শুক্রবার, ১৯ আগস্ট, ২০২২
আশুরার তাৎপর্য
আড্ডার দিনগুলো---00
আশুরাঃ
আড্ডা মানেই গল্প করা;চিৎকার নয়।আড্ডা মানে কিছু প্রশ্ন, কিছু উত্তর। আড্ডা মানে অতৃপ্তির অপনোদন।এটা সময়কে উপভোগ করার উপায়,সময়কে ধরে রাখার কৌশল। প্রায় প্রতিদিন আমাদের আড্ডা জমে।আমরা সঠিক জানিনা কোন বিষয়টি আগামীদিনের আলোচনার বিষয় হবে।তবে,মাঝে মাঝে অনুমান করা যায়।গতকাল ছিলো আশুরা।ফলে আশুরার তাৎপর্য নিয়ে আমাদের মধ্যে উপস্থিত একজন জানতে চাইলো।যিনি জানতে চাইলেন, আমরা তাকে ১ম ব্যক্তি,যিনি উত্তর দিচ্ছেন তাকে আমরা ২য় ব্যক্তি এবং উপস্থিত অন্যজনকে ৩য় ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে রাখলাম।
২য় ব্যক্তি বলতে লাগলেন।আশুরা মূলত উদ্ যাপনের দিন,শুকরিয়া আদায়ের দিন।আল্লাহর রাসূল(সাঃ) এ-ই দিনকে উদযাপনই করেছেন।তিনি নিজে এ-ই দিন উপলক্ষে দু'দিন রোজা রেখেছেন।পবিত্র কুরআনে বর্ণিত মুসার নেতৃত্বে ইহুদীরা এ-ই দিন ফিরাউনের দাসত্ব থেকে মুক্তি পেয়েছিলো বলে মনে করা হয়।ইসরাইলী তথ্যসূত্র থেকে এটি জানা যায় এবং এ-র সপক্ষে সহীহ হাদিস রয়েছে।তবে অনেক ইসলামি পণ্ডিত ইহুদী, নাসারাদের তথ্যের সূত্র অনুসরণ করে এ-ই দিনের মহত্ব ও গুরুত্ব সম্পর্কে বলে থাকেন।
আশুরা মাল্টি কালচারাল ও মাল্টি-রিলিজিয়াস ধরনের উৎসব। এ-ই দিন ইহুদী, খ্রিস্টান ও ইসলাম এ-ই তিন ধর্মের মানুষ পালন করে থাকে।তবে মুসলমানদের মধ্যে এ-ই দিনকে উদযাপনের চেয়ে শোকের মাতমের মাধ্যমেই বেশি স্মরণ করা হয়।মুসলমানদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধ, সংঘাত ও যুদ্ধ এ-ই দিনকে শোক ও দুঃখের দিন হিসেবে উপস্থিত করেছে।হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসেন(রাঃ) ও তাঁর পরিবারের সত্তরজন মানুষ (নারী ও শিশু) এজিদ বাহিনীর হাতে শহীদ হয়েছিলেন। এজন্য, মুসলমানদের মধ্যে শিয়া সম্প্রদায় তাজিয়ার মাধ্যমে সর্বোচ্চ সহমর্মিতা ও শোক প্রকাশ করে,সূন্নী সম্প্রদায় মিল্লাদ মাহফিলের আয়োজন করে।কিন্তু আশুরার মূল শিক্ষা নিয়ে তেমন আলোচনা হয়না।
ইতিহাসের অংশ হিসেবে শুধুমাত্র মুসা(আঃ) ও ফিরাউনের কাহিনী ও শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করলে আশুরার আলোচনা পূর্ণতা পায়।কিন্তু আলোচকদের আলোচনায় কাহিনী থেকে শিক্ষা লাভের বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যায়।
মুসা(সাঃ) সাথে ফিরাউনের ক্ষমতার দ্বন্ধ ছিলো না।তার বিনীত নিবেদন ছিলোঃআল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী ফিরাউনকে সতর্ক করা।ইজরায়েলের দাসত্ব থেকে মুক্তি দেয়া, তাকে পবিত্র হওয়ার জন্য নম্রভাবে বলা,সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর প্রতি আনুগত্য স্বীকার করা।মুসা ফিরাউনের রাজত্বের অংশীদার হতে চায়নি।এ-ই সেই ফিরাউন যার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বহু বর্ণনা আছে।এখন প্রশ্ন হচ্ছে,আশুরার আলোচনায় আমাদের আলোচনায় আসা উচিত আমরা কোন ব্যক্তির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করছি; মুসা না ফিরাউন?
ফিরাউন সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ৭৫ স্থানে উল্লেখ আছে।ফিরাউন বনী ইজরাইলদের ছেলেদেরকে হত্যা করতো,তাদেরকে কঠিন কষ্ট দিতো,নারীদেরকে বাঁচিয়ে রাখতো ; তাদেরকে ভয়ানক নির্যাতন করতো।সে নিজেকে যোগ্যতম ও একমাত্র শাসক হওয়ার অধিকারী হিসেবে মনে করতো।সে ছিলো খুবই অহংকারী।শাসক নামে সে ছিলো একজন জালিম।সে মিসর বাসীকে সকল প্রকার মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছিলো। এখন আমাদের মধ্যেও ফিরাউনী বৈশিষ্ট্য সুস্পষ্টভাবে বিদ্যমান। এমন যদি হয়,তাহলে আমরা কিভাবে মানবিক সমাজ নির্মান করতে সমর্থ হবো? মানবিক সমাজ নির্মান করতে হলে মুসার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করা ছাড়া উপায় নেই।
আশুরার শিক্ষা হচ্ছে এ-ই যে,আমরা মুসার কর্মপন্থা অনুসরণ করতে হবে।ন্যায়যুদ্ধে শহীদ হওয়া হজরত হোসাইন(রাঃ) -এর পথই অনুসরণ করতে হবে।শোককে শক্তিতে রুপান্তরের জন্য এ-ই দুজনের বৈশিষ্ট্য অর্জন করা আবশ্যক।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
Printfriendly
Featured Post
জাতি নির্মাণে গল্পযোগ
জাতি নির্মাণে গল্পযোগ ১ । মানুষ সামাজিক জীব।তারা পরিবার গঠন করে।তারপর সে-ই পরিবার একটি গোষ্ঠীতে রুপান্তরিত হয় এবং ধীরে ধীরে একাধিক গোষ...
-
বাংলায় আন্ত : ধর্মীয় সম্পর্কের স্বরূপ বাংলায় আন্ত : ধর্মীয় সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে সম্ভাবনাম...
-
মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাহুগ্রাস মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিশু ও কিশোরদের পাঠদান করা হয়।এক সময় আমরাও বিদ্যালয়ে ছিলাম, স্যারদের কাছাকাছি ছিলা...
-
প্রধান শিক্ষকের আত্মকথা: মোবাইল সমাচার ও অন্যান্য কিছুদিন পূর্বে দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের বললাম,তোমরা আমাকে বলতো দেখি, তোমাদের ...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন