অষ্টম শ্রেণিতে বিকেন্দ্রীভূত মূল্যায়ন প্রসঙ্গে
বিশ্বের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য চাই গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ।এই লক্ষ্যেই বাংলাদেশ সরকার বহুবিদ পদক্ষেপ নিয়েছে।এই সবের সফলতা এবং ব্যর্থতা আছে কিন্তু সরকারের সদিচ্ছা সম্পর্কে ঐক্যমত আছে।এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশে ধীরে ধীরে শিক্ষা ব্যবস্থাপনা,প্রশাসন এবং মূল্যায়ন পদ্ধতিতে নানাবিধ পরিবর্তন আনা হয়েছে।শিক্ষার প্রতিটি
স্তরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনয়নের বিষয়ে প্রতিটি সরকার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে চেষ্টা
করছে।আমাদের আজকের প্রসঙ্গ হল:অষ্টম শ্রেণির চূড়ান্ত মূল্যায়নকে
ঘিরে।বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষণ ও মূল্যায়নে একটি স্থিতিশীল অবস্থা প্রতিষ্ঠিত
হয়েছে।বিশেষ করে পি এস সি পরীক্ষায় চূড়ান্ত মূল্যায়নে আলাদাভাবে স্কলারশিপের জন্য পরীক্ষা
নেয়া হচ্ছে না।
একসময়ে
পঞ্চম শ্রেণিতে বিদ্যালয় ভিত্তিক পরীক্ষা নেয়া হত ;আবার স্কলারশিপের
জন্য আলাদাভাবে একটি পরীক্ষা ব্যবস্থা নেয়া হত।বর্তমানে সার্বজনীন পরীক্ষা পদ্ধতির
মাধ্যমে বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।কিন্তু অষ্টম শ্রেণিতে চূড়ান্ত মূল্যায়নের জন্য শিক্ষা
বোর্ড়ের ছায়ায় আশ্রয় নেয়া হচ্ছে;অর্থাৎ কেন্দ্রীভূত করা হয়েছে।এটি
শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের অন্তরায়;এইক্ষেত্রে আমরা যে কারণগুলো
খুঁজে পাই,সেগুলো হল:
বোর্ডের সাথে সমন্বয় করতে গিয়ে
শিক্ষার্থীদের শিক্ষণ কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।প্রায় একমাস শিক্ষার্থীরা শ্রেণি কার্যক্রমের
বাইরে থাকে।পাঁচ বছরে দু'টো পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার
কারণে বিদ্যালয়গুলো অতিরিক্ত অফিসিয়াল কাজকর্মে অর্থ ও সময় ব্যয় করতে হয়। সাথে সাথে আর্থিকভাবেও
ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।বোর্ডের কার্যক্রম ডিজিটালাইজড করা হলেও শিক্ষার্থীদের
সমুদয় ডুকুমেন্টের হার্ডকপি সরাসরি জমা দেয়া আবশ্যিক।ফলে,অলিখিত নিয়মের ফাঁদে পড়ে প্রতিটি স্কুলকেই সুনির্দিষ্ট টাকা দিতে হয়;যদিও এর জন্য রশিদ দেয়া হয় না।এই ক্ষেত্রে প্রতিবাদ করাও অর্থহীন
;কারণ,এতে জমাকৃত ফাইল গায়েব হওয়ার সমুদয়
সম্ভাবনা থাকে।ছাত্র-ছাত্রীদের রেজিষ্ট্রেসন,ফিরম ফিল আপসহ
কার্যক্রমে শিক্ষার্থী পিছু উপরি ব্যয় করতে হয়। তবে আশার কথা এই যে বর্তমানে সৃজনশীল
মানসিকতাসম্পন্ন কর্মকর্তাগণ
শিক্ষাবোর্ডে নিয়োগপ্রাপ্ত হচ্ছেন;যারা ইতিবাচক পরিবর্তনে
সাহসী পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
অষ্টম শ্রেণিতে পাবলিক পরীক্ষা নেওয়ায় শিক্ষার্থীদের প্রায় দু'মাস সময় নষ্ট হচ্ছে।এই সময়টি তারা কিভাবে উপভোগ করবে তার জন্য কোন নির্দেশনা
নেই।
অষ্টম
শ্রেণিতে যদি পঞ্চম শ্রেণির মত উপজেলা ভিত্তিক মূল্যায়নের কৌশল বাস্তবায়ন করা যায় তা'হলে তা অধিকতর কল্যাণকর
হবে বলে আমি মনে করি।এই কার্যক্রমে প্রয়োজনে প্রাথমিক স্তরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো
যেতে পারে।তবে শিক্ষক সমাজের নৈতিক মূল্যবোধ
সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়া এর সাফল্যের অন্যতম পূর্বশর্ত। অবশ্যই বহু প্রাথমিক
বিদ্যালয় আছে যেগুলো ইতোমধ্যে অষ্টম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে।সাথে সাথে সেমিস্টার পদ্ধতির প্রচলন করা এখন সময়ের দাবি।এই বিষয়টি বিবেচনায় রাখা উচিত।
শিক্ষাবোর্ড চাইলে সার্টিফিকেট ও অন্যান্য কাগজপত্রের আইনানুগ অভিভাবক থাকতে
পারে।কিন্তু বাদবাকি কাজকর্ম উপজেলা পর্যায়ে সমাপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।আমরা
জানি, এইক্ষেত্রে কিছু কিছু ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।বিশেষ
করে, শিক্ষার্থী মূল্যায়নে সকল উপজেলায় বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক
প্রাপ্তিতে সংকট হতে পারে।তবে বর্তমানে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগে বাধ্যবাধকতা থাকায়
অচিরেই এই সংকট থেকে মুক্তি আসবে।
নিয়মে
আনয়নের জন্য আমরা একদিন উর্ধ্বগামী হিয়েছিলাম।আজ
উন্নয়নের জন্য বিকেন্দ্রীভূত
করা সময়ের দাবি।আশাকরি আমাদের সাথে শিক্ষাবিদগণ এবং সরকার একমত পোষণ করবেন এবং এই প্রস্তাবের
যৌক্তিকতা অনুধাবনে সমর্থ হবেন।শিক্ষা-উন্নয়ন এবং শিক্ষায় উন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষা পদ্ধতি এবং প্রশাসনের
পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করবেন।12/27/17