বাংলাদেশের শিক্ষা আইন ও শিক্ষানীতি
আইন ও নীতি হয় সার্বজনীন ;এটিই স্বীকৃত সত্য।বাংলাদেশেও যুগোপযোগী শিক্ষা আইন ও শিক্ষানীতি প্রণয়নের কাজ বিগত দশক ধরে চলে আসছে।মাঝে মাঝে প্রণীত শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়;আবার সংশোধন হয়;আবার পরিবর্তন হয়।দিন যায়,ক্ষণ যায়;পুনরায় পরিমার্জন করা হয়।এভাবেই চলছে।
ডক্টর কুদরাত-খুদার প্রণীত শিক্ষানীতি ছিল যুগোপযোগী শিক্ষানীতি। এই শিক্ষানীতি অনুসরণ করলে শিক্ষা ব্যবস্থায় বর্তমান সংকট থাকতো না।এতে শিক্ষকসম্প্রদায় হতেন সবচেয়ে সন্মানিত এবং যোগ্য ব্যক্তিরাই এতে যুক্ত হতেন এবং শ্রীলংকার মত সর্বত্র বিস্তারিত সচেতন এবং শিক্ষিত জনগোষ্ঠী থাকত।
সর্বশেষ শিক্ষানীতি প্রণয়নের বয়স প্রায় আট বছর হতে চললো।নীতির উদ্দেশ্য অনুযায়ী লক্ষ্য অর্জন কতটুকু এগুলো?আসলে শিক্ষানীতি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন জন্য আইনগত বাধ্যবাধকতার জন্য প্রয়োজন ছিল;যা একটি শিক্ষা আইনের বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সম্ভব হত। বাস্তবতা হচ্ছে, শিক্ষা আইনই আলোর মুখ দেখছে না।এখানে উল্লেখ্য যে,শিক্ষা আইন অবশ্যই আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী হতে হবে।ফলে তা যথাসম্ভব বিদ্যমান বৈষম্য বিলোপে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।এমনটি যদি হয়,তাহলে তা বোধহয় সহসা বাস্তবায়ন করা হবে না।একটি আইন ও নীতি যদি আন্তর্জাতিক মানের হয় তাহলে তার আওতায় গৃহীত কার্যক্রমও আন্তর্জাতিক মানের হবে;তার জন্য যৌক্তিক অর্থ বরাদ্দ থাকা অনিবার্য।অর্থবরাদ্দের বিষয়টি বাংলাদেশে এখনো যতটুকু না রাজনৈতিক তার চেয়ে বেশি সাচিবিক।ফলে সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়ন হওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিতই বলা যায়।
মাঝে মাঝে শিক্ষা আইনের বিষয়টি আলোচনায় আসে।আম জনতার অভিমত তালাশ করা হয়।এসব অর্থহীন।আমরা মনে করি,এখানে যা-ই করা হোক,তা হতে হবে উচিত্যের অনুভূতিজাত।এটা তো আম জনতা বুঝে না।
কর্তা ব্যক্তিগণ মাঝে মাঝে বলেন,প্রাইভেট বাণিজ্য বন্ধ করা হবে।বাণিজ্য শব্দ একটি বৈধ এবং ইতিবাচক শব্দ।বিশ্বব্যবস্থায় শিক্ষা ব্যবস্থা কিভাবে পরিচালিত হচ্ছে তা তো নেটে সার্চ দিলে জানা যায়।এবছর বিশ্বে প্রাইভেট টিউশন বাণিজ্য ১০২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছবে বলে মনে করা হচ্ছে।এখানে, যৌক্তিক নীতিমালা প্রণয়ন করা যেতে পারে।প্রাইভেট কারা পড়াতে পারবেন তা আইনসিদ্ধ করা যেতে পারে।কারণ,চাইলে যেমন কেউ চিকিৎসক সেজে ঔষধ দিতে পারে না,তেমনি শিশুর পরবর্তী কাল নেগেটিভলি প্রভাবিত হবে এমন কোন ব্যক্তিকে শিক্ষকতার অনুমোদন দেয়া যাবে না।যেদেশে বহু স্কুলের প্রতি শ্রেণিতে ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা শতাধিক,সেখানে সামর্থবান অভিভাবক সন্তানের অধিকতর যোগ্যতা অর্জনের জন্য প্রাইভেট টিউটর রাখবেন।এটা তো সত্য যে,যারা প্রাইভেট বাণিজ্য বন্ধে শপথ নিচ্ছেন,তারা নিজের সন্তানের জন্য ঠিকই প্রাইভেট শিক্ষক রাখেন।
তবে কী আমরা সন্মানজনক পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো না?তবে হ্যাঁ,শিক্ষকদের সিংহভাগ মনে করেন,জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি এক্ষেত্রে হস্থক্ষেপ করেন, তাহলে তা সম্ভব হত।কিন্তু তাঁর সাম্প্রতিক একটি বক্তৃতা শিক্ষকদের হতাশ করেছে।তিনি শিক্ষকদের উদ্দ্যেশ্যে বলেছেন,আন্দোলন করে দাবী আদায় করা যাবে না।এর পর কী আর বলার আছে?
রাষ্ট্রের কর্ণধারদের কাছে সাম্যতার নীতিই কাম্য।তারা যদি শিক্ষার মত বিষয়টিকে অবহেলা করেন,তাহলে তারা কিভাবে এগিয়ে যাবেন কিংবা দেশকে উন্নত করবেন।আমার বোধে আসে না।
বর্তমানে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ৯৮% বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করে।এরাই ভবিষ্যতের দেশের নির্মাতা হবে।কিন্তু এরা বিদ্যমান বৈষম্য দেখে দেখেই বড় হচ্ছে।অন্যদিকে,আন্দোলনরত শিক্ষকগণ বিদ্যালয় সন্নিহিত এলাকায় বিরাজমান বৈষম্য নিয়ে অভিভাবকদের সাথে নিয়মিত আলোচনা করছেন।এসব আলোচনায় সরকারের কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা হয়তো নেই,কিন্তু জনমতের উপর দীর্ঘস্থায়ী চাপ ফেলবে।উল্লেখ্য যে,শিক্ষকেরা ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে সরকারের অবস্থান সম্পর্কে ব্যাখ্যা করছেন।আনোলনের কর্মকৌশলের অংশ হিসেবেই এটি হচ্ছে।এখানে, সরকারের সাম্যের বিপক্ষে সুদৃঢ অবস্থান সম্পর্কে বলার কেউ নেই।তাহলে প্রিয় পাঠক সমাজ আপনারাই বলুন, কোন একদিন সরকারে থাকা নীতি নির্ধারকদের সকলেই জবাবদিহির মুখে পড়বে কী না?
আমজনতার অভিমত :
আমি স্কুলে যাবার পথে এই সেদিন এক অভিভাবক খালেক ভাই বলেই ফেললেন,স্যার আপনারা সব পেলেন;তার পরেও স্কুল বন্ধ রাখছেন কেন? আন্দোলন কিসের? সরকারতো আপনাদেরকে শতভাগ বেতন দিচ্ছেন।এটা তো সবাই জানে।
ঠিক বলেছেন খালেক ভাই।আন্দোলন করছি আপনাদের জন্য,আপনাদের সন্তানদের জন্য,সুবিচার এং সাম্যতা কায়েমের জন্য।একই দেশে বসবাস করে একাদিক বিধানে শিক্ষাব্যবস্থা কেন চলবে?এটিই আমাদের প্রশ্ন। আচ্ছা আপনিই বলুন, আপনার ঘরে চাউল কেনার টাকা আছে।তরকারি কেনার টাকা নেই।থাকার জায়গা নেই।ভাত রান্না করে খাবেন কী দিয়ে?থাকবেন কোথায়?
তার মানে?খালেক ভাইয়ের প্রশ্ন।আরো কয়েকজন জড়ো হল।
আগের কথা বাদ দিই।বর্তমানে অনেক শিক্ষকদের তাদের বাড়ি থেকে দূরবর্তী বিভিন্ন জেলায় নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।এদের সকলেই নিকটবর্তী শহরে ঘরভাড়া করে থকতেছেন।সরকার যদি এদের ঘরভাড়া না-ই দিবেন,এদেরকে শতশত মাইল দূরে নিয়োগ দিল কেন?
সরকার বেতন স্কেলের শতভাগ দিচ্ছেন।সত্য। ।এর সাথে অনুষঙ্গিক আরো যে প্রদেয় আছে তা বেসরকারি শিক্ষকগণ পাচ্ছেনা।সরকারি প্রতিষ্ঠানে বাৎসরিক ইনক্রিমেন্ট আছে,গ্রাচুইটি আছে,তাদের সন্তানের শিক্ষা ব্যয়ের জন্য বরাদ্ধ আছে,শ্রান্তি বিনোদন ভাতা আছে,উপযুক্ত চিকিৎসা ভাতা আছে,বাসা ভাড়া আছে।অথচ আমরাও একই বই একই সিলেবাস পাঠদান করে থাকি।আমরা এসব থেকে বঞ্চিত। কিন্তু প্রতি বছর মুদ্রাস্ফীতির কারণে বিদ্যমান শতভাগ চার বছরের মাথায় সত্তর থেকে আশিতে ঠেকেছে।সাথে সাথে আরেকটা কথা আমি আপনাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে,আপনার সন্তানের শিক্ষক যদি দারিদ্রের মধ্যে থাকে, তাহলে তিনি তৃপ্তির সাথে শিক্ষাদানে ব্যর্থ হবেন।আমরা শিক্ষক, মাস্তানি করতে পারিনা;শুধুমাত্র দুঃখ কষ্টগুলো শেয়ার করতে পারি।
খালেক ভাই, আমাদের দশম শ্রেণির ছাত্র শাকিলের বাপ।আমি বললাম, আপনারা শুনে রাখুন, একজন শিক্ষক একটানা প্রায় দশ বছর সতের হাজার টাকা বেতন পেয়ে থাকেন।
কী বলেন?একজন সি এন জি ড্রাইভার মাসে আয় করেন কুড়ি থেকে ত্রিশ হাজার টাকা।তাহলে তো আপনার সমস্যায় আছেন।
আপনিতো বুঝলেন।কিন্তু যাদের বুঝা উচিত,তারা বুঝেনা। সমস্যা শুধুমাত্র আমাদের নিয়ে নয়।আমাদের সন্তানদের নিয়ে।সমস্যা কমিটি নিয়ে।
শৃঙ্খলাহীল অবস্থা মানুষকে শৃঙ্খলিত করার কাজেই ব্যবহৃত হয়।দেশের ৯৮% সন্তানের সাথে রাষ্ট্রিয়ভাবে অবিচার করা হচ্ছে।এই অবিচারের বিরুদ্ধে দেশের সকলকেই সচেতন হতে হবে;অন্যথায় সার্বিক কল্যাণ করা অনিশ্চিতার মাঝেই ঘুরপাক খাবে।3/8/18
হজরত মুহাম্মদ(সাঃ)-এর শিক্ষাদান পদ্ধতি ও কৌশল বইতে অন্তর্ভুক্ত ২০২০ একুশে বইমেলা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন