প্রবাসীদের কল্যাণে কিছু
প্রস্তাবনা
রেমিটেন্স প্রবাহের উত্থান-পতন বাংলাদেশের
অর্থনৈতিক গতিশীলতার জন্য সবচেয়ে গুরুত্ত্বপূর্ণ একটি বিষয়।যারা রেমিটেন্স প্ররণ
করেন তাদের অবস্থা কী?তারা কেমন আছেন ?যারা ইতিমধ্যে প্রবাস জীবনের সমাপ্তি
ঘটিয়ে দেশে এসেছেন তারা কেমন আছেন ?এসব নিয়ে বিশ্বস্ত
গবেষণা আছে কী না তা আমার অজানা।তবে সাধারণ জনগোষ্ঠীর সাথে আত্মিক যোগাযোগ আছে বলে
কিছু কিছু জানি ।
বাংলাদেশি মানুষের মধ্যে বিশ্বজনীনতা সবসময় ছিল।ফলে সুদূর অতীতেও তারা সমুদ্র পার হয়ে দেশ দেশান্তরে গিয়েছে।সেই কারণে একদিন বাংলার জাহাজ বা নৌশিল্প বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছিল।
এই বিশ্বজনীন বোধ বাঙালি যুবকদের মনকে আন্দোলিত করেছে এবং তারা ঘরছেড়ে বাইরে গিয়েছে।অতীতে মুক্ত বিশ্বে তারা যেখানে গিয়েছ সেখানে অনেকে ঘর বেধেছে।কিনু বর্তমান সময় ভিন্ন।তাদের অধিকাংশই তাদের দ্বৈতরথের চাকা খুলেই বাইরে যায়;ফলে দুর্বহ কষ্ট নিয়ে বিত্তের তালাশে চিত্তকে খান খান করতে বাধ্য হয়।
অন্যদিকে বহু যুবক দুর্বৃত্তের ফাঁদে মৃত্যুর মুখে পড়ে ,কেউ মারা যায়, কেউ সর্বস্ব হারিয়ে দেশ ফিরে আসে।কিন্তু আজকের লেখার বিষয় মূলত তা নয়।যারা জীবনের স্বর্ণসময় প্রবাসে কাটিয়ে বার্ধক্যে দেশে আসে,আসে পুরোনো ঠিকানায়-লেখাটি তাদের নিয়ে।
সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের বিস্তার এখনো এদেশে সর্বত্র বিস্তারিত হয়নি।এক্ষত্রে প্রবাসী ব্যক্তিবর্গের অবস্থা সবচেয়ে ঝুকিপূর্ন।বিদেশফেরত বহুলোক আছেন যারা বার্ধক্যে অনতিক্রম্য দূরাবস্থার মাঝে পতিত হন।দেশের বাড়িতে পরিবার পরিজনের ভরণ-পোষণ করতে করতে একসময় এইসকল মানুষের প্রবাস জীবনের ইতি ঘটে।অনেকের হাতে নগদ বা ব্যাংকে কোন অর্থ জমা থাকেনা ।দেশের উন্নয়নে যারা গায়ের ঘাম ঝরিয়েছেন,যৌবনে উত্তাল সময় স্ত্রী-সন্তান,স্বজনদের থেকে বিচ্ছিন্ন থেকেছেন,তাদের নিয়ে আমরা কী কিছু কল্যাণকর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছি?
এখন তাদের নিয়ে ভাবনার সময় এসেছে।দেশ যাদের ত্যাগের দানে উন্নত বিশ্বের কাতারে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে,তারা আজও অবহেলিত।কিন্তু চালকের আসনে বসা ব্যক্তিবর্গ ঠিকই নিজেদের আখের ঘুছানোয় ব্যাস্ত।এমতাবস্থায় প্রবাসীদের কল্যাণে কিছু প্রস্তাব পেশ করছি।এসব প্রস্তাব বাস্তবায়ন করলে সরকার ও রাষ্টের কল্যাণ হবে।
১।প্রবাসিদের প্রেরিত অর্থের ১০% তাদের ভবিষ্যত নিরাপত্তার জন্য বাধ্যতামূলকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।তারা যখন প্রবাসজীবনের ইতি ঘটাবেন তখন বিধি অনুযায়ী(লাভ সহ) তা প্রদান করা হবে।প্রয়োজনে জমাকৃত অর্থ পেনশন হিসেবে প্রদান করা যেতে পারে।এইক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক চালকের ভূমিকা পালন করতে পারে।
২।বিদেশফেরত বৃদ্ধ প্রবাসিদের সামাজিকভাবে সম্মানিত করতে হবে ।রাষ্ট্রকে এর দায়িত্ব নিতে হবে।
৩।বিদেশফেরত প্রবাসিদের বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য বিশেষ কার্ড়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
৪।প্রবাসি অনেক পরিবার দেশে বিভিন্ন হয়রানি ,চাঁদাবাজির শিকার হন;তা থেকে মুক্তির জন্য প্রশাসনের বিশেষ শাখা খোলা উচিত।
৫।এদেশিয় রেজিশট্রেশনভুক্ত কোন আদমব্যবসায়ী কর্তৃক কেউ প্রতারিত হলে ঐসব প্রতিষ্ঠান থেকে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে।নতুবা সরকার নিজেই ক্ষতিপূরণ দিবেন।
৬।প্রবাসিদের স্ত্রী, যারা স্বামী-সঙ্গত্যাগ করে সন্তান-সন্ততি লালন পালন করছেন- তাদের কল্যাণেও সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।এক্ষেত্রে স্বামীর প্রেরিত অর্থের অন্তত ৬% টাকা তাদের অনুকূলে কল্যাণ ভাতা হিসেবে জমা করতে হবে।
.৭।প্রবাসিদের মধ্যে যারা বিদেশে বিপদগ্রস্থ আছেন সরকার তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
৮।সরকারি অফিসের ঘুষখোর কর্তাদের হয়রানি থেকে মুক্তির পদক্ষেপ নিতে হবে।
সর্বোপরি,প্রবাসিদের জন্য বাস্তবায়নযোগ্য যুগপোযোগি নীতিমালা প্রনয়ণ করতে হবে।
সরকার যদি প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করেন,প্রবাসিদের আয়ের সমুদয় অর্থ বৈধ চ্যানেলে
দেশে আসবে;এটি নিশ্চিত।দেশও
হুন্ডির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্তি পাবে।আসুন আমরা আমাদের ত্যাগি আর দয়াদ্র
মানুষদের প্রতি নজর দিই এবং জনমত গড়ে তুলি।আমরা তাদের কাছে ঋনি;এটি সবাই স্বীকার করি এবং উপরোক্ত
সুপারিশমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে ঋণ শোধের পদক্ষেপ নিই। আমরা প্রত্যাশা করি
সরকার এই বিষয়ে যৌক্তিক পদক্ষেপ নিবে।
------
------
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন