মঙ্গলবার, ৬ মার্চ, ২০১৮

অমরত্বের স্বপ্ন:ভিক্ষার ধনে স্কুল


   অমরত্বের স্বপ্ন:ভিক্ষার ধনে স্কুল

              বিগত শতাব্দীর শুরুর দিক। বর্তমান রংমালা মাদ্রাসার তিনশ মিটার  পশ্চিমে একটা স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এখানে ছোটখাটো একটা বাজারও ছিল।নাম: ফকিরের হাট। এই ফকির হাটের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ফকির আহমেদ।  তিনি ভিক্ষা করতেন। দেশে দেশে ঘুরে বেড়াতেন। তার দু'ছেলে ছিল। বড় জনের নাম বজলের রহমান। এর প্রতি ফকির আহমদের অতিরিক্ত টান ছিল। কারণ, সে ছিল বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী।
    ফকির আহমেদ গান গাইতেন। গজল বা নাত--রসুল।গেরস্তের বাড়ির সামনে গিয়ে সুর করে গানে টান দিতেন। বাচ্চারা বেরিয়ে আসতো। তারপর তিনি ভিক্ষা চাইতেন।
      "আপনেগো আম্মাদের কৈইয়েন, আমি একখান স্কুল দিছি। পণ্ডিতের বেতন দিতে অইব। চাল দিতে কইয়েন"(প্রমিত বাংলাঃ আপনাদের মাকে বলবেন আমি একটা প্রতিষ্ঠা করেছি।পণ্ডিতের বেতন দিতে হবে।চাউল দিতে বলবেন।)  শিশুরা গান শোনার আবদার করতো। শুনাতেন। তারপর চাউল আনতো। 
         ফকির আহমেদ তার ছেলের বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হওয়ার জন্য নিজকেই দায়ী করতেন। ভাবতেন: তার নিজের শিক্ষাদীক্ষা না থাকায় তার ছেলে প্রতিবন্ধী হয়েছিল। সুতরাং তিনি একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার শপথ নেন। বিদ্যালয়ের নাম রাখেন, ফকিরের হাট  বজলের রহমান মডেল স্কুল।উল্লেখ্য যে,বজলের রহমানের ঘর সংসার হয়েছিল;কিন্তু ছেলে পুলে হয়নি।তিনি স্ত্রীকে মা ডাকতেন। স্ত্রীও ছিলো বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী।
 
       দু'জন পণ্ডিত এখানে পাঠদান করাতেন। বাল্যশিক্ষা পড়াতেন। তালপাতায় লিখতেন।  একজন যোগিদিয়ার পশ্চিম পাশ থেকে আসতেন; অন্যজন দূরবর্তী কোন স্থানের বাসিন্দা ছিলেন। বাসার পণ্ডিত যোগিদিয়া থেকে আসতেন তিনি প্রতিদিন চলে   যেতেন।
        তার  মাত্র কয়েক খণ্ড জমি ছিল। তার মধ্যে সাড়ে পাঁচ শতাংশ জমি বিদ্যালয়ের জন্য দান করেন। ছোট ফেনি নদীর ভাঙ্গনে যখন রংমালা এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার মুখোমুখি, তখন স্কুলটি রমিজ উদ্দিন হাজি বাড়ির দরজায় স্থানান্তরিত হয়। আজ অবধি তা সেখানেই আছে। শুধুমাত্র নামে কিছুটা হেরফের হয়ে হয়েছেঃরামপুর ফকিরের হাট রকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তবে আনন্দের বিষয় হচ্ছে এই যে, স্কুলের স্থানটি নদীতে ভাঙ্গেনি।   
       ফকির আহমেদ অমরত্ব চেয়েছিলেন। কাল প্রবাহে ফকির আহমেদকে সকলেই ভুলে গেছে।বিদ্যালয়ের নামের সাথে যুক্ত বজলের রহমান নামটিও মুছে ফেলা হয়েছে।তবুও তার তৃতীয় সন্তান মডেল স্কুল প্রায় শত বছর টিকে আছে। এই সমাজ, এই দেশ কখনো তালাশ করেনি, কে ভিক্ষার টাকায় সমাজ  পরিবর্তনের জন্য পণ করেছিলেন।নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়েছিলেন।তবুও তাকে স্মরণের আমাদের দায় নেই। আজ এই লেখার মধ্যদিয়ে দেশের অগণিত ফকির আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।3/6/18

                              ----- -----------------------------------
Researched by: Golam Kibria
    

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Printfriendly

Featured Post

জাতি নির্মাণে গল্পযোগ

  জাতি নির্মাণে গল্পযোগ   ১ ।   মানুষ সামাজিক জীব।তারা পরিবার গঠন করে।তারপর সে-ই পরিবার একটি গোষ্ঠীতে রুপান্তরিত হয় এবং ধীরে ধীরে একাধিক গোষ...