শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

কর্মজীবী দম্পতির সন্তানদের ভবিষ্যৎ

কর্মজীবী দম্পতির সন্তানদের ভবিষ্যৎ


বাংলাদেশের বর্তমানে কর্মজীবী দম্পতির সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে এই রকম দম্পতির সন্তানদের অবস্থা কী, তারা কেমন আছে তা নিয়ে কোন নির্ভরযোগ্য গবেষণা নেইভাসা ভাসা তথ্যের উপর ভিত্তি করে মাঝেমধ্যে পত্র পত্রিকায় কর্মজীবী সন্তান এবং তাদের  নিয়ে লেখা হয়আসলে এদের   সত্যিকার  অবস্থা চোখের আড়ালে রয়ে গেছে
বাংলাদেশে কর্মজীবী দম্পতির সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে সমান তালে সামাজিক সুরক্ষা বৃদ্ধি পায়নিআমরা যদি এদিকে ভাল করে দৃষ্টি দেই তাহলে দেখাবো যে অধিকাংশ চাকুরীজীবী দম্পতি একক পরিবারে বসবাস করেনহয়তো বাস করতে বাধ্য হনএরা বেশকিছু অনতিক্রম্য সমস্যার মুখোমুখি হনএখন আমি সেই সকল সমস্যাবলী উল্লেখ করছি
প্রথমত এই রকম দম্পতি সন্তান নিতে আগ্রহী হননাঅনেকে বিয়ের কয়েক বছর পরে সন্তান নিতে মনস্ত করেনএইক্ষেত্রে অনেকে সমস্যার মুখোমুখি হনঅনেকে দীর্ঘদিন পরেও সন্তানের মুখ দেখেনিফলে অনেক সম্পর্ক বিচ্ছেদে গড়িয়েছে
দ্বিতীয়ত চাকুরীজীবী দম্পতি সন্তানের জম্মের পরে লালন পালন নিয়ে সংকটে পড়েনচাকুরীজীবী মা ছয়মাসের ছুটি পেয়ে থাকেনছুটি শেষে  শিশুকে দেখাশুনার ভার কাকে দিবেন তা ভেবে দিশেহারা হয়ে পড়েনবাংলাদেশের সরকারি অথবা বেসরকারি কোন পর্যায়েই শিশু প্রতিপালনের সুব্যবস্থা নেইএমন অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে মায়েদের সাথে শিশুদের    নেওয়ার অনুমতি নেইএইক্ষেত্রে কিন্ডারগার্টেনগুলো অগ্রগামী অধিকাংশ কিন্ডারগার্টেনে শিশুসন্তানদের নেয়া নিষিদ্ধযদিও এইসকল প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেশিরভাগ নারী  
এদের অনেকে বাসায় কাজের বুয়া বা নিকটাত্মীয় কারো কাছে বাচ্ছাদের রেখে আসেনকিন্তু এদের দ্বারা শিশুরা নির্গহের শিকার হয়অন্যদিকে  এদের আচরণে  অধিকাংশ শিশুর মানসিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়
শিশুর পরিশ্রান্ত মা কর্মক্ষেত্র থেকে ফিরে এসে  শিশুকে যত্ন করার চেষ্টা করেনতখন মনের জোর থাকলেও দেহে জোর থাকেনা গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করা বহু মহিলা তাদের শিশুদের  ঘরের বাইরে রেখে কাজ রত হয়ে থাকেনএই সমস্ত বহু সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা পেয়ে থাকিউভয় ক্ষেত্রে শিশুরা অরক্ষিত অবস্থায় বেড়ে উঠছে বর্তমানে  কর্মজীবী দম্পতির শিশু সন্তানেরা নিকটাত্মীয়, প্রতিবেশি বা তত্ত্বাবধায়ক দ্বারা ভয়াবহভাবে যৌন নির্গহের শিকার হচ্ছেযেসব ক্ষেত্রে শিশুরা মারা যাচ্ছে শুধুমাত্র সেই খবরগুলোই আমাদের সামনে আসছে মা বাবা দীর্ঘসময় কর্মক্ষেত্রে থাকায় শিশুদের সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বহু উচ্চশিক্ষিত কর্মজীবির   সন্তান বিপথগামী হচ্ছেবর্তমানে জঙ্গি হিসেবে যারা প্রযুক্তিগত কাজে সহায়তা দিতে এগিয়ে এসেছে তাদের প্রায় সকলেই উচ্ছশিক্ষিত কর্মজীবী দম্পতির সন্তান
অনেক উচ্চ পদমর্যাদার সরকারি কর্মকর্তা দম্পতির সন্তান  কোনমতে  উচ্চমাধ্যমিক সমাপ্ত করে পড়াশুনার পাঠ চুকিয়ে দেয়অন্যদিকে অযোগ্যা হিসেবে বেড়ে উঠা   পরবর্তী প্রজম্মের জন্য   এইপ্রকার দম্পতির কোনপ্রকার কষ্ট বা হতাশা আছে বলে মনে হয়নামূলতঃ নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতার শ্লোগান এক পৌরষহীন প্রজম্মের জম্ম দিচ্ছেআসলে নীতি নির্ধারকদের অদূরদর্শী চিন্তার যুক্তিহীন সিদ্ধান্তের ফল জাতিকে বহন করতে হবেমানব প্রজম্মের সবচেয়ে সেরা অর্জন সন্তান এরাই রাষ্ট্রিক সিদ্ধান্তে  অরক্ষিত আর অযত্নে বড় হচ্ছে
বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার অভিপ্রায়ে দ্রুত পায়ে অগ্রসর হচ্ছেযে কারণে, স্বামী-স্ত্রী উভয়কে ঘরের বাইরের কাজে যুক্ত হওয়ার জন্য উৎসাহ এবং সুযোগ দেয়া হচ্ছেকিন্তু নীতি নির্ধারকগণ কী ভেবেছেন শিশুর শৈশবকাল নিরাপধে বেড়ে উঠে মায়ের দয়াদ্র তত্বাবধানেহ্যাঁ,দম্পতি চাকুরীরত থেকেও তাদের সন্তানদের বড় করার সুযোগ পেতেন;যদিনা শিশুর জন্য রাষ্ট্রিয় সুরক্ষা থাকতবিশেষ  করে যদি  দেশের সর্বত্র মানসম্পন্ন     শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র এবং বিদ্যালয় থাকতদম্পতি তাদের কর্মসময় শেষ করে শিশুকে নিয়ে ঘরে ফিরত
চাকুরীজীবী দম্পতি কর্মক্ষেত্রে উপস্থিত থাকার সাথে সাথে যৌক্তিকভাবে অনাগত শিশুর বেড়ে উঠার বিষয়টি ভাবা দরকার
বাংলাদেশের খ্যাতিমান সঙ্গীত শিল্পী কাদেরী কিবরিয়া তার বাল্য ও কৈশোরের স্মৃতি কুড়াতে গিয়ে তাঁর মাতাপিতার সাথে প্রিয় কোন স্মৃতি খুঁজে পাননি। তাদের বাসার কাজের লোকটিই ছিল তার প্রিয় ব্যক্তি তার ভালমন্দ সুখ দুঃখ সবকিছুতেই জড়িয়ে ছিল বুড়ো চাকরটি
তৃতীয়তঃকর্মজীবী দম্পতি অধিকাংশ ক্ষেত্রে একাধিক সন্তান নিতে অনাগ্রহী এই অনাগ্রহ আগামীদিনের জন্য অশনি সংকেত কারণ,এমন অবস্থা বজায় থাকলে আমরা শিক্ষিত দম্পতির অযোগ্য উত্তরসূরি পাব;যা কোনভাবে গ্রহণযোগ্য নয়
প্রকৃতি  মাতা-পিতা উভয়কে জীবিকার সন্ধানে যাবার জন্য নিরুৎসাহিত করেছেএই জন্য আমরা দেখি,বহু পশু পাখি তাদের শাবককে মা -বাবা একজনের তত্ত্বাবধানে রেখে অন্যজন খাবারের সন্ধানে যায়
চতুর্থতঃ দম্পতি উভয়ে চাকুরীজীবী হলে কেউ কারো জন্য নয়অধিকাংশ চাকুরীজীবী নারী সংসারে মায়ের ভূমিকা পালনে অসমর্থ হয়ফলে তাদের   সন্তানদের অধিকাংশ বিপথে যায়আমার কাছে সুনির্দিষ্ট জরীপ নেই কিন্তু আমি আমার চারপাশের পাঁচটি দম্পতিকে চিনি যাদের অবস্থা বিবেচনায় আনা যায় এরা সকলে  নিজেদের  ক্যারিয়ার কথা ভেবেছেনএদের  সন্তানেরা জীবনের কোন না কোন দিকে মারাত্মকভাবে অপূর্ণ থেকে যাচ্ছেএদের পরষ্পরের মধ্যে গলাগলির চেয়ে 'গালাগালিই বেশি দেখা যায়অনেকে দায়ে পড়ে কাছাকাছি আছে-যাকে সংসার বলা অসংগত এই সকল দম্পতির জীবনে অল্পবিস্তর দেহের বিস্তার ঘটলেও মনের বিস্তার ঘটেনা
পঞ্চমতঃ   পরিবারের কর্মজীবী সদস্য একক পরিবারে রিপান্তুরিত হলে   অপরাপর নির্ভরশীল সদস্য অনিবার্যভাবে অসহায় অবস্থায় নিপতিত হয়কারণ,বাংলাদেশে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়বিশেষ করে বিধবা,বিপত্নীকেরা অসহনীয় দূর্ভোগে পড়েন
ষষ্ঠতঃঐতিহ্যগতভাবে উপমহাদেশের জনসমষ্টিতে দম্পতি চাকুরী করার বিষয়টি নবতর সংযোজন প্রাচ্যের প্রভাবে আমরা সহজে এটিকে আপন করে নিয়েছিকিন্তু এর ক্ষতিকর দিকগুলো অপনোদনের চেষ্টা করা হয়নি
                                      এই থেকে মুক্তির উপায়:
শিক্ষিত দম্পতি হলেও মাত্র একজন বিধিমত চাকুরীতে যোগদান করা উচিতবাকি একজন বাসায় সন্তানকে দেখাশুনা করবেন কিন্তু   বেতনের চেক থাকবে বাসার দায়িত্বপ্রাপ্তের হাতেতিনি যৌক্তিকভাবে বেতনের টাকা ব্যবহার করবেন
যিনি বাড়িতে থাকবেন তিনি সম্ভব হলে অতিরিক্ত আয়ের চেষ্টা করতে পারেন;যা তাদের যৌথ একাউন্টে জমা হবেঅবসরে দুজন সাংসারিক কর্মে প্রবৃত্ত হবেন
প্রতিটি মা যারা বাসা বাড়িতে থেকে সন্তান দেখাশুনা করেন তাদের জন্য যথাযত ভাতার ব্যবস্থা করা উচিতঅর্থাৎ মায়েদের জন্য অর্থনৈতিক স্বাধীনতার বিষয়টি রাষ্ট্রকে ভাবতে হবেতাহলে তারা চাকুরীমূখী মানসিকতা ত্যাগ করবেন

কর্মজীবী দম্পতি  যদি তাদের সমৃদ্ধ উত্তরসূরি প্রত্যাশা করে তাহলে তাদেরকে অবশ্যই যৌক্তিক উপায়ে এগুতে হবেসরকারকেও সমাজবিজ্ঞানীদের পরামর্শ মোতাবেক এগুতে হবেতা না হলে এই অসম অবস্থা জাতিকে ধ্বংস করে দিবে




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Printfriendly

Featured Post

জাতি নির্মাণে গল্পযোগ

  জাতি নির্মাণে গল্পযোগ   ১ ।   মানুষ সামাজিক জীব।তারা পরিবার গঠন করে।তারপর সে-ই পরিবার একটি গোষ্ঠীতে রুপান্তরিত হয় এবং ধীরে ধীরে একাধিক গোষ...