ডক্টর কুদরাত-খুদার প্রণীত শিক্ষানীতি ছিল যুগোপযোগী শিক্ষানীতি। এই শিক্ষানীতি অনুসরণ করলে শিক্ষা ব্যবস্থায় বর্তমান সংকট থাকতো না।এতে শিক্ষকসম্প্রদায় হতেন সবচেয়ে সন্মানিত এবং যোগ্য ব্যক্তিরাই এতে যুক্ত হতেন এবং শ্রীলংকার মত সর্বত্র বিস্তারিত সচেতন এবং শিক্ষিত জনগোষ্ঠী থাকত।

সর্বশেষ  শিক্ষানীতি প্রণয়নের বয়স প্রায় আট বছর হতে চললো।নীতির উদ্দেশ্য অনুযায়ী লক্ষ্য অর্জন কতটুকু এগুলো?আসলে শিক্ষানীতি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন জন্য আইনগত বাধ্যবাধকতার জন্য প্রয়োজন ছিল;যা  একটি শিক্ষা আইনের বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সম্ভব হত। বাস্তবতা হচ্ছে, শিক্ষা আইনই আলোর মুখ দেখছে না।এখানে উল্লেখ্য যে,শিক্ষা আইন অবশ্যই আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী হতে হবে।ফলে তা যথাসম্ভব বিদ্যমান বৈষম্য বিলোপে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।এমনটি যদি হয়,তাহলে তা বোধহয় সহসা বাস্তবায়ন করা হবে না।একটি আইন ও নীতি যদি আন্তর্জাতিক মানের হয় তাহলে তার আওতায় গৃহীত কার্যক্রমও আন্তর্জাতিক মানের হবে;তার জন্য যৌক্তিক অর্থ বরাদ্দ থাকা অনিবার্য।অর্থবরাদ্দের বিষয়টি বাংলাদেশে এখনো যতটুকু না রাজনৈতিক তার চেয়ে বেশি সাচিবিক।ফলে সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়ন হওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিতই বলা যায়। 
 মাঝে মাঝে শিক্ষা আইনের বিষয়টি আলোচনায় আসে।আম জনতার অভিমত তালাশ করা হয়।এসব অর্থহীন।আমরা মনে করি,এখানে যা-ই করা হোক,তা হতে হবে উচিত্যের অনুভূতিজাত।এটা তো আম জনতা বুঝে না।
  কর্তা ব্যক্তিগণ মাঝে মাঝে বলেন,প্রাইভেট বাণিজ্য  বন্ধ করা হবে।বাণিজ্য শব্দ একটি বৈধ এবং ইতিবাচক শব্দ।বিশ্বব্যবস্থায় শিক্ষা ব্যবস্থা কিভাবে পরিচালিত হচ্ছে তা তো নেটে সার্চ দিলে জানা যায়।এবছর বিশ্বে প্রাইভেট টিউশন বাণিজ্য ১০২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে বলে মনে করা হচ্ছে।এখানে, যৌক্তিক নীতিমালা প্রণয়ন করা যেতে পারে।প্রাইভেট কারা পড়াতে পারবেন তা আইনসিদ্ধ করা যেতে পারে।কারণ,চাইলে যেমন কেউ চিকিৎসক সেজে ঔষধ দিতে পারে না,তেমনি শিশুর পরবর্তী কাল নেগেটিভলি প্রভাবিত হবে এমন কোন ব্যক্তিকে শিক্ষকতার অনুমোদন দেয়া যাবে না।যেদেশে বহু স্কুলের প্রতি শ্রেণিতে ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা শতাধিক,সেখানে সামর্থবান অভিভাবক সন্তানের অধিকতর যোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রাইভেট টিউটর রাখবেন।এটা তো সত্য যে,যারা প্রাইভেট বাণিজ্য বন্ধে শপথ নিচ্ছেন,তারা নিজের সন্তানের জন্য ঠিকই প্রাইভেট শিক্ষক রাখেন।
  তবে কী আমরা সন্মানজনক পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো না?তবে হ্যাঁ,শিক্ষকদের সিংহভাগ মনে করেন,জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি এক্ষেত্রে হস্থক্ষেপ করেন, তাহলে তা সম্ভব হত।কিন্তু তাঁর সাম্প্রতিক একটি বক্তৃতা শিক্ষকদের হতাশ করেছে।তিনি শিক্ষকদের উদ্দ্যেশ্যে  বলেছেন,আন্দোলন করে দাবী আদায় করা যাবে না।এর পর কী আর বলার আছে?

 রাষ্ট্রের কর্ণধারদের কাছে সাম্যতার নীতিই কাম্য।তারা যদি শিক্ষার মত বিষয়টিকে অবহেলা করেন,তাহলে তারা কিভাবে এগিয়ে যাবেন কিংবা দেশকে উন্নত করবেন।আমার বোধে আসে না।
বর্তমানে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের  ৯৮% বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করে।এরাই ভবিষ্যতের দেশের নির্মাতা হবে।কিন্তু এরা বিদ্যমান বৈষম্য দেখে দেখেই বড় হচ্ছে।অন্যদিকে,আন্দোলনরত শিক্ষকগণ বিদ্যালয় সন্নিহিত এলাকায় বিরাজমান বৈষম্য নিয়ে অভিভাবকদের সাথে নিয়মিত আলোচনা করছেন।এসব আলোচনায় সরকারের কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা হয়তো নেই,কিন্তু  জনমতের উপর  দীর্ঘস্থায়ী চাপ ফেলবে।উল্লেখ্য যে,শিক্ষকেরা ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে সরকারের অবস্থান সম্পর্কে ব্যাখ্যা করছেন।আনোলনের কর্মকৌশলের অংশ হিসেবেই এটি হচ্ছে।এখানে, সরকারের সাম্যের বিপক্ষে সুদৃঢ অবস্থান সম্পর্কে বলার কেউ নেই।তাহলে প্রিয় পাঠক সমাজ আপনারাই বলুন, কোন একদিন সরকারে থাকা নীতি নির্ধারকদের সকলেই জবাবদিহির মুখে পড়বে কী না?
আমজনতার অভিমত :
  আমি স্কুলে যাবার পথে এই সেদিন এক অভিভাবক খালেক ভাই  বলেই ফেললেন,স্যার আপনারা সব পেলেন;তার পরেও স্কুল বন্ধ রাখছেন কেন? আন্দোলন কিসের? সরকারতো আপনাদেরকে শতভাগ বেতন দিচ্ছেন।এটা তো সবাই জানে।
  ঠিক বলেছেন খালেক ভাই।আন্দোলন করছি আপনাদের জন্য,আপনাদের সন্তানদের জন্য,সুবিচার এং সাম্যতা কায়েমের জন্য।একই দেশে বসবাস করে একাদিক বিধানে শিক্ষাব্যবস্থা কেন চলবে?এটিই আমাদের প্রশ্ন। আচ্ছা আপনিই বলুন, আপনার ঘরে চাউল কেনার টাকা আছে।তরকারি কেনার টাকা নেই।থাকার জায়গা নেই।ভাত রান্না করে খাবেন কী দিয়ে?থাকবেন কোথায়?
তার মানে?খালেক ভাইয়ের প্রশ্ন।আরো কয়েকজন জড়ো হল।
   আগের কথা বাদ দিই।বর্তমানে অনেক  শিক্ষকদের তাদের বাড়ি থেকে দূরবর্তী বিভিন্ন  জেলায় নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।এদের সকলেই নিকটবর্তী শহরে ঘরভাড়া করে থকতেছেন।সরকার যদি এদের ঘরভাড়া না-ই দিবেন,এদেরকে শতশত মাইল দূরে নিয়োগ দিল কেন?
   সরকার বেতন স্কেলের শতভাগ দিচ্ছেন।সত্য। ।এর সাথে অনুষঙ্গিক আরো যে প্রদেয় আছে তা বেসরকারি শিক্ষকগণ পাচ্ছেনা।সরকারি প্রতিষ্ঠানে বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট আছে,গ্রাচুইটি আছে,তাদের সন্তানের শিক্ষা ব্যয়ের জন্য বরাদ্ধ আছে,শ্রান্তি বিনোদন ভাতা আছে,উপযুক্ত চিকিৎসা ভাতা আছে,বাসা ভাড়া আছে।অথচ আমরাও একই বই একই সিলেবাস পাঠদান করে থাকি।আমরা এসব থেকে বঞ্চিত।  কিন্তু প্রতি বছর মুদ্রাস্ফীতির কারণে বিদ্যমান শতভাগ চার বছরের মাথায় সত্তর থেকে আশিতে ঠেকেছে।সাথে সাথে আরেকটা কথা আমি আপনাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে,আপনার সন্তানের শিক্ষক যদি দারিদ্রের মধ্যে থাকে, তাহলে তিনি তৃপ্তির সাথে শিক্ষাদানে ব্যর্থ হবেন।আমরা শিক্ষক, মাস্তানি করতে পারিনা;শুধুমাত্র দুঃখ কষ্টগুলো শেয়ার করতে পারি।
  খালেক ভাই, আমাদের দশম শ্রেণির ছাত্র শাকিলের বাপ।আমি বললাম,  আপনারা শুনে রাখুন, একজন শিক্ষক একটানা প্রায় দশ বছর সতের হাজার টাকা বেতন পেয়ে থাকেন।
কী বলেন?একজন সি এন জি ড্রাইভার মাসে আয় করেন কুড়ি থেকে ত্রিশ হাজার টাকা।তাহলে তো আপনার সমস্যায় আছেন।
আপনিতো বুঝলেন।কিন্তু যাদের বুঝা উচিত,তারা বুঝেনা। সমস্যা শুধুমাত্র আমাদের নিয়ে নয়।আমাদের সন্তানদের নিয়ে।সমস্যা কমিটি নিয়ে।
     শৃঙ্খলাহীল অবস্থা মানুষকে শৃঙ্খলিত করার কাজেই ব্যবহৃত হয়।দেশের ৯৮% সন্তানের সাথে রাষ্ট্রিয়ভাবে অবিচার করা হচ্ছে।এই অবিচারের বিরুদ্ধে দেশের সকলকেই সচেতন হতে হবে;অন্যথায় সার্বিক কল্যাণ করা অনিশ্চিতার মাঝেই ঘুরপাক খাবে।3/8/18

হজরত মুহাম্মদ(সাঃ)-এর শিক্ষাদান পদ্ধতি ও কৌশল বইতে অন্তর্ভুক্ত   ২০২০ একুশে বইমেলা


মঙ্গলবার, ৬ মার্চ, ২০১৮

অমরত্বের স্বপ্ন:ভিক্ষার ধনে স্কুল


   অমরত্বের স্বপ্ন:ভিক্ষার ধনে স্কুল

              বিগত শতাব্দীর শুরুর দিক। বর্তমান রংমালা মাদ্রাসার তিনশ মিটার  পশ্চিমে একটা স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এখানে ছোটখাটো একটা বাজারও ছিল।নাম: ফকিরের হাট। এই ফকির হাটের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ফকির আহমেদ।  তিনি ভিক্ষা করতেন। দেশে দেশে ঘুরে বেড়াতেন। তার দু'ছেলে ছিল। বড় জনের নাম বজলের রহমান। এর প্রতি ফকির আহমদের অতিরিক্ত টান ছিল। কারণ, সে ছিল বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী।
    ফকির আহমেদ গান গাইতেন। গজল বা নাত--রসুল।গেরস্তের বাড়ির সামনে গিয়ে সুর করে গানে টান দিতেন। বাচ্চারা বেরিয়ে আসতো। তারপর তিনি ভিক্ষা চাইতেন।
      "আপনেগো আম্মাদের কৈইয়েন, আমি একখান স্কুল দিছি। পণ্ডিতের বেতন দিতে অইব। চাল দিতে কইয়েন"(প্রমিত বাংলাঃ আপনাদের মাকে বলবেন আমি একটা প্রতিষ্ঠা করেছি।পণ্ডিতের বেতন দিতে হবে।চাউল দিতে বলবেন।)  শিশুরা গান শোনার আবদার করতো। শুনাতেন। তারপর চাউল আনতো। 
         ফকির আহমেদ তার ছেলের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হওয়ার জন্য নিজকেই দায়ী করতেন। ভাবতেন: তার নিজের শিক্ষাদীক্ষা না থাকায় তার ছেলে প্রতিবন্ধী হয়েছিল। সুতরাং তিনি একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শপথ নেন। বিদ্যালয়ের নাম রাখেন, ফকিরের হাট  বজলের রহমান মডেল স্কুল।উল্লেখ্য যে,বজলের রহমানের ঘর সংসার হয়েছিল;কিন্তু ছেলে পুলে হয়নি।তিনি স্ত্রীকে মা ডাকতেন। স্ত্রীও ছিলো বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী।
 
       দু'জন পণ্ডিত এখানে পাঠদান করাতেন। বাল্যশিক্ষা পড়াতেন। তালপাতায় লিখতেন।  একজন যোগিদিয়ার পশ্চিম পাশ থেকে আসতেন; অন্যজন দূরবর্তী কোন স্থানের বাসিন্দা ছিলেন। বাসার পণ্ডিত যোগিদিয়া থেকে আসতেন তিনি প্রতিদিন চলে   যেতেন।
        তার  মাত্র কয়েক খণ্ড জমি ছিল। তার মধ্যে সাড়ে পাঁচ শতাংশ জমি বিদ্যালয়ের জন্য দান করেন। ছোট ফেনি নদীর ভাঙ্গনে যখন রংমালা এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার মুখোমুখি, তখন স্কুলটি রমিজ উদ্দিন হাজি বাড়ির দরজায় স্থানান্তরিত হয়। আজ অবধি তা সেখানেই আছে। শুধুমাত্র নামে কিছুটা হেরফের হয়ে হয়েছেঃরামপুর ফকিরের হাট রকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তবে আনন্দের বিষয় হচ্ছে এই যে, স্কুলের স্থানটি নদীতে ভাঙ্গেনি।   
       ফকির আহমেদ অমরত্ব চেয়েছিলেন। কাল প্রবাহে ফকির আহমেদকে সকলেই ভুলে গেছে।বিদ্যালয়ের নামের সাথে যুক্ত বজলের রহমান নামটিও মুছে ফেলা হয়েছে।তবুও তার তৃতীয় সন্তান মডেল স্কুল প্রায় শত বছর টিকে আছে। এই সমাজ, এই দেশ কখনো তালাশ করেনি, কে ভিক্ষার টাকায় সমাজ  পরিবর্তনের জন্য পণ করেছিলেন।নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়েছিলেন।তবুও তাকে স্মরণের আমাদের দায় নেই। আজ এই লেখার মধ্যদিয়ে দেশের অগণিত ফকির আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।3/6/18

                              ----- -----------------------------------
Researched by: Golam Kibria
    

শনিবার, ৩ মার্চ, ২০১৮

আমার দেখা চার দশকের সমাজ পরিবর্তন:প্রেক্ষিত কোম্পানিগঞ্জ



আমার দেখা চার দশকের সমাজ পরিবর্তন:প্রেক্ষিত কোম্পানিগঞ্জ


লেখাটি বিশেষ করে কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার চার দশকের সমাজ পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে।আপনারা হয়ত এর মধ্যে বাংলার অপরাপর অংশকেও খুঁজে পাবেন।বিগত চার দশকে বাংলাদেশে বিভিন্নমুখী পরিবর্তন ঘটেছে।সামাজিক,অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ইত্যাদি ক্ষেত্রে লক্ষণীয় পরিবর্তন সূচিত হয়েছে।বর্তমানেও খুবই দ্রুত পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে।এই পরিবর্তন সবক্ষেত্রে যে প্রত্যাশিত মাত্রায় হচ্ছে তা নয়।সংস্কৃতির অসম মিথষ্ক্রিয়া সমাজ কাঠামোকে অস্থির অবস্থার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।আমরা কিভাবে দ্রুত ধাবমান সমাজে বেড়ে উঠেছি,কিভাবে এগিয়ে যাচ্ছি তা অনেক সময় ভাববার সময় পাইনা।আমরা কিরকম অবস্থার মধ্যদিয়ে অগ্রসর হচ্ছি তা একটু দেখি।
          বিগত চল্লিশ বছরে কোম্পানিগঞ্জের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে।কোম্পানীগঞ্জের বিভিন্ন সংঘটন ও ব্যক্তি সমাজ পরিবর্তনে এ ভূমিকা রাখে।

শিশুর সকাল:

আশির দশকের বাংলাদেশের শিশুর দিনযাপন :কাঁধে লুঙ্গি ঝুলিয়ে কাদামাখা শরীর নিয়ে হাঁটছে,মাঠে দৌঁড়ছে এরকম শিশু কিশোরদের আশির দশকের শুরুতে প্রায় রাস্তাঘাটে দেখা যেত।আমাদের শৈশবের দিকে তাকালে যে চিত্র ভেসে ওঠে তা আজকের দিনের শিশুদের কাছে অকল্পনীয় মনে হবে।বর্তমানে সাধারণ গ্রামীণ জীবনের পরিপূর্ণ স্বরূপে প্রকাশিত ঐ জীবনের অন্তর্ধান ঘটেছে।আমি আমার শৈশবের দিকে তাকালে দেখি আমারা চিন্তায় ছিলাম অধিকতর মানবিক এবং কর্মে ছিলাম সহযোগী।
    ১৯৭৮ সালে গ্রামের একটি শিশুর দিন স্বাভাবিকভাবে  শুরু হত মক্তবে যাওয়ার মধ্য দিয়ে।আমরা অনেক কিছু পেয়েছি;অনেক হারিয়াছি।কিন্তু আমাদের অলক্ষ্যেই রয়ে যাচ্ছে  অনুসরণীয় জীবনের অনেক কিছু।জীবনের বাঁকে বাঁকে বহু  পরিবর্তন ঘটেছে,ঘটেছে বিনির্মাণ।এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, 
জমিদার শ্রেণি ব্যতীত বাঙালির শিক্ষা ও রাজনৈতিক দিকে সার্বজনীন পরিবর্তন ঘটেনি।কোলকাতা কেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবীদের উত্থান বাংলার অপরাপর অংশে পরিবর্তন আনয়নে প্রত্যাশিত কিছুই করেনি।তবে প্রথম মহাযুদ্ধ বাঙালির সমৃদ্ধ উত্তরকাল সৃজনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলেছে।আমার যতটুকু মনে হয়েছে প্রথম মহাযুদ্ধ বিশ্বের অন্য অঞ্চলের মত বাঙালির মননে আর চিন্তায় পরিবর্তন এনেছিল;এটি নিজ স্বাধিকার, আত্মসচেতনতা এবং সাহসী আগামী নির্মানে ভেতরে ভেতরে প্রবাহমান ছিল।বিশেষ করে এযুদ্ধের কারণে বিপুল সংখ্যক বাঙালি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।  যেসব পরিবারের সদস্য প্রথম মহাযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিল অথবা আধুনিক শিক্ষা অর্জনে সমর্থ হয়েছিল, তারা তাদের পরবর্তী প্রজন্মের জীবনধারাতে নতুনত্ব এনেছিল।সক্রিয় মিথস্ক্রিয়ারদ্বারা এই প্রজন্মই সর্বপ্রথম প্রভাবিত হয়েছিল এবং তাদের সন্তানদের মাধ্যমে তা তৃতীয় বা চতুর্থ প্রজন্ম বিস্তার ঘটছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দিনগুলো:

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির দিনটা আমার মনে আছে।স্যার আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করলেন।অত:পর প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দিলেন।প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্মৃতিতে একটা ঘটনা হচ্ছে হাসিনার বিয়ে।সে আমাদের সতীর্থ ছিল।তার রোল ছিল এক।ভাল এক্কা-দোক্কা খেলতো। সকলকে সহজেই হারিয়ে ফেলতো।হঠাৎ একদিন শুনলাম তার বিয়ে হয়ে গিয়েছে।হাসিনার জন্য আমার খুব কষ্ট হয়েছিল।
আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সময় ছিল আনন্দঘন।কারণ পড়া-লেখার চাপ ছিলনা।স্কুল ছুটির পরে ইচ্ছেমত খেলা যেত।  চারজন শিক্ষকের তিনজন ছিলেন মৌলভী এবং একজন ছিলেন হিন্দু।মৌলভী স্যারদের বেতের আঘাত ছিল ভয়ানক।তবে তাঁরা পড়ার জন্য মারতেননা।অন্যায় কাজের জন্য শাস্তি দিতেন।শুধুমাত্র বাবুস্যার পিটাতেননা।তিনি পঞ্চম শ্রেণিতে গণিত এবং ইংরেজি পড়াতেন। তিনি প্রায় ছয় ফুট লম্বা ছিলেন।তাঁর হাতের লেখা ছিল খুবই সুন্দর।সকলে তাঁকে ভালবাসতো।আমার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে আব্বা   একবারমাত্র  বিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন।সেদিন  আমি  খুব খুশি হয়েছিলাম।  আমাদের বাবুস্যারও খুব খুশি হয়েছিলেন।সেসময়ে শিশুদের পড়া নিয়ে পিতামাতার মাথাব্যথা ছিলনা।একটি বিদ্যালয়েও নির্দিষ্ট পোশাক  ছিলনা।মেয়েদের অনেকে শাড়ি পরে স্কুলে আসত।ছাত্ররা লুঙ্গি পড়ে আসত।।আমরা স্কুলের ঘণ্টা শুনে স্কুলের দিকে দৌড় দিতাম।ছাত্রদের সকলেই লুঙ্গি পড়ত।   বিদ্যালয়ে যাচ্ছে -এই যা।
বর্তমানে সন্তানের শিক্ষা নিয়ে সর্বস্তরের মানুষের সচেতনতা লক্ষণীয়। দরিদ্র বা ধনী সকলেই সন্তানের শিক্ষাদানে খুবই সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে।সরকারও শিক্ষার ক্ষেত্রে নতুন নতুন পদক্ষেপ নিচ্ছে।শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার সাথে অভিভাবকের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ সৃষ্টির প্রয়াসে পিটিএ কমিটি গঠন করা হয়েছে।মা সমাবেশ,অভিভাবক সমাবেশসহ বিভিন্ন রকম সভা সমাবেশের আয়োজন করা হচ্ছে।মূলত শিক্ষাক্ষেত্রে অভিভাবকদের সংশ্লিষ্টতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে।প্রায় প্রতিটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সুনির্দিষ্ট পোশাক রয়েছে।

আমাদের অবসর এবং খেলাধুলা :

আমাদের সমবয়সী এলাকার ছেলেরা খেলাধুলা করত।আমরা হাডুডু,বোচিচি,  রেডি,লুকোচুরি, বো-জামাই,পয়সাখেলা  খেলতাম।আবার কখনো চোর-ডাণ্ডা খেলতাম। তবে চোর-ডান্ডা খেললে এলাকার মুরুব্বিরা নিষেধ করতো। ফুটবল গ্রাম এলাকায়  খুব কমই খেলা হত।তবে স্কুলে ফুটবল খেলা হত।স্কুল সন্নিহিত এলাকার শিক্ষার্থীরা ফুটবল খেলতো। আশির দশকের  শুরুতে বামনী  বাজারে দুটো ক্লাব  এবং একটি লাইব্রেরী গড়ে উঠে।    ক্লাব  দু'টো হলো আবহানী ও মোহামেডান।এরা ফুটবলকে জনপ্রিয় করার পেছনে ভূমিকা রাখেন।আবহানী ক্লাবের  আবু তাহের দুলাল এখনও খেলাধুলা নিয়ে আছেন। এই এই সময়ে বাংলাদেশে ফুটবল খুব জনপ্রিয় খেলা ছিল। 
           আমাদের বাড়ির পূর্ব পাশে ছিল মাচ্ছাধোনা খাল;তার লাগোয়া বিশাল চর।রাখলের সাথে মাঝে মাঝেমধ্যে চরে যেতাম।রাখালের বাঁশী বাজানো সেখানে প্রথম দেখি।এই কারণে,উত্তর কৈশরে বধির তাজুর কাছে বাঁশি শেখার তালিম নিয়েছিলাম।এই খালকে শংকর বংশী খালও বলা হয়।একসময় এই খালে প্রচুর মাছ    পাওয়া যেত    আমাদের সমাজের বেশিরভাগ ছেলে পুলে স্কুলে যেতো না।আমার সমবয়সী  একজনও স্কুলে যেতো না।     
মাছধরাতে একধনের নেশা আছে।এই নেশার কারণে একবার দক্ষিণের চরে মাছ ধরতে গিয়েছিলাম।মুনাফ নামে এক যুবক আমদের বাটিতে কাজ করতো। এক ভাদ্রমাসের অমাবস্যার সন্ধ্যায়  আমরা চারজন সেখানে হাজির হলাম।আমার বয়স ছিল মাত্র বারো।একধরণের উত্তেজনা বোধ করছিলাম।আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় আট দশ কিলোমিটার দূরে জায়গাটি।মানুষ ষোল নম্বর স্লুইজ বলে চিনতো। রাত দশটায় জোয়ার আসবে তারপর আমরা জাল মারবো। বাটা চিংড়ি আর চিরিং মাছ আসবে।কিন্তু আটটায় আমার ঘুম পেল,খিদে অনুভব করলাম।মুনাফভাই সমস্যায় পড়লেন। শেষে পাশের একটা ঝুপড়ি ঘরে নিয়ে গেলেন।মাঝবয়সী এক মহিলা মাছ দিয়ে ভাত খাওয়ালো।পরে ঘুমিয়ে পড়লাম।সকালে অল্প কয়েকটা মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছিলাম।উদ্দেশ্যহীন ঘোরাফেরা আর পুকুরে দীর্ঘসময় সাঁতার কাটা ছিল সাধারণ বিষয়।অন্যের গাছের ডাব খাওয়া ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।শীতের রাতে খেজুররসের পায়েস রান্নার মজাই ছিল আলাদা।আমাদের সমবয়সী ছেলেরা প্রায় প্রতি রাতেই রস চুরির কাজটি করতো। তবে এ ধরনের চুরির জন্য কেউ অপরাধী হতো না।গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তিগণও এধরণের কাজকে স্বাভাবিক বলেই স্বীকৃতি দিতেন। গ্রামের বুড়োরাও এজন্য ছেলেদেরকে বকাবকি করতো না।

আমরা সংসারের টুকিটাকি কাজকর্ম করতাম। দোকানে ধান ভাংতাম।চাল বিক্রি করতাম।একসের চাউলের দাম ছিল ৪টাকা ৫০পয়সা।এটা ১৯৮০ সালের কথা।

বামনীর প্রগতির দল:

শৈশবে আমদের টিভি দেখার সুযোগ হতো না।কারণ, আমাদের গ্রাম তখনও বিদ্যুতায়িত হয়নি। ২০০০সালের দিকে আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ আসে।আমরা অনেক সময়  গ্রামের বাজারে, দোকানে  যেতাম;তারা ব্যাটারির সাহায্যে টেলিভিশন চালাতো।            টেলিভিশনে   সিনেমা দেখতে যেতাম যা প্রতি সপ্তাহে একবার দেয়া হত।এটি সন্ধ্যায় আটটার সংবাদের পরে  প্রচারিত হত;শেষ হতো রাত ১২:০০টায়।প্রগতি গ্রন্থাগারে একদল প্রগতিশীল যুবক জমায়েত হত।আমরা প্রায় এখানে সিনেমা দেখতে যেতাম।বই পড়ার প্রতি এই সময়ে আমার আগ্রহ পাকাপোক্ত হয়।বর্তমানে প্রগতি গ্রন্থাগার বেসরকারি পর্যায়ে পরিচালিত দেশের অন্যতম সেরা লাইব্রেরি।আশির দশকে আমাদের সমবয়সী  শিক্ষার্থীরা প্রচুর বই পড়তো এবং প্রগতির দল ছিল এর পুরোধা।এই প্রগতির দলের প্রায় প্রতিটি সদস্য পরিচ্ছন্ন মননের অধিকারী ছিল।পরবর্তিতে এদের প্রত্যেকেই কর্মজীবনে ঈর্ষনীয় সাফল্য অর্জন করেছে।    পরবর্তী কালে আমার  বই পড়ার নেশা আর কেনার অভ্যাসের জন্য প্রগতির দলই দায়ী।এরা প্রতি বছর জাতীয় দিবস সমূহ সাড়ম্বরে পালন করতো ;দেয়ালিকা প্রকাশ করতো। বর্তমানে রাজনৈতিক সংস্কৃতি শিশুর মানবিক বিকাশের লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য তেমন কাজ করছে না।এখন সংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের বেশিরভাগ জাতীয় মেধা অন্বেষণ ও অন্যান্য নামে   সরকারি  কর্মকর্তাদের নির্দশে পরিচালিত হচ্ছে।ফলে সম্ভাবনাময় অনেক শিশু কিশোর সংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এ সকল অনানুষ্ঠানিক ক্রিয়া কর্মে প্রশাসনিক হস্থক্ষেপ ও তদারকি নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।বর্তমানে প্রগতির দলের লাইব্রেরী পাহারা দিয়েই সময় কাটে।অনেকে মনে করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল(জাসদ)-এর রাজনৈতিক সক্রিয়তায় ব্যর্থতার কারণে এগোষ্ঠীর কর্মকাণ্ডে স্থবিরতার সৃষ্টি হয়;কারণ, এরা সকলেই জাসদ রাজনীতিতে সক্রিয় ছিল।এখন শিশু কিশোরেরা বই নিয়ে সময় কাটাতে অনভ্যস্ত। আজকাল জ্ঞানসাধনা ফেসবুকেই বন্দী হয়ে গ্যাছে।

বর্তমানে শহুরে শিশুর আউটডোরে খেলাধুলোর একেবারেই সীমিত। বিদ্যালয়ে সহপাঠক্রমিক কার্যক্রমের পরিধি কাগজে কলমে বহু বিস্তৃত ;কিন্তু বাস্তবে সীমিত।অভিভাবকগণও সন্তানকে যোগ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে;যার মানে শুধুমাত্র পাঠ্যপুস্তক কেন্দ্রিক জ্ঞান অর্জনকেই বুঝাচ্ছে।ছাত্র-ছাত্রীরা ভাল পাশ দিয়ে চাকুরী করবে - এটি বেশির ভাগ অভিভাবকের একান্ত চাওয়া।
বর্তমানে প্রায় প্রতিটি পরিবারে টিভিসেট রয়েছে।
বর্তমানে প্রগতির দলের অতীতের মত কর্মকাণ্ড নেই। নতুন পাঠক শ্রেণিও নেই। নতুন প্রজন্ম রাজনীতির অন্ধকূপে নতুন প্রজন্ম বরবাদ হয়ে যাচ্ছে।  তারা বই পড়ে না;তারা গ্রন্থগারের  বৈকালিক আড্ডায় জমায়েত হয়না; তারা ক্ষমতা আর টাকার নেশায় আসক্ত হওয়ার মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছে।
 প্রগতির দলে যেসকল যুবক সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে এসেছিলেন, তারা হলেন;শহীদ মোজাম্মেল হক কাঞ্চন, আনিছুল হক,মোমিন বাহার,আনসার উল্যা(সাবেক চেয়ারম্যান)  ইকবাল বাহার চৌধুরী(বর্তমান চেয়ারম্যান) , মোকাররম বিল্লাহ,মাস্টার মো:মোস্তফা,কামাল উদ্দিন, হেদায়েত উল্যা ,এয়ার হোসেন, ব্যাংকার হরলাল বাবু,মোমিন কাকা,সিম্যান রুহুল আমিন,মরহুম গোলাম কিবরিয়া,নূরুল আফসার মিয়া, অধ্যক্ষ মজনু মিয়া আরো অনেকে।ঐতিয্যবাহী বামনীতে এরাই জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার শপথ নিয়েছিলেন।এরাই প্রথম সার্বজনীন দৃষ্টি নিয়ে কোম্পানিগঞ্জে সর্বপ্রথম কেজি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।প্রগতি কিন্ডারগার্টেন* নামে এখনও এটি চলমান আছে।দীর্ঘদিন ধরে এরা শহীদ কাঞ্চন স্মৃতি বৃত্তি পরিচালনা করেন। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও এরা বরাবর সক্রিয় আছে।এদের মধ্যে নুরুল আফসার মিয়া বিভিন্ন প্রকাশনার সাথে সক্রিয়ভাবে যুক্ত থেকেছেন এবং সুনামও কুড়িয়েছেন।বিশেষ করে যুগান্তর প্রন্থাগার,প্রগতি প্রন্থাগার ,বামনী আছিরিয়া সিনিয়ার মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বার্ষিকী সম্পাদনা করে তিনি অভিনন্দিত হয়েছেন।
*বর্তমানে প্রগতি ইন্সটিটিউট

হাইস্কুলের দিনগুলো

আমি  ১৯৭৯ সালে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হই।প্রধান শিক্ষক ছিলেন আবদুর রহমান স্যার।তিনি প্রশংসাপত্র দিলেন। আমাদের সকল ছাত্রের  জন্মতারিখ শুরু হল এক.এক দিয়ে। আমার যমজ একক্লাস  নিচে ছিল।সে পাস করলো তার জম্মতারিখ হল একবছর পরে। ঐদিনগুলোতে  শিক্ষার্থীর জন্মরারিখ ঠিক করতেন প্রধান শিক্ষক। ফলে এক ঘন্টার ব্যবধানে জন্ম হলেও আমরা দুইযমজ এক বছরের ছোট-বড় হয়ে গেলাম।
আমি একা একা হাইস্কুলে  যাওয়া শুরু করলাম।আমার হাইস্কুলের  জীবন      ইস্কুলের জীবন বিশেষ কোন ঘটনা ছিল বলে মনে হয়না।দু'একজন শিক্ষকের কথা মনে পড়ে। একজন ছিলেন বিকম বাবু স্যার।তিনি পাজামা পাঞ্জাবি পরে আসতেন।বেশ ফিটফাট চলতেন।তিনি   নবম শ্রেণিতে সাধারণ গণিত করাতেন। তিনি মুখে মুখে গণিত বুঝিয়ে দিতেন। ছাত্ররা খুব সহজে বুঝত।তিনি ইসলাম ধর্ম ও আরবিও পড়তে পারতেন।তিনি কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করেছিলেন।আমরা আমাদের শিক্ষকদের খুব ভয় পেতাম।দু'তিন জন ছাড়া সকল শিক্ষক ছাত্রদের খুব পিটাতেন।বাড়ির কাজ না করলে মার অনিবার্য ছিল।আমাদের অনেক সতীর্থ মারের ভয়ে স্কুল আসা বন্ধ করে দেয়।তখনকারদিনে এটাই স্বাভাবিক ছিল। ফলে আমি একা হয়ে গেলাম।
                           শ্রেণিতে সর্ব কনিষ্ঠ শিক্ষার্থী ছিলাম আমি।এগারটায় ক্লাস শুরু হত।আমরা বাড়ি থেকে আটটায় বের হতাম।বলা যায় বিদ্যালয়েয় পথ দুর্গম ছিল।বাড়িথেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব ছিল চার কিলো মিটার।গাড়ি ঘোড়া ছিলনা।পাঁয়ে হাটা ছিল যাতায়াতের প্রধান উপায়। স্কুল ছুটি হত পাঁছটায়।  আমাদের সতীর্থদের মধ্যে অধিকাংশের দিনে একটাকা খরচ করা সম্ভব হতো না। দুপুরে একঘন্টার  বিরতি দেয়া হত।

আমরা চার আনার মুড়ি আর চার আনার চানাচুর খেতাম।তারপর পানি খেতাম। এটি ছিল স্বাভাবিক।       শিশুরা দুপুরে উপোষ থাকবে এটাই ছিল তখনকার সময়ের মানুষের বিশ্বাস। ।বাড়ি আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে যেত।ক্লান্ত আর পরিশ্রান্ত হয়ে সন্ধ্যায় ঘুমিয়ে যেতাম।এভাবেই যাচ্ছিল আমার বিদ্যালয়ের দিনগুলো।

আমি ১৯৮৪ সালে এস এস সি পরীক্ষা দিয়েছিলাম।টেস্ট পরীক্ষায় অধিকাংশই  দু'তিন বিষয়ে ফেল। তবে ভয়ের কিছু নেই।মিলন বাবু স্যার বললেন,ইংরেজিতে টেস্টে  ২৫ পেলে ফাইনালে ৫০ পাবে।কারণ,স্যার সবসময় অর্ধেক নাম্বার দিতেন।তখনকার দিনে এটিই নিয়ম ছিল।
 এস এস সি   সেন্টার পরীক্ষায় প্রচুর নকল হতো।দেয়াল টপকিয়ে স্বজন ও বন্ধুবান্ধব নকল সরবারহে সাহায্য করতো। এসময় জেনারেল এরশাদ ক্ষমতায় বসেছিলেন।তিনি জাতীয় ছাত্র সমাজ নামে নতুন ছাত্র সংঘটন গড়ে তুলেছিলেন।তখন তাদের খুব ক্ষমতা।শিক্ষকগণও তাদের কাছে খুব অসহায় ছিলেন।পরবর্তিতে ঐসকলবাজ ছাত্ররা এস এস সি পাশ করে এরশাদের ছাত্র সংঘটনে যোগ দেয় এবং এরা প্রায়ই অস্র নিয়ে কলেজে ঘোরা ফেরা করত।
তখন স্কুলে সিনিয়রদের খুব সম্মান করা হত।আমরা উপরের শ্রেণির ক্লাসের সামনে দিয়ে হাঁটতাম না। তখন স্কুলের নেতা নির্বাচন হত।এই জন্য ভোট হত না।শিক্ষকরাই নেতা কে হবে ঠিক করতেন।এইক্ষেত্রে যারা স্কাউটিং এর সাথে যুক্ত থাকতো তাদেরকে নির্বাচন করা হতো।

রাস্তাঘাট নির্মাণ :

আশির দশকের শুরুতে জিয়াউর রহমান খাল কাটা কর্মসূচি চালু করে।নতুন নতুন রাস্তা নির্মাণ করে।গ্রামের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ে। আমাদের বাড়ি থেকে স্কুলে আসার পথ ১৯৮১ সালেই নির্মান করা হয়।এর আগে আমি বর্ষায় রাস্তার উপরে জাল দিয়ে ফাঁদ ফেলতাম এবং মাছ ধরতাম   নতুন রাস্তা নির্মিত হলে রিক্সা চলা শুরু হয়।আমাদের স্কুলে যাওয়াও নিয়মিত হয়।   ঝড়- বৃষ্টি হলে আমি  প্রায় স্কুলে যেতাম না।

বর্তমানে বসুরহাটের আশে পাশের প্রায় সবগুলো রাস্তাঘাট পাকা। সর্বত্র  ইঞ্জিল চালিত গাড়ির ছড়াছড়ি। রিক্সাতো আছেই।
১৯৮০ সালের দিকে বসুরহাট বাজার ছিল খুবই ছোট। পুরোবাজার ঘুরতে আধাঘণ্টাও লাগতো না।বাজারে বিদ্যুৎ ছিলনা।বাজারের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শংকরবংশি খাল খুব চওড়া ছিল।বড় বড় নৌকো আসতো। খালের উপরে থাকা পুল কালভার্টগুলো ছিল ধনুকের মত বাঁকা।কারণ,ঐসকল ব্রিজের নিচে দিয়ে নৌকা চলাচল করতো।
বসুরহাট বাজার চল্লিশ বছরের ব্যবধানে অনেক পরিবর্তন হয়েছে।এখন এটি দ্বিতীয় স্তরের পৌরসভা।অনেক কর্মযজ্ঞ।বর্তমানে স্রোতস্বিনী শংকরবংশী মৃত।তার প্রবাহ বন্ধ।নৌকো আসেনা।পুরো খাল আবর্জনার ভাগাড়।তার দু'পাশ প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছে।জ্ঞানীরা বলেন,গেরস্তের পাকঘর দিয়ে তার রুচি বোঝা যায়;আর শহরের মানুষের রুচি বোঝা যায় শহরের রাস্তাঘাট দেখলে।কিন্তু প্যারিসের মানুষ বলে,শহরের নদীর অবস্থা দিয়ে শহরের মানুষের মনের সৌন্দর্যবোধ বিচার করা যায়।

আশেপাশের মানুষ:

আমাদের চারদিকে প্রচুর দরিদ্র মানুষ ছিল।আফিয়া ও সাফিয়া নামে দু'বোন ছিল যারা সারা বছর আমাদের বাড়িতে কাজ করতো। তারা দু'জন বিধবা বা স্বামী পরিত্যাক্তা ছিল।তারা ধুমপান করতো। আমার দেখা প্রথম নারী ধূমপায়ী। আমার মা-জেঠি লুকিয়ে লুকিয়ে জেঠার বিড়ি তাদেরকে      দিত।আমাদের অনেকগুলো গরু ছাগল ছিল।হাসেম,কাশেম আর কালামিয়া সারা বছর কাজ করতো। তারা খুব গরীব ছিল।মিলনের মা প্রতিদিন দুপুরে ভাতের মাড় নিতে আসতো।
স্বামী কর্তৃক বৌ পিটানো ছিল সাধারণ ঘটনা। আমাদের আশে পাশের বাড়িতে প্রায় বৌ পিটানোর ঘটনা ঘটতো। পিটানোর জন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ কারণও থাকতো না।যেমন তরকারিতে লবন কম হওয়া, ভাত রাঁধতে দেরি হওয়া,শাশুড়ির সাথে তর্ক করা,পুকুর ঘাটে দেরি করা হল এক একটা কারণ।মিলনের মা তো প্রায় পিটুনি খেত।ফকির আহম্মদের পিটাপিটির খবর সবাই জানতো। সে ছিল ঘর জামাই।এই বউ পেটানো যতটা না ছিল স্বভাবে তার চেয়ে বেশি ছিল অভাবে।
বর্তমানে বউ পেটানোর খবর খুব একটা শোনা যায়না। বরং ঐস্তরের পরিবারে ভাঙ্গনের সুরই বেশি।মামলা হচ্ছে অহরহ।দ্রুতগতিতে মানুষের  আয় বেড়েছে। এখন বউ বাচ্ছা নিয়ে বহু দম্পতি উপজেলার কেন্দ্রে বাসা ভাড়া করে থাকছে।আজকাল বহু পেশাজীবিকে বসুরহাটে ভাড়া বাসায় বসবাস করতে   দেখা যায়।এদের মধ্যে অধিকাংশই প্রবাসীর পরিবার,শিক্ষক অটো রাইচ মিলের শ্রমিক,রিক্সাচালক,সুইপার  কিংবা বাদাম বিক্রেতা। বর্তমানে বসুরহাটে প্রায় শাতাদিক রিক্সাজীবি আছেন যারা  স্থানীয় নয়।

ঘরবাড়ির অবস্থা:

আমাদের শৈশবে গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ বাড়িঘর ছিল কাঁচা।ছনের ছাউনি এবং বেড়া ছিল বাঁশ অথবা পাটকাঠির। ঘুমানোর জন্য ব্যবহার করা হত পাটিপাতার বিছানা এবং কাঁথা।অধিকাংশ পরিবারের লোকজন দিনে আনে দিনে খায় এমন ছিল।যাদের চাষের জমি বেশি ছিল তারা সারা বছরের খাবার সংরক্ষণ করতো। তবে এই রকম পরিবার খুব বেশি ছিলনা।কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায় ভূমিহীন লোক কিছু ছিল কিন্তু গৃহহীন লোক  ছিলনা বললেই চলে।
বর্তমানে অধিকাংশ বাড়িতে পাকা ভবন নির্মিত হয়েছে।অনেকে শহরে ঘরভাড়া করে বসবাস করছে যা আগে কেউ চিন্তাই করতো না।

খাওয়া দাওয়া :

  এই সময়  অধিকাংশ পরিরারে পারিবারিক খামার ছিল।অন্ততপক্ষে দু'একটা গাভী এবং ক'য়েকটা মুরগি  লালন পালন করতো।প্রচুর মাছ পাওয়া যেত।প্রচুর শাক সবজি পাওয়া যেত।প্রায়  কোন পরিবারেই সোফাসেট বা ডাইনিং টেবিল ছিল না।সকলেই পাটি বিছিয়ে খাওয়ার খেত।ঢেকিতে ধান ভাঙতো।মুসলিম পরিবারের বিয়ের অনুষ্ঠানে গরুর মাংশের সাথে মাস কলাইয়ের ডাল আর একটা সবজি দেয়া হত।সবজি হিসেবে কদুর তরকারি প্রাধান্য পেত।
বর্তমানে অধিকাংশ বাড়িঘরে সোফাসেট এবং ডাইনিং টেবিল আছে।পাটি পেতে খাওয়ার ঐতিহ্য লুপ্তপ্রায়।এখন শাকশবজি, মাছ,মাংশ সকল কিছু ব্যবসায়িক দৃষ্টি নিয়ে উৎপাদন করা হয়।অন্যদিকে বর্তমানে বিয়ের অনুষ্ঠানে খাওয়ার মেনুতে বাড়াবাড়ি মাত্রা ছাড়িয়েছে।অনেক বিয়েতে গরুর মাংস, খাসির মাংস, কবুতরের মাংস,মুরগি, চিংড়ি মাছ,রুই মাছ,ভর্তা,সবজি,দধি , কোমল পানীয় ইত্যাদি দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন করা হয়।

সাংস্কৃতিক পরিবর্তন:


বিগত চার দশকে বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে লক্ষণীয় পরিবর্তন ঘটেছে।কোম্পানিগঞ্জ উপজেলাও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়।কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার বহু মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কর্মরত। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপ-আমেরিকাতে বিপুল সংখ্যক মানুষ রয়েছে।ফলে তাদের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক এবং মনস্তাত্ত্বিক বিভিন্ন দিকে সমাজমানসে ব্যাপক উলট-পালট ঘটেছে।বিশেষকরে আশির দশকের শুরুতে এই প্রক্রিয়া শুরু হয়।এসময় কোম্পানিগঞ্জে এসময়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা সৃষ্টি হয়।কবি জসীম উদ্দিন পাঠাগার সাংস্কৃতিক জগতে নেতৃত্ব দেয়।কিন্তু কিছুকাল পরেই এর অস্তিত্ব বিলীন হয়।এরা বেশ কিছু সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল, যা শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছিল।     জেনারেল এরশাদের শাসনকালে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে যায়।এরই মাঝে কোম্পানিগঞ্জ সঙ্গীত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়,যাতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খ্যাতিমান শিক্ষক আবদুল কুদ্দুস স্যার নেতৃত্ব দেন।
          আশির দশকের মাঝামাঝি কোম্পানিগঞ্জে লিটল ম্যাগাজিনের আদলে বেশকিছু পত্রিকা প্রকাশের প্রচেষ্টা নেয়া হয়। আফতাব আহমেদ বাচ্ছুর সম্পদনায় মাসিক পদক্ষেপ , আবু সুফিয়ানের সম্পাদনায় মাসিক উত্তরণ, মাকছুদের রহমান মানিকের সম্পদনায় মাসিক স্বরাজ এবং সেলিম কলির সম্পাদনায়ও মাঝে মাঝে ম্যাগাজিন প্রকাশিত হত । নব্বইয়ের গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নতুন আশার সঞ্চার হয়,কিন্তু এসময় নতুন কিছু উল্লেখযোগ্যভাবে হয়নি।এসময়ে আবদুল কাদের হাজারী নেতৃত্বে মাসিক নিম্নাঞ্চল প্রকাশিত হয়,কিন্তু তাও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।অন্যদিকে, একসময়ের মুজিব কলেজের ছাত্রনেতা দাগনভূঁইয়ার শহীদ উল্লার সম্পাদনায় মাসিক শুভেছা দীর্ঘদিন প্রকাশিত হয়েছিল;এটি কোম্পানিগঞ্জ উপজেলায়ও গ্রাহক প্রিয়তা পেয়েছিল।
  বর্তমানে ডিজিটাল প্রযুক্তির উত্থানের কারণে বেশ কয়েকটি অনলাইন পত্রিকা সক্রয় আছে।এর মধ্যে দুই সহযোদ্ধা এ এইচ এম  মান্নান মুন্না ও সোহরাব হোসেন বাবর-এর সম্পাদনায় প্রকাশিত    নোয়াখালী টাইমস অন্যতম।
কোম্পানিগঞ্জে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অগ্রগামী দলে ছিল মুজিব মহাবিদ্যালয়। নাট্যকার ও অভিনেতা অধ্যক্ষ আবদুন নূর প্রায় প্রতি বছর বার্ষিক নাটক মঞ্চায়ন করতেন।এসময় তাঁর সংস্পর্শে বেশকিছু তরুণ-তরুণী সাংস্কৃতিক জগতে প্রবেশ করে।বর্তমানে তারা ব্যক্তিগতভাবে সাংস্কৃতিক কর্মী না হলেও অনেকে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করেন।এদের মধ্যে অন্যতম হলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন,সাবেক পৌর মেয়র কামাল উদ্দিন। আইনজীবি আজিজুল হক অভিনীত চরিত্রের নাম বক্সী নামেই আজো পরিচিত।"লবণ সমুদ্র" নাটকের কথা অনেকেরই মনে থাকবে।  মুজিব কলেজ সরকারি হওয়ার পরে সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে ভাটা পড়ে।

 ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর কোম্পানিগঞ্জে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা সৃষ্টি হয়।এক্ষেত্রে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।বিজয় মেলা উদযাপন করার কারণে মাসব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।একারণে গ্রাম পর্যায়েও সাংস্কৃতিক চর্চা চলে।কোম্পানিগঞ্জ সাংস্কৃতিক ফোরামের সভাপতি বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শহীদ উদ্দিন বাবুল,  গ্রামীণ ব্যাংকের বসুরহাট শাখার ম্যানেজার বাবু মিহির ভট্ট,সমাজসেবা অফিসার আবুল হাসেম  রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, ফিরোজ আলম ফিরোজ,আরজুমান্দ বিলকিস নিলুপা,মাইনুল এইচ সিরাজী, সোহেল মোহাম্মদ শরীফ, গোলাম কিবরিয়া বেলাল,হারুনর রশীদ শাহেদ,দানিয়েল শাহ, সবনুর নাহার মলি,নারী নেতৃ পারভীন আক্তার, ফরিদা ইয়াছমিন মুক্তা,শাহিদা আক্তার মুক্তা, শওকত আজিম    জাবেদ, নাজমা বেগম শিপা,করিমুল হক সাথী,আবদুল হালিম রকি,মানিক মজুমদার,বাবু মিলন দাস,সাইফুল্যাহ সোহাগ, জাফর  প্রমূখ।
এই গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম সাহসী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছিল।তারা বেশকয়েকটা  মঞ্চ নাটক মঞ্চায়ন করেছিল।এই গোষ্ঠী বর্তমানেও সচল আছে।ফলে তাদের উদ্যোগে বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়।কচি কণ্ঠের আসর,সবুজ নারী সংঘ,  কোম্পানিগঞ্জ কবিতা পরিষদ,  উদীচী, খেলাঘর, মুক্তস্কাউট,মুক্ত সাংস্কৃতিক সংগঠন, আল-আমিন শিল্পী গোষ্ঠী,মহিলা পরিষদ,   ব্যঞ্জনা খেলাঘর, কোম্পানিগঞ্জ নৃত্যকলা,বামনী সঙ্গীত বিদ্যালয়  এদের মধ্যে অন্যতম।অতি সম্প্রতি বিজ্ঞান মনস্ক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে কোম্পানিগঞ্জে "বিজ্ঞান ও সাহিত্য কেন্দ্র " প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে;যেখানে সভাপতি-সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন যথাক্রমে রফিকুল ইসলাম চৌধুরী ও গোলাম কিবরিয়া।  বর্তমানে কোম্পানিগঞ্জের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলাঘরের শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।ফলে তারা সক্রিয়ভাবে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।প্রায় প্রতিটি জাতীয় দিবসে কবিতা পরিষদের আবৃত্তি, উদীচীসহ অপরাপর  সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর পরিবেশনা থাকে। ।ইতোমধ্যে জুটন চন্দ্র সঙ্গীতে যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছে।সঙ্গীত লিখে সুনাম কুড়িয়েছে স্বশিক্ষিত মানুষ সিরাজুল ইসলাম। মাঝে মাঝে অজয় চক্রবর্তী গণ সঙ্গীত আর নোয়াখালীর আঞ্চলিক গান লিখে বাহাবা পেয়ে থাকেন।তবে সকলের অগ্রজ রফিকুল ইসলাম চৌধুরী তাঁর কলম চালিয়ে যাচ্ছেন।তবে কোম্পানিগঞ্জের তরুণকণ্ঠ গোলাম সারোয়ার পেশায় একজন ব্যাংকার হলেও দু'হাতে কলম চালিয়ে যাচ্ছেন।তিনি নিয়মিত জাতীয় দৈনিকে লেখার পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমে লিখে থাকেন।বর্তমানে নির্লিপ্ত মানুষ, সোহেল মোহাম্মদ শরীফ উত্তর কৈশরেই বেশ কিছু উপন্যাস লেখেছেন।অন্যদিকে ,নিভৃতচারী লেখক মাস্টার শাহ আলম নিয়মিত লেখালেখি করেন;যদিও আড্ডায় আসেন না।খুব সম্ভাবনাময় মাইনুল এইচ সিরাজী লেখার ইচ্ছে ধরে রেখেছেন;যদিও অনেকে তাঁকে ঈর্ষনীয় আসনে অনেকে কল্পনা করেছিল।  
 একসময়ে কোম্পানিগঞ্জে সাংস্কৃতিক জগতে নেতৃত্ব দিয়েছিল যোগিদিয়া।বর্তমানে এতে ভাটা পড়লেও  অষ্টপ্রহর কীর্তন যথারীতি প্রচলিত আছে।
          সাংস্কৃতিক বিবর্তনের ধারায় বেশকিছু বিষয়ের নতুন সংযোজন ঘটেছে।এক্ষেত্রে বিদ্যালয় এবং কলেজ পর্যায়ে শুরু হয়েছে ক্লাস পার্টি,প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অভিভাবক সমাবেশ, মা সমাবেশ।বর্তমানে মহিলা জামাতের উত্থান নবতর রাজনৈতিক ধারা;এটি মূলত জামাতে ইসলামীর একটি অঙ্গসংগঠন। এখানে জামাতের মহিলা শাখার কর্মী ও নেতা সপ্তাহে নির্দিষ্ট একদিন ধর্মীয় এবং দলীয় কর্ম-কৌশল নিয়ে আলোচনা করে।এদিন গ্রামের মহিলারা এবং শহরের দলীয় কর্মীরা একটি বাড়িতে জমায়েত হন।কোম্পানিগঞ্জে বসুরহাট পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জার নেতৃত্বে প্রায় প্রতিবছর ঈদে মিলাদুন্নবীর মিছিল বের হয়;যেখনে প্রচুর লোকের সমাবেশ ঘটে।তিনি অবশ্য শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীর মিছিলেও অগ্রভাগে থাকেন।বর্তমানে, বৈশাখী উৎসবে প্রতিবছর সাড়ম্বরে মঙ্গল শোভাযাত্রা হয়।পৌর হলের লনে সার্বজনীন উৎসবের আমেজে পান্থা-ইলিশের আসর বসে;যেখানে নেতৃত্ব দেন পৌরসভার মেয়র।3/3/18
(অসমাপ্ত)  

     






Printfriendly

Featured Post

জাতি নির্মাণে গল্পযোগ

  জাতি নির্মাণে গল্পযোগ   ১ ।   মানুষ সামাজিক জীব।তারা পরিবার গঠন করে।তারপর সে-ই পরিবার একটি গোষ্ঠীতে রুপান্তরিত হয় এবং ধীরে ধীরে একাধিক গোষ...