শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৯

বাহান্ন থেকে একাত্তর

বাহান্ন থেকে একাত্তর

জয় বাংলা।
 মান্যবর সভাপতি, উপস্থিত সুধিজন। আচ্ছালামুয়ালাইকুম। 
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত একটি উক্তি আছে এটা দিয়েই আমার কথা শুরু করতে চাই। তিনি বলেছেন, আনন্দের জন্য পড় আইভান হো আর জ্ঞানের জন্য পড় ইতিহাস। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় বিশেষভাবে ইতিহাসকেই আশ্রয় করে। বিষয়ঃবাহান্ন থেকে একাত্তর। 
  বর্তমানে ৫২ শুধুমাত্র একটা সংখ্যা বা ইংরেজি বছরের নির্দেশক নয়। পুরো বিশ্ববাসী ৫২-এর একুশে ফেব্রুয়ারিকে বিশেষ মর্যাদার সাথে পালন করে আসছে। ফলে বাঙালির ইতিহাস আজ একই সাথে বাঙালির এবং বিশ্বের। আবার ৭১ -এর সাতই মার্চও আজ বিশ্ববাসীর মুক্তির সনদ হিসেবে নন্দিত।ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ।      আমাদের আলোচ্য সময়ের বিস্তার প্রায় দুই দশক। কিন্তু এই সময়ই বাঙালির আত্মপরিচয়ের ভীত মজবুত ভিত্তির উপরে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। এই সময়ে একদিকে যেমন  বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক  দিকে পরিবর্তন ঘটেছে, তেমনি অন্যদিকে আন্তঃধর্মীয় সম্পর্কের ইতিবাচক পরিবর্তন অনিবার্য হয়ে উঠেছে।
বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ বাঙালির স্বরুপ এই সময়েই প্রকাশ পায় ;যার ফল হিসেবে রাজনৈতিক সত্ত্বা হিসেবে বাঙালির বিস্পোরিত রুপ দৃশ্যমান হয়। এই বিষ্পোরণের নায়ক হিসেবে যাঁর আবির্ভাব ঘটে, তিনি হলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি পঞ্চাশের দশকের পূর্ব-পাকিস্থানের রাজনৈতিক পরিবেশের গুণগত পরিবর্তন আনতে সক্ষম হন।
   সুপ্রিয় উপস্থিতি, আপনারা সম্ভবত জানেন, ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্থানে      যুক্তফ্রন্ট জয়ী হলেও  সরকার গঠন করতে ব্যর্থ হয়। যার ফলস্রুতিতে  জাতীয় পরিষদ ভেঙ্গে দেয়া হয় এবং স্বৈরশাসক আয়ুব খান ক্ষমতা দখল করে।      এর পেছনে একদিকে যেমন ছিল পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্র অন্যদিকে ছিল পূর্ব পাকিস্থানের রাজনীতিবিদদের দূরদর্শিতার অভাব।  এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু ছিলেন ব্যতিক্রম। তিনি দ্রুততম সময়ে    বাঙালিদের একত্রিত করেছেন স্বাধীনতার মন্ত্রে। ঐতিহাসিক ছয় দফা ছিল স্বাধীনতার পথ নির্দেশক। তিনি অর্থনৈতিক  স্বাধীনতা , ধর্মীয় স্বাধীনতা , সামাজিক ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত মুক্তির জন্য রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে পূর্বশর্ত বলে বিবেচনা করতেন। তাই তিনি সুস্পষ্টভাবে স্বাধীনতার ডাক দেন। এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম।   
তিনি বাঙালি জনসমষ্টিকে যথার্থ আত্মপরিচয়ের উপলব্দিতে উজ্জীবিত করেছেন। তার উপলব্দি সাহিত্য, সৃংস্কৃতি, অর্থনীতি সকল ক্ষেত্রে বিস্তারিত ছিল। ফলে বাঙালি জাতি  এই সার্বজনীন বোধে নিজেদের আবিষ্কার করে যে, তারা বিভিন্ন ধর্ম আর  বর্ণের হলেও তারা  একই জাতীয় চেতনা ধারণ করে।এই জাতীয় চেতনা-ই অনিবার্যভাবে বাঙালি জাতিকে মুক্তির সংগ্রামে অস্রহাতে লড়াই করতে প্রেরণা যোগায়।
 বাঙালি জাতির মহৎ অর্জনের যা কিছু আছে তার অধিকাংশই এই সময়ে দৃশ্যমান হয়। এই সময়কালেই আমরা শেখ মুজিবুর রহমানকে পেয়েছি বঙ্গবন্ধু হিসেবে, বাংলাদেশ নামটি পেয়েছি-যে নামটি রেখেছেন বঙ্গবন্ধু, জয় বাংলাকে পেয়েছি জাতীয় স্লোগান হিসেবে,   জাতির জন্য পেয়েছি লাল সবুজের পতাকা আর স্বাধীন সার্বভৌম ভূখণ্ড।
         আবার এই ভূখণ্ডের মুনাফিক বেঈমান আর দেশদ্রোহীদের নিলর্জ্জ প্রকাশও এই সময়েই ঘটে। অধার্মিক শাসকদের ধর্মের আভরণে শোষক হিসেবে এই সময়েই আবির্ভাব ঘটে এবং এই দেশীয় সেবাদাস সম্প্রদায় তাদের সহযোগী হয়। এরাই মুসলিম লীগের ছত্রছায়ায় শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক সাহেবকে গৃহে অন্তরীণ রাখে, গণতন্ত্রের মানসপুত্র শাহেদ সোহরাওয়ার্দীকে বৈরুতে গোপনে হত্যা করে। স্বাধীনতাকামী বাঙালিদের জেল জুলুম নির্যাতন করে। লক্ষ লক্ষ বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করে। 
 এরাই পূর্ব পাকিস্থানের টাকা দিয়ে ইসলামাবাদ নামে নতুন শহরের পত্তন করে।অন্যদিক,   ঢাকা শহর অবহেলিত থাকে। এই সময়েই বাংলার চাকুরির আকাল পড়েছিল। আমি ব্যক্তিগত অনুসন্ধানে জেনেছি যে, পাকিস্থান শাসনামলে  পূর্ব-পাকিস্থানে এন্ট্রাস পরীক্ষায়  ফেল করতো ৮৫ % বেশি আর ডিগ্রি পর্যায়ে ফেলের হার হতো ৯৫% বেশি। অথচ পশ্চিম পাকিস্থানে পাশের হার ছিল ৮০ - ৯০ %। এর কারণ ছিলঃচাকুরীর জন্য পূর্বপাকিস্থানের যুবকদের অযোগ্য করে রাখা।           
 ভূ-রাজনৈতিক দিকে বাঙালির স্বাধীন সত্তার প্রকাশ একাত্তরেই ঘটে। ৫২-তে যে বীজমন্ত্র রোপিত হয়েছিল, একাত্তরে তার পূর্ণতা পায়।
 যাঁরা বাঙালির পরিবর্তনের পথে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের সকলকে আমি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। তমুদ্ধুন মজলিসের দাবির পথ ধরে অগ্রসরমান ভাষা আন্দোলনের শহীদ বীরগণ, ভাষা সংগ্রামী সাহসী সকল মানব সন্তান, যাঁদের নাম আমরা ইতিহাসে পাঠে জানি ; এখানে শিল্পী ছিলেন, সাহিত্যিক ছিলেন, সাংবাদিক ছিলেন, রাজনীতিবিদ ছিলেন, ছাত্রসমাজ ছিলো সকল শ্রেণি পেশার মানুষ একাত্তরে একই কাতারে এসে সমবেত হয়। সকলে মুক্তিকামী - মুক্তিযোদ্ধা। কেউ ছিলেন সসস্র, কেউ ছিলেন নিরস্র।               
যে মহানায়কের ডাক বাঙালিকে জাগিয়েছিল, তিনি আজ সারা বিশ্বের।জাতিসংঘের ১৯৫ টি দেশে একযোগে মুজিব বর্ষ পালনের সদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সুতরাং আমরা বলতে পারিঃবাঙালির পথ আজ সারা  পৃথিবীর পথ। শুধুমাত্র ঘুষখোর, চাঁদাবাজ আর দুর্নীতিবাজমুক্ত হলেই জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার দেশ সত্যিকারভাবে দৃশ্যমান হবে। আমি সেদিনের প্রতীক্ষা করছি এবং আশা করছি জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব আমাদের সোনালী সময় উপহার দিবে। সময় কম। এখানে শেষ করছি।
মুক্তিযুদ্ধের বিজয় উৎসব আয়োজকদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। বিশেষকরে অনুষ্ঠানের আহবায়ক জননেতা জনাব  আবদুল কাদের মির্জাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, ধন্যবাদ জানাচ্ছি প্রিয় রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব জনাব শহীদ উদ্দিন বাবুল ভাইকে, অনুষ্ঠান পরিচালনা কমিটির আহবায়ক তরুণ নেতৃত্ব, কবিতা-গান আর নৃত্যের সব্যসাচী যুবক শওকত আজিম  জাবেদকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।           
সকলেই ভালো থাকুন। জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।                   
         

 
           

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Printfriendly

Featured Post

জাতি নির্মাণে গল্পযোগ

  জাতি নির্মাণে গল্পযোগ   ১ ।   মানুষ সামাজিক জীব।তারা পরিবার গঠন করে।তারপর সে-ই পরিবার একটি গোষ্ঠীতে রুপান্তরিত হয় এবং ধীরে ধীরে একাধিক গোষ...