টাইলস ব্যবসায় ভোক্তা ঠকানোর কলা কৌশল
টাইলস ব্যবসায় ভোক্তা ঠকানোর কলা কৌশল
দেশে ভোক্তা অধিকার রক্ষায় আইন আছে,আইন প্রয়োগের জন্য সরকারি কর্মকর্তা আছে।কিন্তু এসকল কিছু থাকার পরেও ভোক্তা অধিকার কতোটুকু রক্ষিত হচ্ছে? এটা আমাদের জিজ্ঞাসা।এক্ষেত্রে কতিপয় সমস্যা পরিলক্ষিত দেখা যায়।প্রথমতঃ উপজেলা পর্যায়ে ভোক্তা অধিকার রক্ষায় দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ আসবার সুযোগ কম।দ্বিতীয়ত ভোক্তাগণ ঠকলেও এ-র প্রতিকার সম্পর্কে অবহিত নয়।তারা জানেনা কোথায়, কিভাবে অভিযোগ করতে হবে।এজন্য আমারা কিছু সুপারিশ করতে চাই।
ভোক্তাগণ কিভাবে,কোথায় ও কেনো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তা অনুসন্ধান করা উচিত।কিছু পন্য ভোক্তারা সারা জীবনে একবারই কিনে থাকে।এসকল পন্য ক্রয়ে ভোক্তা অধিকার সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত হচ্ছে।এগুলোর মধ্যে সর্বাগ্রে আছেঃ গৃহ নির্মাণ সামগ্রী। আমি গৃহ নির্মাণ সামগ্রীতে ব্যবহৃত বিলাসী পন্য হিসেবে স্বীকৃত টাইলস নিয়ে বলতে যাচ্ছি।এ-ই পন্যে ভোক্তারা প্রতিনিয়তই ঠকে যাচ্ছেন।অধিকাংশ টাইলস ক্রেতা বিক্রেতা কর্তৃক প্রতারিত হয়েছেন বলে মনে করে থাকেন এবং ঠকেছেন বুঝতে পারলেও তারা কেহ ভোক্তা অধিকার রক্ষায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দারস্থ হননা।অনেকেই লজ্জা বোধ করেন।অনেকে অফিস পর্যন্ত যাওয়ার উপায়ও জানেন না। ফলে অসাধু বিক্রেতাদের অপকর্ম চলমান আছে।এজন্য ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষের উচিত নিজ উদ্যোগে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা।আমি তাদের সদয় জ্ঞাতার্থে টাইলস বিক্রেতাদের অসাধুতার কতিপয় দিক ইঙ্গিত করছি।এটি মূলতঃ মাঠ পর্যায়ে সংঘটিত ঘটনা।
ক)অধিকাংশ টাইলস বিক্রেতাগণ তাদের মেমোতে সুনির্দিষ্ট টাইলসের মাপ, কোড ও কোম্পানির নাম উল্লেখ করেন না।টাইলস মিলি মিটার বা ফুটে বিক্রি করা হয়।এগুলো সব একই মাপের নয়।ফলে প্রতি কার্টনে রক্ষিত টাইলসের পরিমাণ ভিন্ন হতে পারে।বিক্রেতারা শুধুমাত্র কার্টন সংখ্যা ও টাকা উল্লেখ করে থাকেন।অনেক সময়ে শুধুমাত্র টাকার মান উল্লেখ করে থাকেন।
খ) বিক্রেতাগণ এক কোম্পানির পন্য দেখিয়ে অন্য কোম্পানির পন্য সরবরাহ করেন।তারা পন্যের কোম্পানির নাম ক্যাশ মেমোতে উল্লেখ করেন না।
গ) বিক্রেতাগণ টাইলস মেস্তরীদের সাথে আঁতাত করে টাইলসের হিসেবে গরমিল করেন।অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা টাইলসের হিসেবে বেশি দেখিয়ে থাকেন এবং টাইলস সরবরাহের সময় বেশি দেখানো টাইলস দোকানেই থেকে যায়। পরে টাকা ভাগাভাগি হয়।
ঘ)বিক্রেতারা কার্টন খুলে নিম্ন মানের পন্য পুনস্থাপন করেন এবং তা সরবরাহ করেন।অর্থাৎ এ গ্রেডের টাকা নিয়ে বি গ্রেডের পন্য/টাইলস হস্থান্তর করেন।একাজে নিয়োজিত শ্রমিকেরা বিষয়টি বিশেষভাবে অবগত। তাদেরকে গোপনে জিজ্ঞাসা করলে তারা সত্য প্রকাশ করবে।
ঙ) এতো কিছুর পরেও কিছু ব্যবসায়ী সততা রক্ষায় প্রতিশ্রুতবদ্ধ। তারাই এসকল অসাধুদের অনাচারের শিকার হচ্ছেন।তাদের ব্যবসা গুটিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এজন্য যথাযত কর্তৃপক্ষ বিদ্যমান অনাচার রোধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
ভোক্তাদের প্রতি পরামর্শঃ
টাইলসের সাইজ সম্পর্কে জানুন।বর্তমানে দেশে বিভিন্ন সাইজের , বিভিন্ন মান/ গ্রেডের টাইলস ক্রয় বিক্রয় হচ্ছে।
আমরা সাধারণ কাস্টমার প্রচলিত (8*12,10*16,12*20,16*16/20*20,12*18 ইত্যাদি)সাইজের যে কোন টাইলস ক্রয় করতে পারি। কিন্তু আমরা কি কখনো হিসাব করে দেখেছি বা দেখি, আপনার ক্রয়কৃত টাইলস কত বক্স/ কত পিচে সঠিক পরিমাণ হবে।
দালালের হাতে দায়িত্ব দিতে সতর্ক থাকুনঃ
আমরা বেশির ভাগ কাস্টমার এবিষয়ে অসচেতন।আপনি হিসেবের ভার খুচরা ব্যাবসায়ী কিংবা টাইলস মিস্তিরির হাতে তুলে দিয়েছেন। এই সুযোগে কিছু অসাধু খুচরা বিক্রেতা মূল্য পরিশোধের অনুকূলে প্রাপ্য ক্রয়কৃত পণ্য সঠিক মান( গ্রেড ) ও পরিমাণ সরবরাহ করছে না।সাধারণ কাস্টমারদের ঠকিয়ে কেউ কেউ তৃতীয় পক্ষ(দালাল)কে টাকা দিয়ে টাইলস বিক্রি করছে। এসব ব্যবসায়ী ক্রয় রশিদে ক্রয়কৃত পণ্যের সঠিক পরিমাণ ও মান গ্রেড উল্লেখ করছে না।এই দুষ্টু চক্রের ফাঁদে আমরা ক্রেতা সাধারণ প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এক্ষেত্রে টাইলস ক্রয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আপনার চাহিদা অনুযায়ী ক্রয়কৃত টাইলসের প্রতিটি আইটেমের ডিটেইলস মেমো তে উল্লেখ আছে কিনা দেখা উচিত। (যেমন : টাইলসের কোড, সাইজ, গ্রেড )এবং টাইলস ক্রয়ের অনুকূলে পণ্য সরবরাহের বিবরণ (যেমন: কত কার্টন ,কত পিচ ইত্যাদি )
ভোক্তা অধিকার রক্ষায় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সরজমিনে টাইলস বিক্রেতাদের দোকান পরিদর্শন করলে এ-র সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারবেন।তাঁরা বিক্রেতাদের ক্যাশ মেমো, চালান ইত্যাদি যাচাই করে দেখতে পারেন।
একজন ব্যক্তি সারা জীবনের স্বপ্ন নিয়ে গৃহ নির্মাণ করেন।টাইলস করেন।জীবনে একবার করা কাজ করতে গিয়ে বিক্রেতা কর্তৃক প্রতারিত হন।তাদের দীর্ঘশ্বাসের শব্দ আমাদের অনুধাবন করা উচিত।
২৯/০৭/২০২২
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন