আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০২২
আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস।একজন নারী,কখনো মা,কখনো মেয়ে,কখনো স্ত্রী, কখনো বন্ধু।নারীর অধিকার,সমাজে তাঁর অবস্থান,সমাজ বিনির্মানে তাঁর অবস্থান সামগ্রিক দিকের মূল্যায়ন এবং সেই মূল্যায়নের আলোকে নারীর অবস্থানকে সর্বোচ্চ স্বীকৃতি দেওয়ার মানসে এই দিনটি পালিত হয়।এই বছরের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছেঃGender equality today for a sustainable tomorrow" অর্থাৎ"টেকসই আগামীর জন্য, জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য" ।
একজন নারী প্রাকৃতিক সত্ত্বায় বিভূষিত মানব। তিনি মানব প্রজন্মের ধারক ও বাহক।নারী যখন মায়ের অবস্থানে থাকেন, তখন তিনি মানব শিশুর ধারক ও বাহকের ভূমিকা পালন করেন।যখন তিনি স্ত্রী হিসেবে থাকেন,তখনও তিনি বহন করেন,ধারন করেন।যখন তিনি বন্ধুর ভূমিকায় থাকেন,তখনও তিনি বহন করেন,ধারন করেন।কিন্তু এই বাহন যন্ত্রণার অনিবার্য উপাদান পুরুষ নামের জীবের অন্যায়ের শিকার হয়েছে; কারণ,তার লাঠির জোর আছে,তার হিংস্রতা আছে।মূলতঃ এই দিবসটি পালনের মধ্য দিয়ে নির্বোধ পুরুষদের সচেতন করা অন্যতম লক্ষ্য এবং নারীও যেনো তাঁর আপন শক্তিকে বুঝতে পারেন তাও অন্যতম উদ্দেশ্য।
সচেতন হতে চাইলে মানুষকে জানতে হয়।কিন্তু আমাদের জানার পরিধি খুবই সংকীর্ণ।বিশ্বের যাবতীয় জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে মুসলিম ধর্মীয় সম্প্রদায়ের কিতাব পত্রে নারীদের আইনগত অধিকার সর্বোচ্চ সংরক্ষিত ; যা আল্লাহ কর্তৃক প্রদত্ত।ফলে অপরিবর্তনীয়।ইসলাম ধর্মের কিছু সঘোষিত রক্ষকও এক্ষেত্রে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে যাচ্ছেন। অন্যদিকে, ইসলামের বিরুদ্ধবাদীরা সত্য না জেনে প্রায়ই অসত্য প্রচারে ব্রতী হয়ে থাকেন।ইসলাম নারীকে যতটুকু অধিকার দিয়েছে, তা চর্চিত হলেই ঝামেলার নিরসন ঘটবে।ইসলাম নারীকে সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সবদিকেই স্বাধীনতা দিয়েছে; তবে এর কাঠামোয় ভারসাম্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।
বিশ্ব নারী দিবসে আমি সর্বোচ্চ সন্মানের সাথে স্মরণ করছি, আমার প্রায়াত জননীকে; যিনি প্রায় বছর দুই পূর্বে বিগত হয়েছেন।একমাত্র মানুষ তিনি আমার সকল প্রকার কষ্টের ভার বহন করতে পারতেন,সকল গোপন কথা সংরক্ষণ করতে সক্ষম ছিলেন।তাঁর স্বর্গীয় দীপ্তিময় অবয়ব ছিলো তুলনাহীন। সুকণ্ঠের অধিকারী আমার মা বাড়ির গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে বিয়ের গীত গাইতেন।সুন্দর করে কুরআন আবৃত্তি করতেন।মৃত্যুর মাত্র কয়েকদিন আগে আমার ছোট ছেলেকে পাশে বসিয়ে কুরআন পাঠ শুনেছিলেন।তিনি তাঁর কুরআন পাঠের শুদ্ধতা যাচাই করতে চেয়েছিলেন।
আন্তর্জাতিক নারী দিবসে অন্য এক নারীকে শ্রদ্ধার্ঘ দিতে চাই; তিনি হচ্ছেন আমার সন্মানিত শাশুড়ী মা।তাঁর সংগ্রামী জীবন যে কারো জন্য অনুসরণীয়। তিনি মাতৃত্বের গুণে পরিপূর্ণ এক নারী।যিনি চিত্রাঙ্গদার মতো একই সাথে পুরুষ ও নারী।মাত্র ছাব্বিশ বছর বয়সে বিধবা হয়েছিলেন।কিন্তু দ্বিতীয়বার বিয়ের পিঁড়িতে বসেন নাই।চার সন্তানকে পড়া লেখা করানো, মানবিক গুণসম্পন্ন করার সংগ্রামে রত হন।সামাজিক শত প্রতিকূলতার মাঝেও তার চার সন্তানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী করানোর স্বপ্ন সফল হয়।এই ষাটোর্ধ মা বর্তমানে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়েন।তাঁর মাতৃত্বের ছায়ায় অনেক অসহায় নিরাপদ জীবনের সন্ধান পেয়েছে।অথচ আজ কর্মযজ্ঞে একজন এক স্থানে।তিনি নাতি বুকে নিয়ে একাকীত্ব জয় করছেন।আমি তাঁর দীর্ঘায়ুর জন্য করুণাময়ের কাছে প্রার্থনা করছি।
প্রতিটি পুরুষের সাফল্যের পেছনে এক বা একাধিক নারীর প্রভাব বিদ্যমান। অথচ এই অসীম শক্তির মূল্য মানুষ অনুভব করেনা।পুরুষ নারীকে দাবিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু ইতিহাস বলে, নারীকে দাবিয়ে রাখায় নারীই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।নারীর সুপ্ত শক্তি বিশ্বকে আলোকিত করুক ; এই প্রত্যাশা রইলো।
০৮/০৩/২০২২
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন